ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৪ মার্চ ২০২৩ ১৪:২৩ পিএম
আপডেট : ২৪ মার্চ ২০২৩ ১৬:২৬ পিএম
ফুলবাড়ী উপজেলায় ধান ও চাল সংগ্রহে ফিতা কেটে উদ্বোধন করা হয়। ফাইল ছবি
দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে আমন ধান-চাল সংগ্রহ অভিযানে চালের কোটা পূরণ করতে পারলেও ধান কেনার পরিমাণ একেবারে শূন্যের কোটায়। সরকারি গুদামে চাল কেনার লক্ষ্যমাত্রা ২ হাজার ৭৪৯ টন থাকলেও অতিরিক্ত ১ হাজার ৫৭০ দশমিক ৩৩০ টন কিনতে পেরেছে। ফলে এখন উপজেলা খাদ্য বিভাগ চাল সংগ্রহ করেছে ৪ হাজার ৩১৯ দশমিক ৪৪০ টন।
তবে এর বিপরীত চিত্র দেখা গেছে ধান সংগ্রহে। উপজেলা খাদ্য বিভাগ ১ হাজার ৬ টন ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নিলেও সংগ্রহ হয়েছে মাত্র এক টন। ফলে ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারেনি উপজেলা খাদ্য বিভাগ।
উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় ১ হাজার ৬ টন ধান ও ৪ হাজার ৩১৯ দশমিক ৪৪০ টন চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা হাতে নেওয়া হয়। ৪২ টাকা কেজি দরে চাল ও ২৮ টাকা কেজি দরে ধান কেনার অভিযান শুরু হয় গত বছরের ২৯ নভেম্বর। গত ৭ মার্চ শেষ হয়েছে ধান ও চালের সংগ্রহ অভিযান। চাল সংগ্রহ অভিযানে উপজেলার খাদ্য বিভাগের নিবন্ধিত ১৪৩ জন মিল মালিকের মধ্যে খাদ্য বিভাগের সঙ্গে চুক্তি হয়েছিলেন ৯১ জন। নির্ধারিত সময়সীমা শেষে চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেলেও ধানের গোলা শূন্য রয়েছে। সরকারের কাছে ধান বিক্রিতে অনাগ্রহের পেছনে কৃষকরা নানা ধরনের জটিলতার কথা জানিয়েছেন।
উত্তর রঘুনাথপুর গ্রামের কৃষক মহিদুল ইসলাম বলেন, ‘সরকারি গুদামে ধান দিতে গেলে নানা সমস্যায় পড়তে হয়। খাদ্য বিভাগ যেভাবে ধান সংগ্রহ করে, কোনো কৃষক সেভাবে ধান গুদামে দিতে পারবে না। ধানের দাম পরিশোধ করা হয় ব্যাংক চেকের মাধ্যমে। সেই চেক নিয়ে টাকা তুলতে দৌড়ঝাঁপ করতে হয় ব্যাংকে। তা ছাড়া সরকারের ক্রয়মূল্যের চেয়ে বাজারে ধানের দাম বেশি।’
চকচকা গ্রামের কৃষক জিল্লুর রহমান বলেন, ‘সরকার ধান কেজিপ্রতি ২৮ টাকা দরে কিনছে। এই ধান যদি ৪০ টাকায়ও কেনে তবুও অনেক কৃষক গুদামে ধান দিতে পারবে না। কারণ গুদামে ধান বিক্রি করতে গেলে অনেক ঝামেলা পোহাতে হয়।'
নাম প্রকাশ না করার শর্তে উপজেলার খাদ্য বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, সরকার ধান কেনার যে পদ্ধতি চালু করেছে, তাতে ধান কেনার আগে মোবাইল অ্যাপে কৃষককে নিবন্ধন করে আবেদন করতে হয়। নিবন্ধিত কৃষকের মধ্যে লটারি হয়। লটারিতে নির্বাচিত কৃষকরাই শুধু নির্ধারিত পরিমাণ ধান গুদামে বিক্রি করতে পারেন। এজন্য সঙ্গে নিতে হয় জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) ও কৃষি কার্ডের ফটোকপি। এরপর ধানের টাকা তাদের ব্যাংক হিসাব নম্বরে দেওয়া হয়। অর্থাৎ ব্যাংক অ্যাকাউন্টও থাকতে হয় কৃষকদের। সেই অ্যাকাউন্ট খুলতে ছবি, এনআইডি, নমিনির ছবি ও এনআইডির প্রয়োজন হয়। এসব কারণেই গুদামে ধান দিতে অনীহা রয়েছে কৃষকদের।
উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক দপ্তরের খাদ্য পরিদর্শক মো. নাসিম আল আকতার বলেন, ‘চাল কেনার ক্ষেত্রে সফলতা অর্জিত হয়েছে। কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি ধান কেনার জন্য লটারির মাধ্যমে ৪৩৭ জন কৃষক নির্বাচিত হলেও খোলাবাজারে দাম বেশি পাওয়ায় কৃষকরা গুদামমুখী হননি। খাদ্য বিভাগের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ না হওয়া ৫৫ জন মিল মালিকের তালিকা খাদ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। মন্ত্রণালয় থেকে তাদের ব্যাপারে যে সিদ্ধান্ত আসবে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’