প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৪ আগস্ট ২০২৩ ১৪:২০ পিএম
গেল ৩০ জুলাই ছিল উপমহাদেশের আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন নায়িকা ববিতার
জন্মদিন। এবারের জন্মদিন যেন একটু বেশিই আনন্দঘন ছিল তার। কারণ এ সময় তিনি ছিলেন একমাত্র
ছেলে অনিকের সঙ্গে। অনিক তার মাকে নিজের ভালোলাগার জায়গাগুলোতে নিয়ে ঘুরে বেড়িয়েছেন।
ববিতা তার প্রতি ছেলের ভালোবাসা, শ্রদ্ধা দেখে রীতিমতো অবাক হন। অবশ্য ববিতাও একমাত্র
সন্তানকে নিজের আদর্শে সঠিকভাবে মানুষের মতো মানুষ হিসেবে গড়ে তুলেছেন। একমাত্র ছেলে
অনিকই যেন এখন তার গর্বের বিষয়। আর বাংলাদেশ গর্ব করে ববিতাকে নিয়ে।
সেই গর্বের অভিনেত্রীর হাতে আজ যুক্তরাষ্ট্রের ডালাস সিটিতে আন্তর্জাতিক
সম্মাননা তুলে দেওয়া হবে। মূলত আজ থেকে ববিতাকে ঘিরেই প্রথমবারের মতো ডালাসে শুরু হতে
যাচ্ছে ‘ডালাস বাংলা চলচ্চিত্র উৎসব’। উৎসবে উদ্বোধনী চলচ্চিত্র হিসেবে প্রদর্শিত হবে
ববিতা অভিনীত আমজাদ হোসেন পরিচালিত ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’ সিনেমাটি। এ ছাড়া সত্যজিৎ রায়
পরিচালিত ‘অশনি সংকেত’ সিনেমাটিও প্রদর্শিত হবে। এতেও অভিনয় করেছিলেন ববিতা। আজ থেকে
৬ আগস্ট পর্যন্ত এই উৎসব অনুষ্ঠিত হবে। ডালাস অ্যাঞ্জেলিকা ফিল্ম সেন্টারে উৎসবটি অনুষ্ঠিত
হবে।
ববিতা বলেন, ‘একটা সময় আমাদের দেশের গুণী নির্মাতারা খুব ভালো ভালো
সিনেমা নির্মাণ করতেন। দেশ স্বাধীনের আগে সেসব গুণী নির্মাতার সিনেমা আন্তর্জাতিক উৎসবে
স্থান পেত না। দেশ স্বাধীনের পর আন্তর্জাতিক উৎসবে আমাদের দেশের সিনেমা প্রদর্শনের
সুযোগ পেল। সে সময় সত্যজিৎ রায়ের “অশনি সংকেত” সিনেমায় আমার অভিনয়ের সুযোগ এলো। ছবিটি
বিশ্বব্যাপী ব্যাপক সমাদৃত হলো। এটি নিয়ে বিশ্বের নানা চলচ্চিত্র অঙ্গনে আমি প্রতিনিধিত্ব
করলাম। বাংলাদেশের পতাকা হাতে নিয়ে সবখানে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছি, নিজেকে চিনিয়েছি।
আজ যখন দেখছি শুধু আমাকে ঘিরেই ডালাসের মতো গুরুত্বপূর্ণ শহরে বাংলা চলচ্চিত্র উৎসব
হতে যাচ্ছে তখন একটু বেশিই আবেগ ভর করছে মনে।
সেখানে মাননীয় মেয়র আমার হাতে সম্মাননা তুলে দেবেন, এটা বাড়তি পাওনা।
এই সম্মান আমার নিজের একার নয়, এই সম্মান, এই প্রাপ্তি আমার দেশের, আমার পরিবারের।’
ববিতার কৈশোর কেটেছে যশোরে। ববিতার পিতা নিজামুদ্দীন আইয়ুব সরকারি
কর্মকর্তা এবং মাতা বি জে আরা পেশায় চিকিৎসক ছিলেন। বড় বোন সুচন্দার অভিনয়ের কারণে
তারা ঢাকায় স্থায়ী হন। এ কারণেই ববিতার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার সমাপ্তি ঘটে। তবে ব্যক্তিগত
চেষ্টায় ববিতা শিক্ষিত হন, তিনি একাধিক ভাষায় কথা বলার দক্ষতাও অর্জন করেন। বড় বোন
সুচন্দা এবং ছোট বোন চম্পা ছাড়াও একাধিক অভিনেতা-অভিনেত্রী তার আত্মীয়। তাদের মধ্যে
ভগ্নিপতি জহির রায়হান, ভাগ্নে ওমর সানী, ভাগ্নে-বউ মৌসুমী এবং চাচাতো ভাই রিয়াজ উল্লেখযোগ্য।
১৯৬৮ সালে জহির রায়হানের ‘সংসার’ চলচ্চিত্রে সুবর্ণা নামে আত্মপ্রকাশ
ঘটে ববিতার। পরবর্তী সময়ে জহির রায়হানের ‘জ্বলতে সুরুজ কি নীচে’ ছবিতে ববিতা নাম ধারণ
করেন। পূর্ণ নায়িকা হিসেবে তার আত্মপ্রকাশ ঘটে ১৯৬৯ সালে রাজ্জাকের বিপরীতে ‘শেষ পর্যন্ত’
ছবির মাধ্যমে। ববিতা নাম ধারণের আগে তিনি ‘কলম’ নামে একটি টিভিনাটকেও অভিনয় করেছিলেন
বলে জানা যায়। জহির রায়হানের দেখানো পথে শুরুর দিকে চললেও পরবর্তী সময়ে স্বীয় অভিনয়গুণের
কারণে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীদের সারিতে নিজেকে নিয়ে আসতে সক্ষম হন ববিতা। জহির রায়হান পরিচালিত
‘টাকা আনা পাই’ তার জীবনের টার্নিং পয়েন্ট হিসেবে উল্লেখ করা যায়। ১৯৭৩ সালে বিভূতিভূষণ
বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপন্যাস অবলম্বনে সত্যজিত রায় পরিচালিত চলচ্চিত্র ‘অশনি সংকেত’-এ
অভিনয় করে আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত হন ববিতা এবং বাংলাদেশকে বিশ্বের দরবারে উপস্থিত
করেন।
১৯৭০-এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের প্রবর্তন
হলে টানা তিনবার শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরস্কার অর্জন করেন ববিতা। পুরস্কারপ্রাপ্ত সেই
চলচ্চিত্রগুলো হলো ‘বাঁদী থেকে বেগম’, ‘নয়নমনি’ ও ‘বসুন্ধরা’। পরবর্তীকালে তিনি ‘রামের
সুমতি’ ছবির জন্য আরেকটি শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরস্কার লাভ করেন। এ ছাড়া তিনি আরও তিনটি
জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন ‘পোকামাকড়ের ঘরবসতি’ ছবি প্রযোজনার জন্য এবং
‘হাছন রাজা’ ও ‘কে আপন কে পর’ ছবিতে পার্শ্ব চরিত্রে অভিনয়ের জন্য।
সাতবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারজয়ী অভিনেত্রী আজীবন সম্মাননাও পেয়েছেন।
এ ছাড়া বহু সংগঠন কর্তৃক পুরস্কৃত হয়েছেন। ২০১২ সাল থেকে তিনি দেশের সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের
জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।