প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১২:১৩ পিএম
আপডেট : ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১২:৩৬ পিএম
১৯৭১ সালের মে
মাস, ঢাকা শহরে অবরুদ্ধ হাজারো পরিবারের মধ্যে মতিন সাহেবের পরিবার একটি। স্ত্রী, দুই
মেয়ে ও গৃহপরিচারিকা নিয়ে তিনি আতঙ্ক, ভয়ভীতির মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন, সে সময় তার বাড়িতে
আশ্রয় নেন মুক্তিযোদ্ধা বদি। প্রতি মুহূর্তের মৃত্যু আতঙ্কের মাঝেও স্বপ্ন দেখেন দেশ
একদিন স্বাধীন হবে। রেডিওটা কানে লাগিয়ে ভয়েস অব আমেরিকা, বিবিসি, স্বাধীন বাংলা বেতার
কেন্দ্র শোনার চেষ্টা করেন মতিন সাহেব।
হুমায়ূন আহমেদের
বিখ্যাত চলচ্চিত্র ‘আগুনের পরশমণি’র সেই মতিন আহমেদের কথা মনে পড়েছে? সেই মতিনের চরিত্রে
অনবদ্য অভিনয় করে নিজের প্রতিভার সমুজ্জ্বল দৃষ্টান্ত রাখেন। দারুচিনি দ্বীপ সিনেমার
সেই অতি দারিদ্র্যের মাঝেও স্বপ্নদ্রষ্টা ‘সোবহান সাহেব’ চরিত্রে অভিনয় করে পেয়েছিলেন
জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। তিনি আবুল হায়াত। একুশে পদকপ্রাপ্ত বরেণ্য অভিনেতা, নাট্যকার
ও নির্দেশক আজ ৭৯ বছর পূর্ণ করলেন। পা রাখলেন জীবনের ৮০তম বসন্তের পথে। জন্মদিনে তিনি
ভাসছেন ভক্ত-অনুরাগীর ভালোবাসা ও শুভেচ্ছায়। আজ সকালে ঘরোয়াভাবে জীবনের বিশেষ এই দিনটি
বিশেষভাবে উদযাপিত হবে বলে জানান তিনি। দুপুর ১২টা ৩০ মিনিটে চ্যানেল আইয়ের ‘তারকাকথন’
অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করবেন আবুল হায়াত।
তিনি বলেন, ‘আমার
এমন বিশেষ দিনে দুই মেয়ে বিপাশা আর নাতাশা পাশে নেই। একটু খারাপ লাগছে। তবে আমার জন্মদিনে
আমার নাতনি শ্রীষারও জন্মদিন। নানা আর নাতনি মিলে দিনটি বিশেষভাবে উদযাপনের চেষ্টা
করব। ছোট জামাতা শাহেদ আাছে। শাহেদকে সঙ্গে নিয়েই আনন্দ করার চেষ্টা করব। আমার স্ত্রী
শিরীন সাধারণত আগের দিনই কেক এনে জন্মদিনের প্রথম প্রহরটি স্মরণীয় করে তোলার চেষ্টা
করেন। তবে ধন্যবাদ আমার প্রাণের প্রিয় দর্শকদের প্রতি। তাদের জন্যই এখনও আমি অভিনয়ে
অনুপ্রেরণা পাই।’
মঞ্চনাটক দিয়ে
আবুল হায়াতের অভিনয় জীবন শুরু। ১৯৬৯ সালে ‘ইডিপাস’ নাটকের মধ্য দিয়ে টেলিভিশন জগতে
আত্মপ্রকাশ করেন। ধীরে ধীরে হয়ে ওঠেন টিভিনাটকের নিয়মিত অভিনেতা।
‘বহুব্রীহি’র
মূল চরিত্র সোবহান সাহেবকে ছাপিয়ে অয়োময়ের ‘কাশেম’ চরিত্রে করেছিলেন সেরা অভিনয়। নক্ষত্রের
রাত, আজ রবিবারে বাবার চরিত্রের পাশাপাশি জনপ্রিয় ‘মিসির আলি’ হয়েও নিজেকে প্রতিষ্ঠিত
করেছন।
১৯৪৪ সালের ৭
সেপ্টেম্বর পশ্চিমবঙ্গে জন্ম হলেও, দেশবিভাগের পর চলে আসেন চট্টগ্রামে। বুয়েট থেকে
ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশোনার পাট চুকিয়ে প্রকৌশলী হিসেবে নিযুক্ত হন ওয়াসায়। ওয়াসার
সেই ইঞ্জিনিয়ার অভিনয় দিয়ে হয়ে ওঠেন টিভিনাটকের ইতিহাসে সবচেয়ে জনপ্রিয় ‘বাবা’।
এইসব দিনরাত্রি,
বহুব্রীহি, অন্য ভুবনের ছেলেটা, দ্বিতীয় জন্ম, শেখর, অয়োময়, নক্ষত্রের রাত, আজ রবিবার
থেকে জোছনার ফুল, শুকনো ফুল রঙিন ফুল, আলো আমার আলো, নদীর নাম নয়নতারা, খেলা, শনিবার
রাত ১০টা ৪০ মিনিট, হাউজফুল, এফএনএফসহ অসংখ্য দর্শকনন্দিত নাটকে অভিনয় করে নিজেকে সুপ্রতিষ্ঠিত
করেছেন।
শুধু অভিনয়েই
নয়, নাট্যকার হিসেবেও নিজের প্রতিভার আলো ছড়িয়েছেন। পরিচালনা করেছেন উন্মেষ, দিলদরিয়া,
জোছনার ফুল, মন+হৃদয়, হারানো সুর, শুকনো ফুল রঙিন ফুলসহ, মধ্যাহ্নভোজ কি হবে, হাত বাড়িয়ে
দেওয়ার মতো বহু আলোচিত নাটক। সর্বশেষ কিছুদিন আগে চ্যানেল আইয়ের জন্য নির্মাণ করেছিলেন
‘পাগলা হাওয়া বাদল দিনে’ নাটক।
১৯৭৩ সালে ঋত্বিক
ঘটকের ‘তিতাস একটি নদীর নাম’ চলচ্চিত্রে স্বল্প উপস্থিতিতে প্রথম সিনেমায় অভিনয় করেন।
একই বছর ‘অরুণোদয়ের অগ্নিসাক্ষী’ সিনেমায়ও অভিনয় করেছেন। তবে নব্বইয়ের দশকে এসে পুরোদমে
চলচ্চিত্রে অভিনয় শুরু করেন। কেয়ামত থেকে কেয়ামত, স্বপ্নের ঠিকানা, প্রাণের চেয়ে প্রিয়,
প্রেমের তাজমহল, শঙ্খনীল কারাগার, আগুনের পরশমণি, জয়যাত্রা, দারুচিনি দ্বীপ, থার্ড
পারসন সিঙ্গুলার নাম্বার, অজ্ঞাতনামা, ফাগুন হাওয়াসহ অসংখ্য ছবিতে অভিনয় করেছেন আবুল
হায়াত।
সাহিত্যজগতেও
নিজের নাম লিখিয়েছেন। এ ছাড়া বিজ্ঞাপনের মডেল হিসেবেও বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছন, উপস্থাপক
হিসেবেও প্রশংসিত হয়েছেন। মঞ্চনাটকে তিনি ছিলেন অনন্য।
আবুল হায়াত ১৯৭০
সালে মেজো বোনের ননদ মাহফুজা খাতুন শিরিনকে বিয়ে করেন। ১৯৭১ সালের ২৩ মার্চ যুদ্ধ শুরু
হওয়ার পর জন্ম নেন তাদের প্রথম সন্তান বিপাশা হায়াত। ছয় বছর পর জন্ম নেন নাতাশা
হায়াত। তারা দুজনই শোবিজের জনপ্রিয় মুখ।