সাক্ষাৎকার
কামরুল হাসান
প্রকাশ : ২১ মার্চ ২০২৩ ১৪:৪৪ পিএম
তরুণ লোকসংগীত শিল্পী কানিজ খন্দকার মিতু। কোক স্টুডিও বাংলায় লালনের সেই বিখ্যাত গান ‘সব লোকে কয়’ গাওয়ার মাধ্যমে দর্শকপ্রিয়তা পান। বর্তমানে তিনি জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকসংগীত বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী। তার আগে অনার্স শেষ করেছেন সংগীতে। বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলে নিয়মিত গান করছেন। বর্তমান ব্যস্ততা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা জানতে তার মুখোমুখি হয় প্রতিদিনের বাংলাদেশ।
প্রথমেই জানতে চাই আপনার শৈশব, স্কুল ও কলেজ সম্পর্কে...
আমার শৈশব এবং কৈশোর সবটাই হচ্ছে গ্রামে। টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলার গোবিন্দাসী গ্রামে আমার বেড়ে ওঠা। একজন সাধারণ মানুষ যেভাবে বেড়ে ওঠে আমিও একদম সেভাবে বেড়ে উঠেছি। ধার্মিক পরিবারে বড় হয়েছি তবে আমি একটু ছটফটে ছিলাম। ব্র্যাকের শিশু শ্রেণি দিয়েই আমার স্কুলের যাত্রা। এরপর স্থানীয় স্কুল থেকে মাধ্যমিক ও কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক সম্পন্ন করি। এখন আমি জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে লোকসংগীতের ওপর মাস্টার্স শেষ করে চূড়ান্ত ফলাফলের অপেক্ষায় আছি।
কোক স্টুডিও বাংলায় গান গাওয়ার পেছনের গল্পটা জানতে চাই।
একদিন সকালে অনিমেষ দাদা আমাকে এসএমএস দিয়ে একটি গান খালি গলায় গেয়ে পাঠাতে বলেন। বললাম, কেন? দাদা বললেন সব জানতে হয় না, পাঠাতে বলেছি পাঠাও। নিজের মতো করে গানটা রেকর্ড করে অনিমেষ দাদাকে পাঠালাম। পরে অনিমেষ দাদার কাছে জানতে পারলাম দাদা আমার গানটা কোক স্টুডিওর জন্য পাঠিয়েছেন এবং আমার গানটি তাদের পছন্দ হয়েছে। পরে আমাকে ঢাকায় ডাকা হলো। ঢাকায় আমাকে চার-পাঁচটি স্টুডিও ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে আমার পারফরম্যান্স দেখা হলো, আমি আসলে সব ইনস্ট্রুমেন্টের সঙ্গে অভ্যস্ত কি না তা যাচাই করার জন্য। পরে তাদের মনে হয়েছিল আমি হয়তো গানের জন্য পারফেক্ট। তখন শুরু হয় গানের রেকর্ড।
কোক স্টুডিওর সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?
এত সুন্দর একটি পরিবেশ, নতুন আয়োজন। সব মানুষই অনেক অভিজ্ঞ এবং হেল্পফুল। টেলিভিশনে যাদের দেখতাম, যারা আমার আইডল তাদের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা খুবই ভালো। আমি খুব ভাগ্যবতী যে তাদের সঙ্গে কাজ করতে পেরেছি এবং এখনও কাজ করছি। এটা আমার জন্য অনেক বড় পাওয়া।
সংগীত জীবনে এমন কোনো স্মৃতি যা ভেবে আপনাকে তৃপ্তি দেয় বা কষ্ট দেয়...
আমি যখন পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ি তখন একদিন মঞ্চে গান করছিলাম। তখন আমার গুরু গোলাম রব্বানী রতন আমার গান শুনছিলেন। তার কাছ থেকে মঞ্চে ৫০০ টাকা পুরস্কার পেয়েছিলাম এবং আমাকে কোলে নিয়ে চুমু খেয়েছিলেন। সে সময় আমার মনে হয়েছিল আমার স্বপ্ন পূরণ হচ্ছে। কারণ আমি ছোটবেলা থেকেই চাইতাম শিল্পী হতে। আর কষ্টের স্মৃতি যদি বলি আমি স্কুলে থাকাকালে আমার বাবা একদিন আমার গানের পোস্টারিং করছিলেন। সে সময় আমাদের স্থানীয় এক ব্যক্তি আমার বাবাকে আমার সামনে অপমান করেছিলেন। সেই স্মৃতিটি আমাকে খুব কষ্ট দেয়। আমার জন্য বাবাকে অপমানিত হতে হয়েছিল!
সংগীত নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
প্রথমত সংগীত রিলেটেড আমি ভালো একটা চাকরি চাই এবং সেই সেক্টরে যেন সবরকম গান নিয়ে কাজ করতে পারি। যেসব গান বিলুপ্ত হয়ে গেছে বা বিলুপ্তির পথে, সেগুলো নিয়ে আমি দীর্ঘ সময় ধরে গবেষণা করতে চাই যাতে আমার প্রজন্ম আমার সহপাঠী বা আমার ছোট ভাই-বোন এগুলো দেখে উৎসাহিত হয়। আমাদের গুণিজনদের মধ্যে একটা ধারণা আছেÑ এখনকার প্রজন্ম গান সম্পর্কে না জেনেই শুধু গায়ক হিসেবে গান করে। আমি সেই ধারণাটা দূর করতে চাই