প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৩ মার্চ ২০২৩ ১২:৪৪ পিএম
আপডেট : ২৩ মার্চ ২০২৩ ১২:৪৬ পিএম
বর্তমান সময়ে তরুণ অভিনেতাদের মধ্যে অন্যতম ব্যস্ত নাট্যকার বৃন্দাবন দাশ ও অভিনেত্রী শাহনাজ খুশির ছেলে সৌম্য জ্যোতি। নিজের মেধা ও পরিশ্রম দিয়ে বেশকিছু জনপ্রিয় নাটক ও ওয়েব সিরিজের গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি। এসেছেন আলোচনায়। মুশফিকুর রহমান গুলজারের পরিচালনায় ‘টুঙ্গিপাড়ার দুঃসাহসী খোকা’ সিনেমায় কিশোর বয়সের বঙ্গবন্ধুর চরিত্রে অভিনয় করার পর নিজেকে নতুন করে চেনান তিনি। আবারও তাকে দেখা যাবে জাতির জনকের চরিত্রে।
নির্মাতা পিকলু চৌধুরীর ‘দাওয়াল’ সিনেমায় ১৯৪৮ সালের তরুণ শেখ মুজিব হয়ে পর্দায় উপস্থিত হবেন তিনি। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন এই অভিনেতা। তিনি শুটিং করছেন মেজবাউর রহমান সুমন পরিচালিত একটি বিজ্ঞাপনে। সেখান থেকেই প্রতিদিনের বাংলাদেশকে জানান, ‘এই সিনেমা ও চরিত্রটি আমার কাছে স্পেশাল। সিনেমার গল্পটিই এর মূল চমক।’
তিনি আরও বলেন, ‘জাতির পিতার চরিত্রে পর্দায় নিজেকে উপস্থাপন করাটি অবশ্যই গর্বের। এ ছাড়া পিকলু আংকেলের প্রথম সিনেমায় আমি প্রধান চরিত্রে, এটাও একটি বড় বিষয় আমার জন্য। সব কিছু মিলিয়ে আমি বেশ উচ্ছ্বসিত। নিজেকে ভাগ্যবান মনে করছি। আশা করছি, দারুণ একটি সিনেমা হবে। এখানে অন্য শিল্পী যারা আছেন, সবাই গুণী। আমার শ্রদ্ধাভাজন। তাদের সঙ্গে কাজের সুযোগটাও আমার জন্য প্রাপ্তি।’
এর আগেও বঙ্গবন্ধুর চরিত্রে অভিনয় করেছেন সৌম্য। নতুন সিনেমায় এ চরিত্রে বিশেষত্ব কী? জানতে চাইলে এই তরুণ তুর্কি বলেন, ‘জাতির পিতার চরিত্রে আমি দ্বিতীয়বারের মতো কাজ করছি। আমি আসলেই ভাগ্যবান। কারণ এর আগে জাতির পিতার চরিত্রে দুইবার কাজ করার সুযোগ মনে হয় কোনো অভিনেতা পাননি। তাই যেমন ভাগ্যবান আমি, তেমন বিষয়টি আমার কাছে চ্যালেঞ্জেরও। এ সিনেমার চরিত্রে বিশেষত্ব অনেক। এখানে নতুন আঙ্গিকে বিপ্লবী শেখ মুজিবকে দেখবেন দর্শক। আশা করছি, সব কিছু মিলিয়ে দর্শকদের ভালো একটি কাজ উপহার দিতে পারব। সবাই আশীর্বাদ করবেন।’
চলচ্চিত্রটির গল্পে দেখা যাবে ১৯৪৮ সালের সময়ের ঘটনা। সেখানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দাওয়াল আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। সে সময় খাদ্য সমস্যা দেখা দিয়েছিল কয়েকটা জেলায়। বিশেষ করে ফরিদপুর, কুমিল্লা ও ঢাকা জেলার মানুষ বিপদের সম্মুখীন হয়েছিল। এসব জেলার লোকজন খুলনা ও বরিশালসহ ধান কাটার মৌসুমে দলবেঁধে দিনমজুর হিসেবে দেশের বিভিন্ন জেলায় যেতেন। তারা ধান কেটে মালিকের ঘরে উঠিয়ে দিতেন। বিনিময়ে ধানের একটি অংশ তারা নিজেদের ঘরে নিয়ে আসতেন। যারা এভাবে ধান কাটার সঙ্গে যুক্ত, তাদের বলা হতো দাওয়াল। পেশাটি আজও আছে।
দেশভাগের পর খাদ্যের সংকটের সেই সময়ে ধানের মৌসুমে ধান কাটার জন্য বসে থাকতেন দাওয়ালরা। তৎকালীন পাকিস্তান সরকার হঠাৎ করে এই পেশার মানুষের ওপর অন্যায় নিয়ম চাপিয়ে দেয়। তারা নতুন নিয়ম করে দাওয়ালদের ধান নিয়ে যেতে বাধা দেয়। সে নিয়ে শুরু হয় ক্ষোভ। সেই ক্ষোভ থেকে আন্দোলন। নিয়মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ডাক দেন তরুণ শেখ মুজিব। শুরু হয় পাকিস্তান সরকারের অন্যায় নিয়মের বিরুদ্ধে আন্দোলন। সেই আন্দোলন ও দাওয়ালদের তখনকার জীবনের গল্প নিয়ে নির্মিত হচ্ছে সিনেমাটি।
সিনেমায় বঙ্গবন্ধু চরিত্রের সৌম্য জ্যোতির পাশাপাশি আরও একঝাঁক শিল্পী কাজ করেছেন। তারা হলেন অভিনেতা জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়, মোহাম্মদ বারী, এ কে আজাদ সেতু, নিতাই কর্মকার নীতুসহ আরও অনেকে। এই সিনেমায় অভিনয় করবেন মঞ্চ নাটকের অনেক শিল্পীও। প্রতিটি চরিত্রকেই নির্মাতা গুরুত্ব সহকারে তুলে ধরার প্রস্তুতি নিয়েছেন বলে প্রতিদিনের বাংলাদেশকে নিশ্চিত করেন অভিনেতা মোহাম্মদ বারী। তিনি বলেন, ‘দাওয়াল’ সিনেমাটি একটি বাস্তব ঘটনার ওপর নির্মাণ করা হচ্ছে। এখানে প্রতিটি চরিত্রই গুরুত্বপূর্ণ। এখানে একটি চরিত্রই হচ্ছে প্রধান, সেটি হচ্ছে শেখ মুজিবুর রহমানের চরিত্র। ওই চরিত্রে আমাদের সৌম্য অভিনয় করবে। আর বাকি সব চরিত্র হচ্ছে দাওয়াল। ধান কাটার সঙ্গে যুক্ত। তাদের নিয়েই সিনেমার গল্প।
নিজের চরিত্র নিয়ে বারী বলেন, ‘আমি সিনেমাটিতে পাকিস্তানে জেলা প্রশাসকের চরিত্র অভিনয় করছি।’
দাওয়াল চলচ্চিত্রটি ২০২০-২১ অর্থবছরে সরকারি অনুদানে নির্মিত হচ্ছে। সাধারণ ক্যাটাগরির এই সিনেমাটি অনুদান পায় ৬৫ লাখ টাকা। সরকারি অনুদানের পাশাপাশি ছবিটির সহপ্রযোজক হিসেবেও রয়েছেন পরিচালক পিকলু চৌধুরী নিজেই। এর আগে পিকলু চৌধুরী নাটক, বিজ্ঞাপন ও ডকুমেন্টারি নির্মাণ করলেও এটাই তার প্রথম সিনেমা হতে যাচ্ছে। সিনেমায় গান ও সংগীত আয়োজনের দায়িত্বে আছেন ইমন চৌধুরী।
জানা গেছে, এ বছরই প্রেক্ষাগৃহে মুক্তির লক্ষ্যে সিনেমার শুটিং দুই লটে সম্পন্ন হবে। প্রথম লটের শুটিং শুরু হবে মানিকগঞ্জে, আগামী ২৬ মার্চ। দ্বিতীয় লটের শুটিং হবে উত্তর অঞ্চলের জেলা লালমনিরহাটে, আগামী মাসের ৭ থেকে ১০ তারিখের মধ্যে।