মহিউদ্দিন মাহি
প্রকাশ : ১৫ মার্চ ২০২৩ ১২:৪৪ পিএম
আপডেট : ১৫ মার্চ ২০২৩ ১৪:৪৫ পিএম
আফিয়া তাবাসসুম বর্ণ। ২০২২ সালে ‘রেহানা মরিয়ম নূর’ সিনেমা দিয়ে বড় পর্দায় অভিষেক হয় তার। এরপর অভিনয় থেকে কিছুটা দূরে ছিলেন। এই অভিনেত্রী এবার ফিরছেন ওয়েব সিরিজ দিয়ে। তাকে দেখা যাবে ‘মারকিউলিস’ সিরিজে। এতে তার চরিত্রের নাম অনামিকা। ওয়েব সিরিজটি নির্মাণ করেছেন আবু শাহেদ ইমন। সিরিজে নিজের অভিনয় ও কাজের অভিজ্ঞতা নিয়ে বর্ণ কথা বলেছেন প্রতিদিনের বাংলাদেশের সঙ্গে। লিখেছেন মহিউদ্দিন মাহি
অভিনয়ে কীভাবে এলেন?
আমার শোবিজের শুরুটা হয় একজন অ্যাসিস্ট্যান্ট ফটোগ্রাফার হিসেবে। ২০১৮ সালের দিকে। হুট করে একদিন একজন মডেল উপস্থিত ছিলেন না। শুটটা খুব জরুরি ছিল। তৎক্ষণাৎ আমাদের মডেল প্রয়োজন হয়। কী করব ভাবতে ভাবতে আমাদের প্রধান ফটোগ্রাফার কৌশিক ইকবাল ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, তুমি রেডি হও। আজকে মডেল তুমি। এরপর আমার আউটপুটে উপস্থিত সবাই বেশ প্রশংসা করেন। তারপর শুরু মডেলিং। এরপর সিনেমা, এবার ওয়েব সিরিজ।
রেহানা মরিয়ম নূর সিনেমায় কাজ করলেন এবং দেশে-বিদেশে প্রশংসিত হলেন। সব মিলিয়ে সিনেমাটি নিয়ে আপনার অভিজ্ঞতার গল্প জানতে চাই।
রেহানা মরিয়ম নূর আমাকে ভিন্ন ভিন্ন অনেক অভিজ্ঞতা দিয়েছে। সেই অভিজ্ঞতা আমি চিরকাল উপভোগ করব। একটা বিষয় বুঝতে পারছি, শুরুতেই যদি অনেক প্রশংসা পেয়ে যান, তবে সেটা বাড়তি একটা চাপ তৈরি করবে। আপনাকে আরও অনেক দায়িত্ব নিয়ে চলতে হবে, কাজ করতে হবে। সেই বিষয়টি মাথায় নিয়ে প্রতিনিয়ত নিজেকে তৈরি করছি। চেষ্টা করছি প্রথম কাজটির সাফল্যকে যেন ছাড়িয়ে যাওয়া যায়Ñ এমন কাজ করতে।
খ্যাতি, পরিচিতি লাভের পর চারপাশে কী পরিবর্তন লক্ষ করেছেন, যা থেকে শিক্ষা নেওয়া যায়?
আমি আসলে খ্যাতির বিষয়টি মাথায় নিয়ে কখনও কাজ করি না। পরিবেশ বা চারপাশে কী পরিবর্তন হলো সেগুলোও আমাকে ভাবায় না। কাজের ক্ষেত্রে সব সময় আমার মাথায় থাকে নিজের সেরাটা বিলিয়ে দিতে হবে। সেই চেষ্টাই আমি আমার প্রথম সিনেমায় করেছি, যা সামনের কাজগুলোতেও বজায় থাকবে। আমি একটা শিক্ষা মন দিয়ে অর্জন করেছি। সেটা হলো, যে কাজটা করব, সেটা মন দিয়ে করা। আমার মন সায় না দিলে আমি আসলে কোনো কাজ করি না।
মারকিউলিস আপনার প্রথম ওয়েব সিরিজ। এতে আপনার চরিত্রটি কেমন?
মারকিউলিস দিয়ে প্রথমবার আমি ওটিটি প্ল্যাটফর্মে কাজ করলাম। এতে আমার চরিত্রের নাম অনামিকা। চরিত্র সম্পর্কে যদি বলতে হয় তাহলে শুরুতেই বলব, চরিত্রটি চ্যালেঞ্জিং। দর্শকের মনে দাগ কাটবে। আশা করি, রেহানা মরিয়ম নূরের অ্যানি চরিত্রের পর মারকিউলিসের অনামিকা চরিত্রটিও সবার কাছে ভালো লাগবে। সবাইকে সিরিজটি দেখার আমন্ত্রণ জানাই আমি।
রেহানা মরিয়ম নূরের পর মারকিউলিস পর্যন্ত বেশ লম্বা বিরতি ক্যারিয়ারে। কেন?
প্রথমত, আমি হুটহাট কাজ করতে পছন্দ করি না। তাড়াহুড়া করে কাজ করা আমার একদমই পছন্দ না। আমি সময় নিচ্ছিলাম ভালো গল্প ও ভালো একটি চরিত্রের। যেটি আমি অপেক্ষা করে পেয়েছি মারকিউলিসে। গল্প ভালো হলে তখনই আমি আমার চরিত্র সম্পর্কে ধারণা নেই। এরপর কাজটি করার সিদ্ধান্ত নেই। যার জন্য নতুন কাজের ক্ষেত্রে আমার একটু দেরি হয়ে যায়। কাজের সংখ্যা নিয়ে অত ভাবনা নেই আমার। আমি চাই কিছু ভালো কাজের সঙ্গে যুক্ত হতে। তবে আমাকে পর্দায় নিয়মিত দেখতে পাবেন। নানা মাধ্যমের জন্য বেশ কিছু কাজ নিয়ে কথা চলছে। এখন কিন্তু আমাদের এখানে অনেক ভালো কাজ হচ্ছে। এটা বলতেই হবে।
ওটিটিতে দর্শকের রেসপন্সটা খানিক আলাদা। সে অনুযায়ী মারকিউলিস নিয়ে কতটা আশাবাদী আপনি?
ওটিটির কন্টেন্টের মেজাজ একেবারেই ভিন্ন। এখানে সব ধরনের চরিত্র স্বাধীনভাবে ফুটিয়ে তোলার একটা সুযোগ থাকে। এ ছাড়া এখানে বিভিন্ন জনরার গল্প থাকে। বিভিন্ন ধরনের চরিত্র থাকে। তাই চ্যালেঞ্জটাও বেশ বেশি থাকে। সে জায়গা থেকে মারকিউলিস নিয়ে আমি আশাবাদী। আমাদের পুরো টিমটাই ভালো কিছু প্রত্যাশা করছে। কারণ এটা একটা নতুন মাত্রার কাজ হয়েছে বলে মনে করি আমি। এখন অপেক্ষা করা যাক। মারকিউলিস মুক্তি পেলেই হয়তো সব জবাব মিলবে।
তরুণ অভিনেত্রী হিসেবে দেশের শোবিজের পরিবেশ কতটা ইতিবাচক বা ফ্রেন্ডলি মনে করছেন?
শোবিজে আমার যাত্রা বেশি সময়ের নয়। তবে এই সময়ে আমি যাদের সঙ্গে কাজ করেছি তাদের সবাইকেই খুব ফ্রেন্ডলি দেখেছি। সাপোর্ট পেয়েছি। কাজের পরিবেশ বেশ হেলথি পেয়েছি। তাই এখন পর্যন্ত আমার কাছে সবকিছু ইতিবাচক মনে হয়েছে। এখন সামনে আরও কাজ করলে তখন বিভিন্ন ধরনের আরও অভিজ্ঞতা হবে। উত্তরটা হয়তো তখন বিস্তারিত দিতে পারব। এখন পর্যন্ত শোবিজে আমার কাজের অভিজ্ঞতা অসাধারণ। তবে শোবিজের একটি বিষয় নিয়ে আমার একটু দ্বিমত রয়েছে। সেটি হলো, আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে শিল্পীদের একটা ক্যাটাগরিতে আটকে ফেলা হয়। কেউ একজন একটা চরিত্রে সাফল্য পেলে তারপর তাকে সে ধরনের চরিত্রেই বারবার দেখা যায়। আমার মনে হয়, ভিন্ন চরিত্রের এক্সপেরিমেন্ট চালানো উচিত। এর ফলে অভিনেতা-অভিনেত্রী চরিত্রের প্রয়োজনে নিজেকে ভাঙতে পারবে।
কাস্টিং কাউচ নিয়ে নানা গল্প প্রায়ই শোনা যায়। আপনার কি এমন কোনো অভিজ্ঞতা হয়েছে?
আসলে মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ দুই পিঠই আছে। যেটি শুধু শোবিজে নয়। সকল ক্ষেত্রেই রয়েছে। এখন পর্যন্ত আমার এ ধরনের কোনো অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হতে হয়নি। তবে আমি যেটি মনে করি, সবকিছু নিজের কর্ম পরিকল্পনার ওপর নির্ধারণ করে। আপনি নিজেকে কীভাবে সবার কাছে উপস্থাপন করছেন, সেটি অনেক বড় একটি বিষয়। এ ছাড়া আপনি কি ধরনের কাজ করে শোবিজে টিকে থাকতে চাইছেন, সেটাও গুরুত্বপূর্ণ। তাই কেউ যদি নিজের মেধা ও শ্রম দিয়ে কাজ করে যায়, তাহলে এ ধরনের অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না বলে মনে হয় আমার।
আপনি একজন ব্যস্ত মডেলও। তো মডেলিং নাকি অভিনয়; কোনটি বেশি ভালো লাগে আপনার?
আমি শুরুটা মডেলিং দিয়ে করেছি। এরপর অভিনেত্রী হিসেবে আবির্ভাব। আমি দুটোই উপভোগ করছি। আমার বেড়ে ওঠার যে পরিবেশ, সেটি কিন্তু থিয়াটারের। ছোটবেলা থেকেই থিয়েটারের সঙ্গে আছি। তাই অভিনয় নিয়ে আমার আলাদা ভালো লাগা আছে। আবার মডেলিং ও ফটোগ্রাফিও ভালো লাগে। আমি কাজটা করে যেতে চাই, যখন যেটা করার সুযোগ হয়।
পর্দায় এমন কোনো চরিত্র, যেটিতে অভিনয়ের স্বপ্ন দেখেন?
আমাকে অনেক চরিত্রই প্রভাবিত করে। অভিনয়ের ভার্সেটাইল চ্যালেঞ্জ আমার পছন্দ। এর বাইরে আলাদা করে বলতে চাইছি না। তবে আমি হুমায়ূন আহমেদের অনেক বড় ভক্ত। সে ক্ষেত্রে তার যেকোনো গল্পের, যেকোনো চরিত্রে অভিনয় করার স্বপ্ন আমার। সেটি যদি করতে পারি, তাহলে আমার জন্য অনেক বড় একটা প্রাপ্তি হবে।