ম্যাড থেটারের নতুন নাটক
প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২০ মার্চ ২০২৪ ১৪:৫৪ পিএম
যুদ্ধে বিধ্বস্ত এক নারীর ঘরে ফেরা
স্বাধীনতা সংগ্রামের সশস্ত্র যুদ্ধের সূচনা হয় ১৯৭১ সালের মার্চে। ইতিহাসের সেই রক্তঝরা মার্চ, মুক্তিযুদ্ধ কেন্দ্র করে নির্মিত হয়েছে ম্যাড থেটারের নতুন নাটক ‘ঘরে ফেরা’। নাটকটির উদ্বোধনী প্রদর্শনী হতে যাচ্ছে ভারতের গুরুকুল পরিচয় উৎসবে, ২২ মার্চ সন্ধ্যা ৭টায়।
আমতা পরিচয় আয়োজিত ২১ মার্চ থেকে পাঁচ দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক নাট্যোৎসব হবে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে। সেখানে হাওড়ার আনুলিয়া মহামায়া বিদ্যামন্দিরে উৎসবের দ্বিতীয় দিনে প্রদর্শিত হবে বাংলাদেশের নাটক ঘরে ফেরা। নাটকটি ম্যাড থেটারের চতুর্থ প্রযোজনা। একক চরিত্রের নাটকটিতে যুদ্ধপীড়িত, অসম্ভব প্রাণশক্তিসম্পন্ন এক লড়াকু নারীর ভূমিকায় অভিনয় করেছেন সোনিয়া হাসান। মোজাফফর হোসেনের কাহিনী অবলম্বনে নাটকটি রচনা, নির্দেশনা ও পরিকল্পনা করেছেন আসাদুল ইসলাম।
পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের যুদ্ধে একটাই চিত্রÑরক্তক্ষয়। সে চিত্র নিদারুণভাবে ফুটে উঠেছে একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে। যুদ্ধ ডেকে আনে হত্যা। যুদ্ধ মানুষকে নিঃস্ব করে দেয়, যুদ্ধ মানুষকে একা করে দেয়। যুদ্ধদিনের ভয়াবহতার নির্মম প্রতিচ্ছবি উঠে এসেছে ঘরে ফেরায়।
এ নাটকের গল্পে দেখা যাবে : ১৯৭১ সাল। স্বাধীনতাযুদ্ধ চলছে। পুরো দেশ পরিণত হয়েছে কসাইখানায়, হত্যাযজ্ঞে মেতেছে পাকিস্তানি মিলিটারি। জনপদ থেকে জনপদে ছড়িয়ে পড়েছে ভীতি, আতঙ্ক। মানুষ পালাচ্ছে। সহায়সম্বল ফেলে রেখে দিগ্বিদিক ছুটছে মানুষ। চারদিকে খুন আর আগুন, দেশজুড়ে যুদ্ধের ভয়াবহতা। যুদ্ধের মধ্যে একদল গ্রামবাসী ভারতে আশ্রয়ের উদ্দেশ্যে সীমান্তের দিকে ছুটছে। কিন্তু তাদের উদ্দেশ্য সফল হয় না। পাকিস্তানি মিলিটারির অতর্কিত আক্রমণে তারা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। কে কোথায় ছিটকে পড়ে খোঁজ পাওয়া যায় না। স্বামী হারিয়ে ফেলে স্ত্রীকে, সন্তান আর সন্ধান পায় না তার পিতা-মাতার। ধ্বংসযজ্ঞের মধ্যে পড়ে থাকে বিপর্যস্ত মানুষের ঝাঁক। কেউ মৃত, কেউ অর্ধমৃত। যারা বেঁচে থাকে তাদের প্রাণটুকুই সম্বল, সীমান্ত অতিক্রম করার কথা তারা ভুলে যায়।
বেঁচে যাওয়া গ্রামবাসী আবার ফিরতে শুরু করে জন্মভিটায়। ফিরে আসে লাইন ধরে। তাদের কারও চোখ নেই, কারও পা নেই, কারও শরীরে মাংস নেই, কারও মাথার মগজ নেই, কারও আবার মাথাটাই নেই। তারা যেন এ পৃথিবীর বাইরের কোনো মানুষ, যুদ্ধ তাদের জীবন পরাবাস্তব করে দিয়েছে। গৃহাভিমুখে চলা মিলিত মানুষের স্রোতকে মনে হয় যেন পৃথিবীর ওপর দিয়ে চলেছে পরাবাস্তবতার মিছিল। এ মিছিলে অংশ নিয়ে ত্রিশোর্ধ্ব বিপন্ন এক নারী নিজের নাড়িভুঁড়ি হাতে নিয়ে ঘরে ফিরছে। যুদ্ধ তাকে নিঃস্ব করে দিয়েছে। যুদ্ধে সে স্বামী হারিয়েছে, সন্তান হারিয়েছে। সে আর কথা বলতে পারে না, একদল নরপিশাচ তার জিব কেটে ফেলেছে।
যুদ্ধের সব প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে সে নারী ঘরে ফিরছে। জীবন ও মৃত্যুর মধ্যে যে ব্যবধান তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে এক নির্বাক নারীর ঘরে ফেরার লড়াই উন্নীত হয়ে ওঠে মনস্তাত্ত্বিক লড়াইয়ে, যেখানে সে স্বাধীন, তার চিন্তা কেউ আর নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। তাকে বাধাগ্রস্ত করার মতো শক্তি পৃথিবীতে আর নেই। পরাধীন দেশে এক নারী নিজেকে পরিণত করে স্বাধীন সত্তায়।