× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

শুধু ৩ সিনেমায় ভাষা আন্দোলন

সৌম্য প্রীতম

প্রকাশ : ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৩:৪৩ পিএম

আপডেট : ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৩:৫৭ পিএম

শুধু ৩ সিনেমায় ভাষা আন্দোলন

ভাষার জন্য রক্ত বিসর্জন দেওয়া পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। মহান মুক্তিযুদ্ধে গৌরবময় বিজয় অর্জনের মূলসূত্র বপিত হয়েছিল ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন বাঙালির জীবনে এক গভীর মর্মার্থ বহন করে। সারা বিশ্বে দিনটি এখন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃত। কিন্তু ৭০ বছর পেরিয়ে গেলেও ভাষা দিবস কেন্দ্র করে খুব বেশি সিনেমা নির্মিত হয়নি। স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে মাত্র তিনটি সিনেমা নির্মিত হয়েছে। বিষয়টি যে অবাক করার মতো, তা মানছেন চলচ্চিত্রসংশ্লিষ্টরা।

দুই দশক ধরে পৃথিবীব্যাপী ইতিহাস ও ঘটনা নির্ভর চলচ্চিত্র নির্মাণ বেড়েছে। পাশের দেশ ভারতের নির্মাতারা তাদের জাতীয় জীবনের সঙ্গে সম্পৃক্ত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণ করছেন এবং সেগুলো ব্যবসাসফল হচ্ছে। অথচ ভাষা আন্দোলনের ৭০ বছর পেরিয়ে গেলেও আমাদের হাতে রয়েছে মাত্র তিনটি সিনেমা, যার কোনোটাকেই উল্লেখযোগ্য বলা যায় না। দেশ স্বাধীনের আগে জহির রায়হান ‘হাজার বছর ধরে’ নির্মাণ করলেও সেটাকে পুরোপুরি ভাষা আন্দোলনের সিনেমা বলা যায় না। শহীদুল ইসলাম খোকনের ‘বাঙলা’ সিনেমাটি ভাষা আন্দোলনের হলেও সিনেমা হিসেবে খুব বেশি নামডাক কামাতে পারেনি। এটি নির্মিত হয়েছে ভাষা আন্দোলনের ৫৪ বছর পর। ২০১৯ সালে এসে তৌকীর আহমেদ নির্মাণ করেন ‘ফাগুন হাওয়ায়’। সিনেমাটি নিয়ে খুব বেশি উচ্চবাচ্য করতে দেখা যায় না চলচ্চিত্রবোদ্ধা ও দর্শককে।

ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে সর্বশেষ ছবি বানিয়েছেন অভিনেতা-নির্মাতা তৌকীর আহমেদ। ফাগুন হাওয়ায় সিনেমাটি খুব বেশি মানুষ দেখেছেন বলা যায় না। তবে যারা দেখেছেন প্রশংসা করেছেন। দেশ-বিদেশের বিভিন্ন উৎসবে প্রশংসা কুড়িয়েছে।

প্রখ্যাত নির্মাতা জহির রায়হান দেশ স্বাধীনের আগে ‘একুশে ফেব্রুয়ারি’ শিরোনামে একটি সিনেমা নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। কিন্তু পাকিস্তান সরকারের অসহযোগিতায় তা আর বানানো সম্ভব হয়নি। ১৯৭০ সালে গণআন্দোলনের পটভূমিতে ‘জীবন থেকে নেয়া’ নির্মাণ করেন জহির রায়হান। সেখানে একুশে ফেব্রুয়ারির একটি অংশ রয়েছে। আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো গানটি ব্যবহৃত হয়েছিল ছবিতে। ছবিতে প্রভাতফেরি, বিভিন্ন সংগঠনের পুষ্পস্তবক অর্পণের দৃশ্য ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। জীবন থেকে নেয়া মুক্তি পায় ১৯৭০ সালের ১১ এপ্রিল, পূর্বঘোষিত তারিখের এক দিন পর। কেননা তত্কালীন গোটা পাকিস্তানের চলচ্চিত্রের ইতিহাসে জীবন থেকে নেয়া একমাত্র চলচ্চিত্র, যাতে সমকালীন গণআন্দোলন, ছাত্রআন্দোলন, রাজনীতি, পুলিশি নির্যাতন, একুশের বিভিন্ন কর্মসূচি, বাঙালি জাতীয়তাবাদ, সাধারণ মানুষের ওপর নির্যাতনের প্রতিবাদ, একনায়কতন্ত্র ও সামরিকতন্ত্রের স্বেচ্ছাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ইত্যাদি প্রসঙ্গ ও ঘটনা, পারিবারিক কর্তৃত্বের মেয়েলি লড়াই রূপকের আড়ালে তুলে ধরা হয়েছিল। পরে নির্দিষ্ট তারিখে ছবিটি মুক্তি না পাওয়ার কারণে সচেতন দর্শক ও জনসাধারণ প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ মিছিল করে। তারা স্লোগানসহকারে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন সিনেমা হল আক্রমণ করে। এমন উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে সামরিক সরকার সেন্সর সার্টিফিকেট দিতে বাধ্য হয়েছিল। জীবন থেকে নেয়া চলচ্চিত্রটি মুক্তির পরের বছর বাংলাদেশ স্বাধীন হয়। দেশ স্বাধীনের পরের মাসেই মারা যান জহির রায়হান। তারপর মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে অনেক সিনেমা নির্মিত হলেও ভাষা আন্দোলন নিয়ে সেভাবে কেউ ভাবেননি। স্বাধীনতার প্রায় ৩৫ বছর পর ভাষা আন্দোলন নিয়ে নির্মিত হয় দ্বিতীয় সিনেমা। প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক আহমদ ছফার লেখা উপন্যাস ‘ওংকার’ অবলম্বনে নির্মিত সিনেমাটির নাম ‘বাঙলা’। সিনেমাটি নির্মাণ করেন গুণী নির্মাতা শহীদুল ইসলাম খোকন। হুমায়ুন ফরীদি, মাহফুজ আহমেদ, শাবনূর অভিনয় করেন। ‘বাঙলা’র ১৩ বছর পর ২০১৯ সালে অভিনেতা-পরিচালক তৌকীর আহমেদ নির্মাণ করেন ফাগুন হাওয়ায়। টিটো রহমানের গল্প ‘বউ কথা কও’ অবলম্বনে নির্মিত এ সিনেমায় নুসরাত ইমরোজ তিশা, সিয়াম আহমেদ, আবুল হায়াত, ফজলুর রহমান বাবু অভিনয় করেন।

বিষয়টি নিয়ে গুণী নির্মাতা নাসিরউদ্দিন ইউসুফ তার ভাবনার কথা তুলে ধরে বলেন, ‘মধ্যবিত্ত সমাজ যেকোনো দেশে বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চা করে। আমাদের দেশে এই ঘরানার মানুষের মধ্যে রোমান্টিসিজম বেশি কাজ করে। তা ছাড়া যে দেশের গল্প-উপন্যাস যত বেশি উন্নত, সে দেশের সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিও তত বেশি সমৃদ্ধ। কিন্তু আমাদের দেশে সেভাবে ভাষা আন্দোলনের ওপর কয়টি গল্প বা উপন্যাস আছে? চলচ্চিত্র সবসময় বাস্তবতা পাশে নিয়ে যাত্রা করে। সেখানে পরবাস্তবতা, বিমূর্তবাদ ও আরও অনুষঙ্গ যুক্ত হয়ে সিনেমার ডালপালা বিস্তার হয়। এখনকার কোনো তরুণ নির্মাতাকে মুক্তিযুদ্ধের ওপর সিনেমা নির্মাণের কথা বললে হয়তো অনাগ্রহ দেখানোর সম্ভাবনাই বেশি। এখনকার প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধকে সেভাবে ধারণ করেছে কি না জানি না, তবে ভাষা আন্দোলনকে ধারণ করতে পারেনি বলেই আমার মত।’ 

চিত্রনাট্যকার মাসুম রেজা বলেন, ‘ভাষা দিবস কিংবা মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে লেখার আগ্রহ অনেকের আছে। কিন্তু সিনেমার জন্য যখন গল্প রচয়িতার কাছে আইডিয়া চাওয়া হয়, তখন প্রযোজকরা সচেতনভাবেই ভাষা আন্দোলন কিংবা মুক্তিযুদ্ধের গল্প এড়িয়ে যেতে চান। বাজার কাটতি আছে এমন রোমান্টিক গল্পই প্রযোজকরা সবসময় রচয়িতার কাছে চেয়ে থাকেন। কেবল অনুদানের জন্য জমা দেওয়ার সময়ই এমন গল্প খোঁজা হয়। অনুদানভিত্তিক সিনেমায় এমন বাস্তব ঘটনা তুলে ধরার কিছুটা প্রচেষ্টা দেখা যায়, কিন্তু বাণিজ্যিক সিনেমায় বিষয়টি পুরোপুরি অনুপস্থিত বলা চলে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ভাষা আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক ছিলেন। ১৯৪৮ সালে ভাষা আন্দোলনের যে যাত্রা হয়েছে, তাতে লুকিয়ে আছে কত শত অজানা ঘটনা। কিন্তু বাস্তব ঘটনায় সিনেমা নির্মাণের অনাগ্রহের কারণে এ গল্প দর্শকের কাছে পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।’

এ প্রসঙ্গে রোকেয়া প্রাচী বলেন, ‘ভাষা নিয়ে একটি তথ্যচিত্র বানিয়েছিলাম ২০০৯ সালে। নাম “বায়ান্নর-মিছিলে”। এটি নির্মাণের অভিজ্ঞতা থেকে যদি বলি, প্রথমে বলবÑ পর্যাপ্ত বাজেট নেই ভাষা আন্দোলন নিয়ে সিনেমা নির্মাণের। সরকারিভাবে সুযোগ থাকলেও অনুদান পাওয়া নিয়ে প্রতিবছর নানা রকম সিনেমার প্রতিযোগিতা হয়। এ ছাড়া ভাষা নিয়ে গবেষণা করে একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করার যে মানসিকতা, সেটাও আমাদের নেই বললেই চলে। তাই ভাষা নিয়ে ৭১ বছরে মাত্র তিনটি সিনেমা ও একটি তথ্যচিত্র হয়েছে। এখন আপনি প্রশ্ন করলেনÑ তাহলে এই দায়ভার কার? আমি বলব, এই দায় আমাদের সবার। শুধু যে সরকারি অনুদানে দেশের ইতিহাসভিত্তিক সিনেমাগুলো নির্মাণ করা হবে, সেই চিন্তাধারা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। আমরা সবাই মিলে যদি দেশের মুক্তিযুদ্ধের গল্প, ভাষার গল্প তুলে ধরার চেষ্টা না করি, তাহলে সরকার একা কীভাবে করবে!’

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: protidinerbangladesh.pb@gmail.com

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: pbad2022@gmail.com

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: pbonlinead@gmail.com

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: pbcirculation@gmail.com

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা