মাধবপুর (হবিগঞ্জ) প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২১ আগস্ট ২০২৩ ০৯:১৩ এএম
আপডেট : ২৩ আগস্ট ২০২৩ ১৯:১৯ পিএম
মাধবপুরের সীমান্তবর্তী গোপিনাথপুর গ্রামের বদু মিয়া হলুদ তরমুজ চাষ করে সফলতা পেয়েছেন। প্রবা ফটো
হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী চৌমুহনী ইউনিয়নের গোপিনাথপুর গ্রামের আব্দুল বাছির বদু মিয়া। পড়াশোনা করেছেন সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত। সংসারের দায়িত্ব ঘাড়ে চাপলে নেমে পড়েন কৃষিকাজে। প্রথমে পারিবারিক এক একর পতিত জমিতে শুরু করেন ধান চাষ। পাশাপাশি শুরু করেন সবজি চাষও। এলাকায় পরিচিতি পান একজন আদর্শ চাষি হিসেবে। এবার সফলতা পেয়েছেন বারোমাসি তরমুজ চাষে। তার চাষ করা হলুদ রঙের এ তরমুজ দেখতে যেমন সুন্দর, খেতেও সুস্বাদু। আর অসময়ে তরমুজ হওয়ায় দামও পাচ্ছেন ভালো।
রাজধানীর অভিজাত হোটেলগুলোতে চীন থেকে আমদানি করা নতুন জাতের এ তরমুজের রয়েছে প্রচুর চাহিদা। তাই বারো মাসই এ জাতের তরমুজ বাণিজ্যিকভাবে চাষ করছেন বদু মিয়া। প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকা থেকে কৃষকরা তার খামার দেখতে আসেন। তার দেখাদেখি শত শত কৃষক এ তরমুজ চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। চাষাবাদের বাস্তব অভিজ্ঞতা নিতে অনেকে তার কাছ থেকে পরামর্শও নিচ্ছেন।
বদু মিয়া জানান, ২০২১ সালে প্রথম তার মাথায় আসে বাণিজ্যিকভিত্তিতে হলুদ তরমুজ চাষ করার কথা। তরমুজের বীজ চীন ও ভারত থেকে আমদানি করে শুরু করেন চাষাবাদ। এ বছর তিনি চার একর জমিতে চাষাবাদ করেছেন। এখানকার মাটি ও আবহাওয়া এ-জাতীয় তরমুজ চাষের উপযোগী। তানিয়া মনিয়া, ব্ল্যাকবেরি, সামমামÑ এই তিন জাতের তরমুজে তার ক্ষেত ভরে গেছে। জমি চাষ, বীজ, সার ও পরিচর্যাসহ প্রতি বিঘায় খরচ পড়েছে ১৫ লাখ টাকা। উৎপাদিত তরমুজ প্রায় ৩০ লাখ টাকা বিক্রি করতে পারবেন। এসব তরমুজ রাজধানীতে সরবরাহ করা হয়। মৌসুমভেদে প্রতি কেজি তরমুজ ১০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি হয় বলেও জানান বদু মিয়া।
তিনি আরও জানান, তার সফলতা দেখে অনেক কৃষক লাভজনক বারোমাসি তরমুজ চাষ করছেন। মাধবপুরে ধর্মঘর, চৌমহনী, বহরা ইউনিয়নের প্রায় ২০০ কৃষক তার দেখাদেখি তরমুজ চাষ করে সফল হয়েছেন। তিনি জাতীয় ও বিভিন্ন কৃষিজাত কোম্পানি থেকে সফল কৃষক হিসেবে পুরস্কৃতও হয়েছেন।
স্থানীয়রা জানান, উঁচু এলাকায় প্রায় অধিকাংশ সময় জমি পতিত থাকত। কৃষক বদু মিয়ার নতুন জাতের তরমুজ ও অন্যান্য সবজি চাষবাদের সংবাদ কৃষি বিভাগের নজরে এলে ওই এলাকায় বিএডিসির উদ্যোগে শুকনো মৌসুমে সেচের জন্য সরকারিভাবে গভীর নলকূপ ও বিদ্যুতের ব্যবস্থা করা হয়। ফলে এখন শুষ্ক মৌসুমেও কৃষকরা গভীর নলকূপ থেকে সেচ সুবিধা পাচ্ছেন এবং সহজে চাষাবাদ করছেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল্লা আল মামুন জানান, বদু মিয়ার নতুন জাতের হলুদ তরমুজ এই এলাকার কৃষিতে নতুন দিগন্তের সূচনা করেছে। তার দেখাদেখি কৃষকরা এ জাতের তরমুজ ও অন্যান্য ফসল চাষ করছেন। উপজেলা কৃষি বিভাগ থেকে বদু মিয়াসহ অন্য কৃষকদের সব ধরনের সহযোগিতা ও পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।