× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

সাক্ষাৎকার

যন্ত্র নির্ভরতা কমালেই সংস্কৃতির দিকে মনোযোগ বাড়বে

কামরুল হাসান

প্রকাশ : ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৭:১৫ পিএম

আপডেট : ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৭:১৬ পিএম

যন্ত্র নির্ভরতা কমালেই সংস্কৃতির দিকে মনোযোগ বাড়বে

‘নাট্যে খুঁজি জীবনের মানে মিলেছি আজ নব যুগের সন্ধানে’ শীর্ষক স্লোগান সামনে নিয়ে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে সপ্তম বার্ষিক নাট্য সপ্তাহ। ১৪-২০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অনুষ্ঠিত সপ্তাহব্যাপী এই নাট্যোৎসবের উদ্বোধক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জনপ্রিয় অভিনেত্রী আফসানা মিমি। উদ্বোধন শেষে জনপ্রিয় এই অভিনেত্রী প্রতিদিনের বাংলাদেশের মুখোমুখি হন। লিখেছেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি কামরুল হাসান


অনেক দিন পর এই ক্যাম্পাসে এলেন। কেমন লাগছে?

নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে এটি আমার তৃতীয় আগমন। এর আগে একবার এসেছিলাম ইউএসএআইডি’র একটা কাজে। আরেকবার শুটিংয়ের কাজে এসেছিলাম। এই ক্যাম্পাসের সর্বত্র শুটিং করেছিলাম। কলাভবনে, নাট্যকলার অডিটোরিয়ামে, পুকুরের ঘাটে, লাইব্রেরিতে, নজরুল ভাস্কর্যে, অগ্নিবীণা হলে-সর্বত্র। তখন খুব ভালো একটা সময় কাটিয়েছিলাম। কারণ নাট্যকলা বিভাগের শিক্ষার্থীরাই সেখানে অংশ নিয়েছিলেন। এবার এসে ওদের খুঁজছিলাম, কিন্তু ওরা ক্যাম্পাস থেকে বেরিয়ে গেছে। ওই কাজটা অনেক সমাদৃত হয়েছিল। ভেবেছিলাম এখানে প্রজেক্টরে ওটার একটা শো দেখাব। কিন্তু করোনা শুরু হয়ে যাওয়ায় আর সেটা সম্ভব হয়নি। তিন বছর পরে আজ আসলাম। খুব ভালো লাগছে। বিশেষ করে একটি চমৎকার নাট্যোৎসবের জন্য আসতে পেরে আরও বেশি ভালো লাগছে।

অভিনয়ে আসতে হলে মঞ্চনাটক করে আসা জরুরি মনে করেন কি? 

আমি মনে করি মঞ্চের ব্যাকগ্রাউন্ড থাকাটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ আমরা যখন নাটকে এসেছিলাম তখন সেভাবে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে নাট্যচর্চা শুরু হয়নি। এখনও টেলিভিশন নাটক বা সিনেমার অভিনয়ের জন্য বাংলাদেশে সেভাবে প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধা নেই। আমরা শুনি ভারতের ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামা, পুনে ফিল্ম ইনস্টিটিউট কিংবা সত্যজিৎ রায় ফিল্ম ইনস্টিটিউটের কথা, সেরকম ইনস্টিটিউট কিন্তু বাংলাদেশে নেই। হ্যাঁ, সরকারিভাবে একটা তৈরি হয়েছে বটে। কিন্তু প্রাতিষ্ঠানিক যে শিক্ষাটা রয়েছে, সেটা কিন্তু আমরা থিয়েটার বা মঞ্চ থেকেই পেয়েছি। রিহার্সাল রুমটাই ছিল আমাদের শ্রেণিকক্ষ। 

আরেকটা ব্যাপার হচ্ছে, অভিনয় একটা বিস্তৃত জায়গা। তাই এখানে পরম্পরার জায়গাটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আমার একজন গুরু বা মেন্টর থাকা উচিত- যার হাত ধরে আমি শিখি। তাই আমি বলব- এই ধারাটা থাকা জরুরি যে অভিনেতা বা অভিনেত্রী কোনো একটা শিক্ষাঙ্গনের সাথে সম্পৃক্ত আছেন। সেটা হতে পারে বিশ্ববিদ্যালয়, হতে পারে একটা নাটকের দল বা খুব চমৎকার একটা সিনেমার টিম। মোটকথা, অভিনয়ের সাথে জোরালোভাবে সম্পৃক্ত থাকাটা জরুরি কিংবা একজন গুরু থাকা গুরুত্বপূর্ণ। এটা আমার ব্যক্তিগত মতামত। অন্যদের দ্বিমত থাকতে পারে। 

এক সময় অভিনয় করে দারুণ সাড়া পেয়েছেন। এখন নির্মাতা হিসেবে কাজ করছেন। কেমন লাগে?

আমি আসলে একটা সময় অভিনয় থেকে সরে গিয়ে খুব মনোযোগ দিয়ে টানা ১৫ বছর নির্মাণ নিয়েই ব্যস্ত ছিলাম। নির্মাণের কাজটা অনেক কঠিন। অভিনয়টাও কঠিন কাজ। তবে অভিনয়ের কাজটা একমুখী। কিন্তু নির্মাতা হিসেবে বহুমুখী দায়িত্ব পালন করতে হয়। ১৫ বছর এই মাল্টিটাস্কিং করতে গিয়ে আমার মনে হয়েছে- আমার অভিনয় স্কিলটাই হয়তো নষ্ট হয়ে গেল। তাই এখন একটু বিরতি নিয়েছি। তবে এটা আমি অত্যন্ত উপভোগ করেছি। এখন মনে হচ্ছে আবার নতুন করে অভিনয়ে মনোযোগ দেব। নতুন করে শিখব। আবার শ্রেণিকক্ষে ফেরত যেতে হবে। মঞ্চ খুব টানছে।

আপনার কি মনে হয় এখনকার দর্শক নাটকে আগ্রহ হারাচ্ছে? 

হয়তো। দেখুন, আমরা কি শুধু নাটকের প্রতিই আগ্রহ হারাচ্ছি? নাকি আমরা আগ্রহ হারাচ্ছি পৃথিবীর সবকিছুর প্রতি? আমরা সবথেকে বেশি আগ্রহ হারাচ্ছি মানুষের প্রতি। আমাদের সম্পর্ক তৈরি হচ্ছে যন্ত্রের সাথে, মানুষের সাথে নয়। আমরা এখন যন্ত্র দেখি, যন্ত্র শুনি, যন্ত্র পড়ি, যন্ত্রের সাথে বসবাস করি। তো যখন আমরা মানুষের থেকে দূরে সরে যাব, তখন মানুষের ভালো লাগা থেকেও আমরা দূরে সরে যাব। শুধু নাটককেই বলবেন কেন? আপনি সিনেমা নিয়ে বলেন, কিংবা সংগীত, সাহিত্য, কবিতা নিয়েও বলেন। নতুন যা কিছু তৈরি হচ্ছে তার কতটুকু মানুষের কাছে পৌঁছচ্ছে? খুব কম। তার মানে হচ্ছে- হিউম্যান ইন্টার‍্যাকশন থেকে আমরা সরে যাচ্ছি। তাই যন্ত্র নির্ভরতা কমালেই আমরা সংস্কৃতির দিকে মনোযোগী হতে পারব। যন্ত্রনির্ভর সমাজ আসলে মিথ্যা সমাজ। আমি নিজে যখন আমার চরিত্রকে বিশ্বাস করব না তখন সেই চরিত্রকে পর্দায় দেখে দর্শক কেন বিশ্বাস করবে? বিশ্বস্ততার জায়গাটা হারিয়ে যাচ্ছে আসলে। 

তাহলে দর্শক ওটিটি প্লাটফর্মের দিকে ঝুঁকছে কেন?

এটা একটা বিকল্প হিসেবে নতুন এসেছে, এজন্য একটা আগ্রহ তৈরি হয়েছে। আজকে যে অনুষ্ঠানে আমি এসেছি তার নিমন্ত্রণপত্রে চমৎকার একটা কথা লেখা আছে- ‘নাট্যে খুঁজি জীবনের মানে মিলেছি আজ নবযুগের সন্ধানে’। ওটিটি হচ্ছে সেই নবযুগ। এই নবযুগকে আমরা অস্বীকার করতে পারব না। এটি আমাদেরকে সারা বিশ্বের সঙ্গে সংযুক্ত করে দিচ্ছে। দীর্ঘদিন আমরা এই চেষ্টাটা করেছি। পুরো বিশ্ব আমার হাতে থাকবে। এখন ওটিটির কল্যাণেই সেটি সম্ভব হয়েছে। এক সময় পশ্চিমবঙ্গের দর্শক বাংলাদেশি নাটকের জন্য হাপিত্যেশ করে বসে থাকত। এখন শুধু তারাই নয়- কন্টেন্ট যদি উচ্চ মানসম্পন্ন হয় তাহলে সারা বিশ্বের সাথে সংযুক্ত হওয়া সম্ভব হচ্ছে। এটি একটি অসাধারণ ব্যাপার। তবে ওই যে যন্ত্র, কতদিন আগ্রহটা থাকে সেটাই ভাবনার বিষয়।


শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা