× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

খাসিদের পান চাষকে হেরিটেজ ঘোষণার দাবি

প্রবা প্রতিবেদন

প্রকাশ : ২৬ নভেম্বর ২০২২ ১৯:৫৯ পিএম

আপডেট : ২৭ নভেম্বর ২০২২ ১৪:১৬ পিএম

শনিবার রাজধানীর ইকবাল রোডে মৌলভীবাজারের খাসিপুঞ্জির বাসিন্দাদের নামে মিথ্যা মামলাসহ হয়রানির প্রতিবাদে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। ছবি: প্রবা

শনিবার রাজধানীর ইকবাল রোডে মৌলভীবাজারের খাসিপুঞ্জির বাসিন্দাদের নামে মিথ্যা মামলাসহ হয়রানির প্রতিবাদে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। ছবি: প্রবা

খাসি জনগোষ্ঠী প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে উঠা গাছে পান চাষ করেন। খাসিয়া নামে পরিচিত এ জনগোষ্ঠী নিজেদের খাসি বলে পরিচয় দিতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। সিলেটের পাহাড়ি-টিলায় গড়ে তোলা নিজেদের গ্রামকে ‘পুঞ্জি’ বলেন এ জনগোষ্ঠী।

লতানো গাছপানসহ দেশীয় বৃক্ষপ্রজাতিতে ভরপুর থাকে বলে এসব বসত পানপুঞ্জি নামেও পরিচিত। কোনোরকম কীটনাশক বা সারের ব্যবহার ছাড়াই প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ায় এ পান চাষ করেন তারা। যা বন ও বনের প্রানবৈচিত্র্যর জন্য ক্ষতিকারক নয়। তাদের পান চাষের এ প্রক্রিয়া একটি ঐতিহ্যগত পদ্ধতি হতে পারতো। তবে এ চাষকেই বিলুপ্ত করে দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।

তাদের এ পানজুমকে রক্ষা করতে খাসি অধ্যুষিত এলাকায় হওয়া পানজুমকে হেরিটেজ অঞ্চল ঘোষণা ও বনবাসী মানুষের নামে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মী, শিক্ষক-অ্যাডভোকেট ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বরা।

শনিবার (২৬  নভেম্বর) রাজধানীর ইকবাল রোডে ওয়াই.ডব্লিউ.সি ভবনে মৌলভীবাজারের ডুলুকছড়া খাসি পুঞ্জির বাসিন্দাদের নামে মিথ্যা মামলাসহ তাদের হয়রানি প্রসঙ্গে কাপেং ফাউন্ডেশনর আয়োজিত নাগরিক প্রতিনিধিদের সরেজমিন পর্যবেক্ষণ নিয়ে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান তারা।

এ সময় লেখক ও গবেষক পাভেল পার্থ বলেন, ‘রাষ্ট্র তার বিভিন্ন এজেন্সির মাধ্যমে বিরোধ তৈরি করে রাখছে বনে বসবাসকারী আদিবাসীদের সঙ্গে। খাসিয়া জনগোষ্ঠীর মানুষ যে পদ্ধতিতে পানচাষ করে তা হতে পারত একটি ঐতিহ্যগত পদ্ধতি ও খাসি অধ্যুষিত এলাকা হতে পারত বিশেষ কৃষি ঐতিহ্য অঞ্চল। অথচ আজ এত বছর ধরে আমরা দেখছি কীভাবে এ ঐতিহ্যগুলোকে ধ্বংস করা হচ্ছে।’

কুষ্টিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ফারহা তানজীম তিতিল বলেন, ‘আদিবাসীরা শান্তিপ্রিয় মানুষ। তারা ভয় পাচ্ছে। তাদের সমস্যাগুলোর কোনো স্থায়ী সমাধান হয় না। তাছাড়া বনবান্ধব বনবিভাগ আমরা দেখতে পাই না কখনও। এক্ষেত্রে প্রশাসনের অসচেতনতা দায়ী। ঝিমাইপুঞ্জির রাস্তা চা বাগান অবরুদ্ধ করে রেখেছে। তাদেরকে সেখানে আসা যাওয়া করতে দেওয়া হয় না। জেলা প্রশাসক একদিন গিয়ে এ সমস্যার সমাধান করলেও পরে আবার বন্ধ করে দেওয়া হয়। খাসি তাদের সমস্যাগুলো নিয়ে বাইরে এসে বলতেও পারছে না। অনেকে বুঝতেও পারছে না।’ 

বৃহত্তর  সিলেট আদিবাসী অধিকার সুরক্ষা নাগরিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মো. আবুল হাসান বলেন, ‘মৌলভীবাজার জেলাতেই প্রায় ৮০টা খাসি পুঞ্জি আছে। সিলেটে আছে প্রায় ১০টি। এর মধ্যে শ্রীমঙ্গলের তিনটা পুঞ্জিতে তাদের লিজ ঠিকঠাক আছে। বাকিগুলোতে নেই। বিশেষ করে মৌলভীবাজারে এ সংকট তীব্র। গহীনে বসবাস করা এ গোষ্ঠীর কাছে এখানকার করা আইন ঠিকঠাক পৌঁছায় না। বনবিভাগ পুঞ্জির প্রধানদের নামে বেশি করে মামলা দেয়, যে মামলার কোনো প্রমাণ নেই। সেখানে তদন্তও হয় না। কিন্তু মামলার বোঝা তাদের বয়ে যেতে হয়। এজন্য প্রয়োজন আইন সংশোধন করা।’

তিনি বলেন, ‘খাসি জনগোষ্ঠী বংশ পরম্পরায় প্রাকৃতিকভাবে বন ব্যবস্থাপনা করছে। সেই বনকে টিকিয়ে রাখতে হলে বনের মালিকানা সেই জনগোষ্ঠীর কাছে রাখা দরকার।’

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী পারভেজ হাসেম বলেন, ‘বনে যারা বনবাস করছেন তারা আজ সেই বনে পরবাসী হয়ে আছেন। প্রশাসনের উচিত ভূমি লিজ দেয়ার ক্ষেত্রে দেখা উচিত যে এই বনের সঙ্গে কারা সংশ্লিষ্ট আছেন। প্রশাসন ভূমি লিজ দেয়ার ক্ষেত্রে বনবাসীদের গুরুত্ব না দিয়ে বন নিয়ে যারা মুনাফা লাভ করতে পারেন তাদেরকে গুরত্ব দেন।  ফলে তারা আগ্রাসী মনোভাব ও মুনাফার জন্য ট্যুরিজম সম্প্রসারিত করার জন্য ভূমি দখলের দিকে নজর দেন।’

বাপার নির্বাহী কমিটির সদস্য ফাদার যোসেফ বলেন, ‘মৌলভীবাজারে খাসি জনগোষ্ঠীকে উচ্ছেদকরণের যে প্রক্রিয়া সেটা দীর্ঘদিনের প্রক্রিয়া। সেই প্রক্রিয়া বর্তমানে প্রকট আকারে ধারণ করছে। তাদের নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে অর্থনৈতিক ও মানসিক পীড়ন দিয়ে সংকট তৈরি করা হচ্ছে।’

কাপেং ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপক হিরণ মিত্র চাকমা সবাইকে এই সব ঘটনার ফলো-আপ রাখার জন্য সবার প্রতি অনুরোধ করেন।

তিনি বলেন, ‘আদিবাসী এলাকায় যে ঘটনাগুলো ঘটছে তা কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। আদিবাসীদের কোনঠাসা করার জন্য মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানির ঘটনা এখন অহরহ হচ্ছে।’

এ সময় ডুলুকছড়া পুঞ্জির গোত্র প্রধান বিফোর সুঙ বলেন, ‘বারবার মামলা লড়তে গিয়ে আমাদের আর্থিক সংকটে পড়তে হচ্ছে। বাচ্চাদের পড়াশুনার খরচ দিতে পারছি না। ধারের চাপে জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে।’

অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন মানবাধিকারকর্মী ও কাপেং ফাউন্ডেশনের প্রকল্প সমন্বয়কারী হেলেনা তালাং।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলাদশে আদবিাসী ফোরামের ভূমি ও আইন বিষয়ক সম্পাদক উজ্জ্বল আজীম।

এ সময় অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন এএলআরডির কর্মকর্তা কিশোর কুমার তঞ্চঙ্গ্যা, ডুলুকছড়া পুঞ্জির আরপিলস মার্লিয়া, আদিবাসী ফোরামের সভাপতি অলীক মৃসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতা কর্মীরা।


শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা