× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

জাতীয় পাট দিবস

পাটের চাহিদা থাকলেও উৎপাদন কম সিরাজগঞ্জে

সিরাজগঞ্জ প্রতিবেদক

প্রকাশ : ০৬ মার্চ ২০২৩ ১৬:১৭ পিএম

আপডেট : ০৬ মার্চ ২০২৩ ১৬:৪৩ পিএম

ব্যক্তিগত উদ্যোগে আলেয়া জুট মিলস নামে চালু হয়েছে সিরাজগঞ্জের সাবেক কওমি জুট মিল। প্রবা ফটো

ব্যক্তিগত উদ্যোগে আলেয়া জুট মিলস নামে চালু হয়েছে সিরাজগঞ্জের সাবেক কওমি জুট মিল। প্রবা ফটো

একসময় সোনালি আঁশ নামে পরিচিত পাট এখন দেশ থেকে হারিয়ে যাওয়ার অবস্থায়। পাঁচ বছর ধরে ক্রমান্বয়ে সিরাজগঞ্জ জেলায় পাটের উৎপাদন কমতে শুরু করেছে। অথচ হিসাব অনুসারে ১০ বছর আগে জেলায় পাটের উৎপাদন তুলনামূলক বেশি ছিল। বাজারে পাটজাত পণ্যের ব্যবহার কম হওয়ার কারণে পাটের উৎপাদনমুখী হচ্ছেন না কৃষকরা। পাটের সঠিক দাম ও পাটের আঁশ ভেজানোর জন্য পুকুর অপর্যাপ্ততার কারণেও পাট চাষ থেকে বিমুখ হচ্ছেন তারা।

এ ছাড়া বাজারে সবক্ষেত্রে পাটজাত পণ্য ব্যবহার হচ্ছে না। কোনো ধরনের প্রচারণা না থাকায় পাটের বিপরীতে পলিব্যাগ ব্যবহৃত হচ্ছে। এটি পরিবেশের জন্যও ক্ষতিকর। তবে জেলা পাট কর্মকর্তা বলছেন, আগামী বছর থেকে পাটের আঁশ জাগ দেওয়ার একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়াও পাটপণ্য ব্যবহারে আইনের প্রয়োগ করা হচ্ছে প্রতিনিয়ত।

একসময়ের পাট নগরীখ্যাত সিরাজগঞ্জ আজ পাটবিহীন এলাকা। এখানে পৌর এলাকার রায়পুরে ১৯৬০ সালে কওমি জুট মিল তার যাত্রা শুরু করে। ১৯৭২ সালে মিলটি জাতীয়করণ করা হয়। পরে ২০০৭ সালে প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ করে দেওয়া হয়।

কওমি জুট মিলে প্রায় ৫ হাজার শ্রমিক কাজ করতেন। মিলটি বন্ধ হওয়ার পর  আবারও ২০১১ সালে এটি জাতীয় জুট মিল নামে নতুন করে উৎপাদন শুরু করে। পরে তা আবারও বন্ধ করার পর ২০২২ সাল থেকে ব্যক্তি মালিকানায় স্বল্প হারে উৎপাদন চলছে। মূলত মিলটিকে কেন্দ্র করেই সিরাজগঞ্জে পাট ব্যবসার ভিত শক্ত হয়েছিল। কৃষকরা উৎপাদন করত বেশি। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পাটের ব্যবহার কমার কারণে উৎপাদন কমতে শুরু করেছে।

জেলা কৃষি অফিসের হিসাব অনুসারে, গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ১৪ হাজার ২৫০ হেক্টর জমিতে ২৭ হাজার ৫৩৪ মেট্রিক টন পাট উৎপাদিত হয়। ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১৪ হাজার ৯০৫ জমিতে ২৩ হাজার ৪৯০ মেট্রিক টন পাট উৎপাদিত হয়। ২০২০-২১ অর্থবছরে ১৬ হাজার ৯১০ হেক্টর জমিতে ১৮ হাজার ৭৪০ মেট্রিক টন পাট উৎপাদিত হয়। ২০২১-২২ অর্থবছরে ১৫ হাজার ৮২০ হেক্টর জমিতে ৩৪ হাজার ২৩০ মেট্রিক টন পাট উৎপাদিত হয়। অথচ ১০ বছর আগে ২০১১-১২ অর্থবছরে জেলায় ২৩ হাজার ১৯০ হেক্টর জমিতে ৩৯ হাজার ৫৮৪ মেট্রিক টন পাট উৎপাদিত হয়েছে। গত কয়েক বছরে পাটের জমির পরিমাণ ও উৎপাদন কমেছে।

সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার কৃষক আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘পাট চাষের সময় সার পেতে সমস্যা হয়। তা ছাড়া শ্রমিক সমস্যা তো আছেই। বিশেষ করে পাটের আঁশ ছাড়ানোর জন্য পাট ভিজিয়ে রাখার পুকুরের স্বল্পতা তো রয়েছেই। অন্যের পুকুরে পাট ধুলে পানি নষ্ট হয়। মাছ মরে যায়। তাই বাধ্য হয়ে এখন আর পাট চাষ করি না।’

আরেক কৃষক জানান, পাট চাষের মৌসুমে শ্রমিক পাওয়া কষ্টকর হয়ে যায়। প্রায় ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকা মজুরি দিয়ে শ্রমিকদের কাজ করাতে হয়। এ ছাড়া সার ও বীজের সংকট তো আছেই। অথচ পাট বিক্রির সময় ১ হাজার ৮০০ থেকে ২ হাজার টাকায় প্রতি মণ পাট বিক্রি করতে হয়।

এদিকে বাজারে পাটজাত পণ্যের ব্যবহার কম হওয়ার কারণে মিলগুলোর উৎপাদিত পণ্যে বৈচিত্র থাকছে না। সাধারণত বাজারে পলিব্যাগের ব্যবহার হয়ে থাকে, যা পরিবেশ তথা মাটির উর্বরতার জন্য ক্ষতিকর। পলিথিন ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও সর্বত্রই এর ব্যবহার লক্ষ করা যায়।

সাধারণ ক্রেতারা বলছেন, বাজারে পাটজাত পণ্য পর্যাপ্ত থাকলে ব্যবহার করা যায়। তবে পাটের ব্যাগের দাম বেশি হওয়ায় ক্রেতা ও বিক্রেতারা পলিথিন ব্যাগ ব্যবহারেই স্বাচ্ছন্দবোধ করে। সেক্ষেত্রে সকলে সচেতন হওয়ার পাশাপাশি আইনের সঠিক প্রয়োগ করা হলে বাজারে পাটজাত পণ্যের ব্যবহার বাড়বে।

এদিকে সরকারিভাবে জাতীয় জুট মিল না চললেও সেখানে ব্যক্তি মালিকানায় পরিচালিত হচ্ছে আলেয়া জুট মিলস। আলেয়া জুট মিলসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার মো. আলাউদ্দিন বলেন, ‘পুরোদমে চালাতে না পারলেও স্বল্প পরিসরে আমরা মিলটি পরিচালনা করছি। এখানে প্রতিদিন ১ হাজার শ্রমিক বিভিন্ন সেক্টরে কাজ করছে। প্রতি মাসে ১৮-২০ হাজার বস্তা উৎপাদন করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, ‘একটি সিন্ডিকেট রয়েছে, তারা কৃষকের কাছ থেকে পাট কিনে বেশি দামে, বিক্রির লোভে সংরক্ষণ করে এবং পরে বিদেশে রপ্তানি করে। এ কারণে পাটের সংকট দেখা দেয়।’

এসব বিষয়ে জেলা পাট উন্নয়ন কর্মকর্তা নাজমুল হক বলেন, ‘পাটের উৎপাদন বাড়ানোর লক্ষ্যে ছয়টি উপজেলায় ১৩ হাজার ৫০ জন কৃষকের মাঝে সার ও বীজ দিয়ে সহযোগিতা করে আসছি। এ ছাড়াও পাঁচটি উপজেলার ২৪০ জন কৃষকের মাধ্যমে বীজ উৎপাদন করে থাকি। পাটজাত পণ্য ব্যবহারে বাজারে বিভিন্ন সময় ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান পরিচালনা করা হয়।’

তিনি বলেন, ‘পাটের আঁশ ছাড়ানোর জন্য পুকুর স্বল্পতা থাকায় আগামী বছর থেকে রিবন রেটিং পদ্ধতি চালু করা হবে। এ পদ্ধতিতে অল্প পানিতে কাচা পাট ভিজিয়ে উন্নতমানের আঁশ পাওয়া যায়।’ চলতি বছরের ৯ জানুয়ারি পাটকে কৃষিজাত পণ্য হিসেবে গণ্য করার ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা