পিরোজপুর প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৩ মার্চ ২০২৩ ১২:০০ পিএম
নাজিরপুরের বানিয়ারী গ্রামের জয়ন্তি বিশ্বাস তার চাষকৃত সূর্যমুখী পরিচর্যা করছেন। প্রবা ফটো
চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় পিরোজপুরের নাজিরপুরে সূর্যমুখী ফুলের আবাদ বাড়ছে। এ বছর সূর্যমুখীর আবাদ হয়েছে ৭৫ হেক্টর জমিতে, যা গত বছরের চেয়ে বেশি। কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, আবহাওয়া ও অনুকূল পরিবেশ থাকলে আগামী বছর এ আবাদের পরিমাণ ও উৎপাদন আরও বৃদ্ধি পাবে।
নাজিরপুরের বিভিন্ন ইউনিয়ন ঘুরে দেখা গেছে ৬-৭ ফুট লম্বা গাছের সবুজ পাতার উপরে হলুদ সূর্যমুখীর নয়নাভিরাম দৃশ্য। হেক্টরের পর হেক্টর জমিতে আবাদ করা এই হলুদ ফুল কৃষকের আশার আলো হয়ে তাকিয়ে আছে সূর্যের দিকে।
চৈত্র মাসে সূর্যমুখী ফুল তার আপন মহিমায় সৌন্দর্যের বিকাশ ছড়িয়ে মানুষের মনকে রাঙিয়ে তোলে। এ ফুলের তেল অত্যন্ত পুষ্টিকর ও ভিটামিন ‘এ’-সমৃদ্ধ এক ধরনের ভোজ্যতেল। একই সঙ্গে হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসের জন্য এই তেল বেশ উপকারী।
নাজিরপুর কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, নাজিরপুর উপজেলার মাটি যেমন উর্বর তেমনি কৃষকরাও পরিশ্রমী। কৃষকরা চলতি রবি মৌসুমে সূর্যমুখী ফুলের আবাদ করে একদিকে যেমন অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছেন, অন্যদিকে এ ফুলের আবাদে তারা পতিত জমির হাত থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারছেন।
কৃষি বিভাগ সূত্রে আরও জানা যায়, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে ‘হাইসান ৩৩’ জাতের এ সূর্যমুখীর চাষ শুরু হয় এবং ফুল আসার অন্তত চার মাসের মধ্যে অর্থাৎ এপ্রিল মাসের শেষ দিকে ফুলের বীজ পেকে যাওয়ার পরপরই তা উত্তোলনের উপযোগী হবে। গত বছরের চেয়ে এ বছর জমির আবাদ ও কৃষকের সংখ্যা প্রায় ২০০ জনে বৃদ্ধি পাওয়ায় আগামীতে সূর্যমুখী আবাদে আরও অনেক কৃষক এগিয়ে আসবেন, এমনটাই আশা করা হচ্ছে।
সূর্যমুখী ফুলের তেল অত্যন্ত পুষ্টিকর। তাই এ তেলে ওমেগা-৯, ওমেগা-৬ ও লিনোলিক-জাতীয় অ্যাসিড বিদ্যমান। এ ছাড়া শতভাগ ফ্যাটমুক্তসহ কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, পানি, ভিটামিন ‘এ’, ভিটামিন ‘ই’, ভিটামিন ‘কে’ ও মিনারেল রয়েছে; যা হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ এবং কিডনির জন্য বেশ উপকারী।
পুরুষের পাশাপাশি ওই এলাকার নারী কৃষকরাও সূর্যমুখী ফুলের চাষ করছেন। এ ফুল চাষে তারাও সাফল্য পেয়েছেন। সূর্যমুখী চাষি জয়ন্তি বিশ্বাস বলেন, অধিক ফলন ও লাভজনক হওয়ায় আমি গত বছরের চেয়ে এ বছর বেশি পরিমাণে সূর্যমুখীর চাষ করেছি। ভবিষ্যতে আমি আরও বেশি জায়গায় চাষ করার আশা রাখছি। আমি এ ফুল চাষ করে পরিবারের সবাইকে নিয়ে ভালোভাবে খেয়েপরে বেঁচে আছি।
নাজিরপুর উপজেলার মাটিভাঙ্গা ইউনিয়নের বানিয়ারী গ্রামের তেল ফসল কৃষক দলের সভাপতি মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, চার বছর ধরে সূর্যমুখী চাষ করছি। লাভবান হওয়ায় এ বছর ৪০ শতক জমিতে চাষাবাদ করেছি। অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছরের ফুল খুব ভালো হয়েছে। আমার আওতায় যত কৃষক রয়েছেন তাদের সবার ফুল ভালো হয়েছে। এ বছর আমরা আরও অধিক লাভবান হব বলে আশা করছি।
কৃষক মোহাম্মদ আলীম মোল্লা বলেন, উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য সরকার সূর্যমুখী ফুলের বীজ বিনামূল্যে বিতরণ করছে। বীজের মান ভালো হওয়ায় আমরা অধিক ফলন পেয়েছি এবং চলতি মৌসুমের ফসল বিক্রি করে লাভবান হতে পারব বলে আশা করছি। প্রতি বিঘা জমিতে আমাদের খরচ হয় ১২ হাজার টাকা আর লাভ হবে প্রায় ৩০ হাজার টাকা। ফুল পেকে গেলে এর বীজ বিক্রি করা হয় এবং মেশিনের সাহায্যে তেল বের করেও বিক্রি করা হয়। সূর্যমুখী ফুলের গাছ কাটার পর পাইকারদের কাছে এসব ফুলের শুকনা বীজ ও তেল বিক্রি করি। ১০০ কেজি শুকনা বীজ মেশিনে ভাঙালে তা থেকে ৪০ থেকে ৪৫ কেজি খাঁটি সূর্যমুখী তেল পাওয়া যায়। প্রতি মণ তেল বিক্রি হয় ২৫ থেকে ২৮ হাজার টাকায়, যা খরচের চেয়ে দিগুণেরও বেশি লাভ হয়।
নাজিরপুর উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা বিজন কৃষ্ণ হালদার বলেন, সরকারি উদ্যোগে এ অঞ্চলের পতিত জমিতে সূর্যমুখী ফুলের আবাদ বৃদ্ধির প্রকল্পে কৃষকদের বিভিন্ন ধরনের প্রণোদনা দেওয়া হয়। এর মধ্যে রয়েছে বিনামূল্যে বীজ, সার বিতরণ ও নগদ অর্থ সহায়তা। সরকার সূর্যমুখী চাষে কৃষকদের উৎসাহ বৃদ্ধির লক্ষ্যে আরও কৃষি প্রণোদনা দিতে আগ্রহী বলে জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, যদি এ অঞ্চলে ধান চাষের পরিবর্তে পতিত জমিতে প্রতি বছর সূর্যমুখী ফুলের আবাদ বৃদ্ধি করা যায় তাহলে বিদেশ থেকে আমদানিকৃত তেলের ওপর চাপ কমবে ও দেশীয় অর্থের সাশ্রয় হবে।