প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৪:১৪ পিএম
বাংলা লোকসংগীতের কিংবদন্তি শিল্পী আব্দুল আলীম। তাকে বলা হয় পল্লী গানের সম্রাট। এই কিংবদন্তির ৪৯তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ১৯৭৪ সালের ৫ সেপ্টেম্বর ঢাকায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে (তৎকালীন পিজি হাসপাতাল) মৃত্যুবরণ করেন তিনি। লোকসংগীতকে অবিশ্বাস্য এক উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছিলেন আবদুল আলীম। পল্লীগীতি, ভাটিয়ালি, দেহতত্ত্ব, মুর্শিদি ও ইসলামী গানের শিল্পী হিসেবে আজও তিনি অপ্রতিদ্বন্দ্বী।
বাবার মৃত্যুবার্ষিকীর আয়োজন নিয়ে আব্দুল আলীমের কন্যা সংগীতশিল্পী নুরজাহান আলীম বলেন, ‘পারিবারিকভাবে মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হবে। আর বাবার কবর জিয়ারত করব পরিবারের সবাই মিলে।’
তিনি আরও জানান, আব্দুল আলীমকে নিয়ে ডকুমেন্টারি ফিল্ম তৈরির কাজ চলছে। সেটা প্রযোজনা করছেন নূরজাহান। পরিচালনায় আছেন মীর শামসুল আলম বাবু। এর নাম ঠিক করা হয়েছে ‘রঙিলা নায়ের মাঝি’।
নূরজাহান আলীম বলেন, ‘অনেক স্বপ্ন নিয়ে কাজটি হাতে নিয়েছি। সবার মধ্যে বাবার জীবন ও কর্মকে তুলে ধরতে চাই। পাশাপাশি বাবার গাওয়া দেড় শতাধিক গান রয়েছে পাকিস্তানের করাচিতে। গানগুলো দেশে আনার চেষ্টা করে যাচ্ছি আমরা। বাবাকে নিয়ে বই প্রকাশের পরিকল্পনাও রয়েছে। কিছু লেখা পেয়েছি। আরও কিছু লেখার জন্য অপেক্ষা করছি। বাবার বেশ কয়েকটি গান নিয়েও কাজ শুরু করব শিগগির।’
কণ্ঠস্বরের অসাধারণ প্রতিভা নিয়ে ১৯৩১ সালের ২৭ জুলাই পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার তালিবপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন আবদুল আলীম। পেশাগত জীবনে তিনি ছিলেন ঢাকা সংগীত কলেজের লোকগীতি বিভাগের অধ্যাপক। কৈশোরেই গায়ক হিসেবে নাম করেছিলেন। মাত্র ১৩ বছর বয়সে তার গানের প্রথম রেকর্ড হয়। তবে অর্থনৈতিক অনটনের কারণে কোনো শিক্ষকের কাছে গান শেখার সুযোগ পাননি আব্দুল আলীম। অন্যের গান শুনে শুনে তিনি শিখতেন আর বিভিন্ন পার্বণে সেগুলো গাইতেন।
আব্দুল আলীমের বিখ্যাত গানগুলোর মধ্যে রয়েছে- নাইয়া রে নায়ের বাদাম তুইলা, সর্বনাশা পদ্মা নদী, হলুদিয়া পাখি, মেঘনার কূলে ঘর বাঁধিলাম, এই যে দুনিয়া, দোল দোল দুলুনি, দুয়ারে আইসাছে পালকি, কেন বা তারে সঁপে দিলাম দেহ-মন-প্রাণ, মনে বড় আশা ছিল যাব মদিনায় ইত্যাদি।
বাংলাদেশের প্রথম চলচ্চিত্র ‘মুখ ও মুখোশ’সহ বিভিন্ন বাংলা চলচ্চিত্রে গান করেছেন আব্দুল আলীম। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রটি হলো ‘লালন ফকির’। সব মিলিয়ে প্রায় ৫০০ গান রেকর্ড হয়েছিল তার।
আব্দুল আলীম বেশ কয়েকটি জাতীয় পুরস্কার পেয়েছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- একুশে পদক, পূর্বাণী চলচ্চিত্র পুরস্কার এবং বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি পুরস্কার। পাকিস্তান মিউজিক কনফারেন্স, লাহোরে সংগীত পরিবেশন করে আব্দুল আলীম পাঁচটি স্বর্ণপদক পেয়েছিলেন। বাংলাদেশ সরকার ১৯৭৭ সালে তাকে মরণোত্তর একুশে পদক প্রদান করে সম্মানিত করে।