প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৩ মার্চ ২০২৩ ১৩:১৩ পিএম
বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ডে প্রায় চার বছর ধরে ‘শনিবার বিকেল’ আটকে আছে। বারবার জটিলতা কাটবে আভাস মিললেও এখন পর্যন্ত এটি মুক্তির অনুমতি পায়নি। বাধ্য হয়ে নির্মাতা তার সিনেমা বিদেশের মাটিতেই মুক্তি দিলেন। গেল ১০ মার্চ থেকে সিনেমাটি কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রের ৭১টি হলে দর্শকরা দেখতে পারছেন বলে নিশ্চিত করেন নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী।
সিঙ্গাপুরভিত্তিক পরিবেশক সংস্থা কন্টিনেন্টাল এন্টারটেইনমেন্ট পিটিই লিমিটেড (সিইপিএল) বিশ্বব্যাপী ‘শনিবার বিকেল’ পরিবেশনার দায়িত্ব নিয়েছে। রিলায়েন্স এন্টারটেইনমেন্টের মাধ্যমে ১০ মার্চ আমেরিকা ও কানাডায় সিনেমাটি মুক্তি দেওয়া হয়েছে। পর্যায়ক্রমে পৃথিবীর অন্যান্য দেশে যাবে।
কেমন চলছে সিনেমাটি? কানাডা ও আমেরিকার বাংলাদেশি প্রবাসীরা কতটা উপভোগ করছেন সিনেমাটি? সোশ্যাল মিডিয়ায় চোখ রেখে কিছু তথ্য পাওয়া গেল। সেসব তথ্য অনুযায়ী, হলগুলোতে খুব একটা সাড়া পাচ্ছে না ‘শনিবার বিকেল’। কোথাও ২০ জন, কোথাও বা তার কিছু দর্শক নিয়ে চলছে শো। আর সিনেমা দেখার অভিজ্ঞতায় পাওয়া যাচ্ছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। কেউ কেউ সিনেমাটি দেখে মুগ্ধতা প্রকাশ করছেন। নির্মাতাকে ধন্যবাদ দিচ্ছেনÑ এমন একটি বিষয়কে সিনেমা নির্মাণের জন্য বাছাই করেছেন বলে। কেউ আবার বলছেন, এই সিনেমা বাংলাদেশে মুক্তি না পাওয়াই ভালো।
টরন্টো শহরে বাস প্রবাসী সবিতা সোমানি বেশ উচ্ছ্বসিত ‘শনিবার বিকেল’ দেখে। তিনি লেখেন, ‘আমার কাছে দারুণ লেগেছে ছবিটি। শান্তি, সত্য ও সুন্দরের বার্তা যেন কাব্যিক রূপ লাভ করেছে এ ছবিতে। সবারই হলে গিয়ে দেখা উচিত।’
নিউইয়র্ক প্রবাসী বদরুদ্দিন সাগর ফেসবুকে লিখেছেন, ‘শনিবার বিকেল’ একটি অসাধারণ সিনেমা। দেখার জন্য আমন্ত্রণ জানাচ্ছি।
সজল আশফাক নামে একজন প্রবাসী লিখেছেন, ‘এটি গতানুগতিক কোনো মুভি নয়। তাই এটি সবার জন্য নয়। যারা মুভি নিয়ে ভাবেন এটি তাদের মুভি। তাই বলে জটিল আর্টফিল্ম ভাববেন না। সহজ সরল মুভি। স্বতঃস্ফূর্ত হিউমার আছে, আছে বক্তব্য। যা আমাদের অনেকের অব্যক্ত কথা। আমাদের কথাগুলো বলে দিয়েছে ‘শনিবার বিকেল’। এই ছবি দেখে অনেককে চোখের জল মুছতে দেখেছি। চোখের সেই জল শুকানোর আগেই শনিবারের বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে। সময় খুব দ্রুতই ফুরিয়ে যায়, কিন্তু শনিবার বিকেলের ভাবনা ফুরায় না। যারা ছবি ভালোবাসেন, দেখুন, ভালো লাগবে। এটা আপনাদের ছবি।’
‘শনিবার বিকেল’ দেখার পর রওশন হক নামে নিউইয়র্ক প্রবাসী এক দর্শক লিখেছেন, ‘অবশেষে নিউইয়র্কে শনিবার বিকেলেই মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর ‘শনিবার বিকেল’ দেখলাম। গুলশান হলি আর্টিজান রেস্টুরেন্টে জঙ্গি হামলার ঘটনা নিয়ে নির্মিত ছবিটি কানাডা-নিউইয়র্ক একযোগে শুক্রবার মুক্তি পেয়েছে। শুক্রবার সন্ধ্যায় ফারুকীর উপস্থিতিতে বিকালের শোতে কিছু লোক থাকলেও আজ তেমন একটা লোকসমাগম হয়নি। আজকে সাপ্তাহিক বন্ধের দিন অনেক মানুষ হবে। সবার মতামত জানতে পারব মনে করে আমি বিকালের শো বেছে নিলাম।
‘হলে আমিসহ মোট ১২ জন ছিলাম। কেমন হয়েছে জানতে চাইলে সবাই অনেক কথা বলেছেন। এই ছবিটি দেশে মুক্তির জন্য আমি অনেক লেখালেখি করেছি। সরকারেরও সমালোচনা করতে ছাড় দেইনি। ছবি দেখার পর এই মুহূর্তে আমি এক বাক্যে আমার অভিমত শনিবার বিকেল দেশে মুক্তি না দিয়ে ভালো করেছে। কেন তা পরে জানাব।’
আরও পড়ুন: ‘জেকে ১৯৭১’ সিনেমার বিরুদ্ধে অভিযোগ
এদিকে পরিচালক মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বিদেশের মাটিতে তার সিনেমার মুক্তি প্রসঙ্গে ১১ মার্চ ফেসবুকে পোস্ট করেছেন। সেখানে তিনি লেখেন, ‘আমরা যখন ফিল্মটা বানাই তখন আমাদের সামনে চ্যালেন্জ ছিল ছবিটা যে সিঙ্গেল শটে বানানো, এটা যেন দর্শকদের মনে না হয়। কারণ যখনই দর্শকের এটা মনে হবে, যখনই এটা গল্পের আগে এসে খড়্গ হাতে দাঁড়াবে দর্শকের সামনে, তখনই বুঝতে হবে টেকনিকের জ্বালায় গল্পটা হারিয়ে গেছে। ছবিটা রিলিজ হওয়ার পর থেকে অনেক মানুষ সামনাসামনি এবং অনলাইনে প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন। দ্য মোস্ট বিউটিফুল থিং ইজ সবাই কথা বলছেন ছবির গল্প, ইমোশনাল ইমপ্যাক্ট এসব নিয়ে এবং বেশিরভাগ দর্শক বোঝেনই নাই এটা একটা সিঙ্গেল শর্ট ফিল্ম।’
প্রসঙ্গত, ‘শনিবার বিকেল’ সিনেমায় বিভিন্ন দেশের শিল্পী অভিনয় করেছেন। এর মধ্যে আছেন বাংলাদেশের জাহিদ হাসান, নুসরাত ইমরোজ তিশা, মামুনুর রশীদ, ইরেশ যাকের, ইন্তেখাব দিনার, গাউসুল আলম শাওন, নাদের চৌধুরী, ভারতের পরমব্রত চ্যাটার্জি, ফিলিস্তিনের ইয়াদ হুরানিসহ আরও অনেকে।