মহিউদ্দিন মাহি
প্রকাশ : ২০ আগস্ট ২০২৩ ২১:১৫ পিএম
আপডেট : ২১ আগস্ট ২০২৩ ০০:৩৯ এএম
দুই বাংলার জনপ্রিয় অভিনেতা ফেরদৌস আহমেদ। নিজের অভিনয় দক্ষতা দিয়ে দুই বাংলাতেই নিজের নাম প্রতিষ্ঠিত করেছেন তিনি। সমসাময়িক অনেকেই যখন অভিনয় থেকে দূরে তখনও নিয়মিত সিনেমায় কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। বেশকিছু সিনেমা আছে মুক্তির অপেক্ষায়। তার মধ্যে ১৮ আগস্ট মুক্তি পেয়েছে সরকারি অনুদানে নির্মিত মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক সিনেমা ‘১৯৭১ সেইসব দিন’।
সিনেমায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাঞ্জু চরিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি। নিজের চরিত্র ও কাজের অভিজ্ঞতা নিয়ে প্রতিদিনের বাংলাদেশের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি।
দীর্ঘ সময় পর বড়পর্দায় দেখা যাচ্ছে আপনাকে। অনুভূতি কেমন?
সিনেমা মুক্তির বিষয়টি সব সময় আমি উপভোগ করি। এর আগে গত বছর আমার ‘বিউটি সার্কাস’ সিনেমাটি মুক্তি পেয়েছিল। এরপর এক বছর পার হয়ে গেছে, নতুন কোনো সিনেমা মুক্তি পায়নি। তাই ‘১৯৭১ সেইসব দিন’ সিনেমাটি নিয়ে বেশ উচ্ছ্বসিত আমি।
‘১৯৭১ সেইসব দিন’ সিনেমায় আপনার চরিত্র সম্পর্কে জানতে চাই...
আমার চরিত্রের নাম সাঞ্জু। যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী। স্বাধীনতার সময় দেশ স্বাধীনে ভূমিকা রেখেছে, এমন একটি চরিত্রে আমাকে উপস্থাপন করা হয়েছে। চরিত্রটি করতে গিয়ে আমাকে যুদ্ধের সময়কার বেশকিছু ঘটনা সম্পর্কে ধারণা নিতে হয়েছে। আমাদের মুক্তিযুদ্ধে এ দেশের ছাত্র সমাজের অনেক বড় অবদান রয়েছে। সেই অবদানের কথা চরিত্রের মধ্যে ফুটিয়ে তুলতে হয়েছে। তাই আমাকে বেশ পরিশ্রম করতে হয়েছে। তখনকার ছাত্রদের জীবনযাপন সম্পর্কে গভীরভাবে জানতে হয়েছে। এ ছাড়া অনেক অজনা ঘটনা সম্পর্কে ধারণা নিতে হয়েছে। পুরো টিমটাই আসলে পরিশ্রম করেছে। মুক্তিযুদ্ধের সময়টাকে ফ্রেমে তুলে আনতে প্রস্তুতি নিয়েছি সবাই, রিহার্সাল হয়েছে। এমন সব দৃশ্য ও গল্প এ ছবিতে আছে, যা এর আগে পর্দায় দেখেননি দর্শক।
মুক্তিযুদ্ধের অনেক গল্পে আপনি কাজ করেছেন। যুদ্ধের গল্প ও চরিত্রে কাজ করতে বাড়তি কোনো প্রেরণা কাজ করে?
অবশ্যই। মুক্তিযুদ্ধের চেয়ে বড় কোনো অর্জন আমাদের নেই। বিশ্বের বুকে মানচিত্র করে নেওয়ার এক গর্বিত ইতিহাস এই যুদ্ধ। আমাদের কাছে সেরা মানুষ মুক্তিযোদ্ধারা। তাই এ প্রসঙ্গে গল্প ও চরিত্রে কাজের প্রস্তাব পেলে খুব ভালো লাগে আমার। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে সিনেমা সব সময় আমার কাছে আলাদা প্রায়োরিটি পায়। দেশপ্রেম, মুক্তিযুদ্ধের গল্প ও আমাদের ইতিহাস মিশে আছে এমন গল্পে কাজ করতে পারাটা আমার কাছে গর্বের। সেই গর্ব নিয়েই এবারও ‘১৯৭১ সেইসব দিন’ চলচ্চিত্রে কাজ করেছি। তা ছাড়া আমার এ সিনেমার পরিচালক হৃদি হক এত চমৎকারভাবে কাজটির পরিকল্পনা করেছিলেন, যা আমাকে খুব আকর্ষণ করেছে। তিনি প্রমাণও দিয়েছেন যে সিনেমা নির্মাণে কতটা আন্তরিকতা আছে তার।
হৃদি হকের নির্মাণে কাজ করার অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?
হৃদির সঙ্গে আমার এই কাজের অভিজ্ঞতা দারুণ। তার নির্মাণে এটাই প্রথম সিনেমা। আমারও তার সঙ্গে প্রথম কাজ। সবকিছু বাদ দিয়ে আমি যদি তার নির্মাণের ধরন নিয়ে কথা বলি, তাহলে শুরুতেই বলব তিনি অসাধারণ একজন নির্মাতা। আমি তার নির্মাণে মুগ্ধ। তার নির্দেশনা দেখে মনে হয়নি, এই পেশায় তিনি নতুন। তার ডেডিকেশন, আর্টিস্টদের ম্যানেজ করা সবকিছুই প্রশংসনীয়। এ ছাড়া তিনি তার নিজের সিদ্ধান্তে অটুট থাকতে পারেন। যতক্ষণ পর্যন্ত তার কাছে পারফেক্ট না মনে হয়েছে ততক্ষণ তিনি অ্যাকশন বলে গেছেন। কাজটাকে তিনি ভালোবেসে হৃদয় থেকে করতে পছন্দ করেন। তাই আমার কাছে মনে হয়, হৃদির মতো নির্মাতা আমাদের ইন্ডাস্ট্রির ভবিষ্যতের জন্য আরও দরকার। তার সঙ্গে এই সিনেমায় অভিনয়ও করেছি আমি। সেই অভিজ্ঞতাও দারুণ। যারা সিনেমাটি দেখবেন তাদের চোখে লাগবে আমাদের কেমিস্ট্রি।
আপনার কাছে এই সিনেমার সবচেয়ে শক্তিশালী দিক কোনটি?
এই সিনেমার দুটি শক্তিশালী দিক রয়েছে। একটি সিনেমাটির মূল গল্প। প্রয়াত নাট্যজন, শিক্ষক ড. ইনামুল হক স্যারের ভাবনা এই গল্প। এখানে তিনি মোটা দাগে প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছেন একটি বার্তাÑ মুক্তিযুদ্ধের চেয়ে বড় আর কিছু হতে পারে না। ‘১৯৭১ সেইসব দিন’ সিনেমাটি দেখলেই সেটা অনুধাবন করা যাবে। হৃদি হক দারুণভাবে তার ভাবনাটাকে পর্দায় তুলে আনতে পেরেছেন।
সিনেমার আরেকটি শক্তিশালী দিক হলো এর শিল্পী তালিকা। এই সিনেমায় অভিনয় করছেন মামুনুর রশীদ, জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়, মুনমুন আহমেদ, শিল্পী সরকার অপু, তারিন, লিটু আনাম, সজল, সাজু খাদেম, সানজিদা প্রীতি প্রমুখ। দেখুন, যার যার জায়গায় এনারা প্রতেক্যেই দাপুটে অভিনয়শিল্পী। অভিনয় নিয়ে যদি মুগ্ধতার কথা আসে তবে এই সিনেমা দেখতে হবে, দর্শক মুগ্ধ হবেই। এমন সব শক্তিশালী ও জাত অভিনেতা-অভিনেত্রীকে বাছাই করার জন্য হৃদিকে আমার ধন্যবাদ। আমি খুব আনন্দিত এই টিম পেয়ে।
আপনার বেশকিছু সিনেমা নির্মাণ সম্পন্ন হওয়ার পরও মুক্তির মুখ দেখছে না। কারণ কী?
এটি খুবই দুঃখজনক। আমার বেশকিছু সিনেমা বছরের পর বছর মুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে। যেগুলোর কাজ অনেক আগেই সম্পন্ন হয়েছে। কিন্তু মুক্তি পাচ্ছে না, যা আমার জন্য কষ্টের। এর জন্য আমি মনে করি, নির্মাতা ও প্রযোজকদের আরও বেশি দায়িত্ববান হতে হবে। সিনেমা যদি সময় মেনে মুক্তিই না দেওয়া যায় তবে বানিয়ে লাভ কী!
‘মীর জাফর : চ্যাপ্টার টু’ সিনেমার কাজ কতদূর?
এ সিনেমার শুটিং এখনও শুরু হয়নি। শুধু ফটোশুট সম্পন্ন হয়েছে। মাঝে খবর নিয়েছিলাম, নির্মাতা অর্কদীপ মল্লিকা নাথ বললেন কিছু সমস্যা হয়েছে। কাজটি তারা আপাতত শুরু কতে পারছেন না। তাদের টার্গেট এ বছরের ডিসেম্বরে শুটিং শুরু করার। এর বেশি আমি আপাতত কিছু জানি না।
বর্তমানে কী নিয়ে ব্যস্ততা যাচ্ছে?
সম্প্রতি ছটকু ভাইয়ের ‘আহারে জীবন’ জীবন সিনেমার শুটিং সম্পন্ন হয়েছে। আরও দুটি সিনেমার শুটিং নিয়ে কথা হচ্ছে। যেগুলোর কাজ আগেও করেছি। এখন শিডিউল দিয়ে এগুলো শেষ করব। এ ছাড়া নতুন কোনো সিনেমার কাজ এখনও হাতে নিইনি। তবে স্টেজ শোর ব্যস্ততা অনেক।
কলকাতায় আবারও যাতায়াত বেড়েছে। সেখানে ওটিটি বা সিনেমার কোনো কাজে কি দেখা যাবে?
সহসাই না। তবে সম্প্রতি সফরে বেশ কিছু কাজ নিয়ে কথা হয়েছে। ব্যাটে-বলে মিললে কিছু কাজে যুক্ত হতেও পারি।
রাজনৈতিক ব্যস্ততা কেমন?
আমি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের আদর্শ সৈনিক। তার আদর্শ বুকে ধারণ করে মানুষের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত রেখেছি। তাই রাজনীতি নিয়ে সব সময় আমি নিজেকে ব্যস্ত রাখি। আমার এলাকার মানুষের সব ধরনের সুখ-দুঃখের কথা শুনে তাদের পাশে থাকতে চাই। আলাদা করে রাজনীতিতে আমার সময় দিতে হয় না।