× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

বনভূমি দখলের খেলা বন্ধ হবে কবে

ফসিহ উদ্দীন মাহতাব

প্রকাশ : ১৭ অক্টোবর ২০২৩ ১১:৪৭ এএম

আপডেট : ১৭ অক্টোবর ২০২৩ ১২:০১ পিএম

ফাইল ফটো

ফাইল ফটো

বনের ওপর মানুষের আগ্রাসন থেমে নেই। দেশের বিভিন্ন স্থানে কতিপয় সুযোগসন্ধানী ব্যক্তি সুকৌশলে জবরদখল করছে বনাঞ্চলের ভূমি; বনভূমিতে গড়ে উঠছে বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো, বেসরকারি সংস্থার (এনজিও) বিভিন্ন স্থাপনা। কর্তৃপক্ষের দুর্বলতায় বেদখল হয়ে গেছে সরকারি মূল্যবান বনভূমি। এমন প্রেক্ষাপটে বনভূমি দখলদারদের তালিকা প্রস্তুতের উদ্যোগ নেয় সরকার। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় থেকে একটি তালিকা প্রস্তুতও করা হয়। এতে বলা হয়, তাদের নাম প্রকাশ করা হবে। কিন্তু রহস্যজনক কারণে গত পাঁচ বছরেও সেই তালিকা আর প্রকাশ করা হয়নি। আদৌ হবে কি না, দায়িত্ব নিয়ে সে কথাটি কেউই বলতে পারছেন না। 

সব সরকারের আমলেই ক্ষমতাসীনদের ছত্রছায়ায় বন বিভাগের সম্পত্তি পারস্পরিক যোগসাজশে ভাগ-বাঁটোয়ারা করা হয়েছে। এ ধারা অব্যাহত। অভিযোগÑ শিল্পপতি নামধারী ভূমিদস্যু থেকে শুরু করে সংসদীয় কমিটির অনেক প্রভাবশালী সদস্যও এই দখলবাজিতে যুক্ত। এ নিয়ে সংসদীয় কমিটিতে বাগ্‌বিতণ্ডার ঘটনাও ঘটেছে। সীমিত জনবল নিয়ে বন কর্তৃপক্ষ চেষ্টা করছে প্রভাবশালীদের রুখতে। কিন্তু পেরে উঠছে না। 

এ প্রসঙ্গে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার এমপি বলেন, ‘বনের জমি দখল এই প্রথম নয়। কিন্তু বেদখল জমি উদ্ধারে যে ধরনের জনবল ও সরঞ্জাম দরকার, তা বন বিভাগের নেই। বন বিভাগের নিয়মিত কার্যক্রম পরিচালনার জন্যও জনবল সংকট রয়েছে। জমি উদ্ধার করতে গিয়ে খুনের ঘটনাও ঘটছে। স্থানীয় প্রশাসনিক সহায়তা পেলেও তা সার্বক্ষণিক মেলে না বন বিভাগ থেকে।’ তিনি বলেন, ‘যারা জমি দখল করে, তারা কেউ সাধারণ নয়Ñ অসাধারণ। এদের মধ্যে কেউ কেউ সরকারি ও বিরোধী দলের নেতা, কেউ প্রভাবশালী শিল্পপতি ও ব্যবসায়ী। তাদের দখল করা জমি উদ্ধারে নির্দেশনা দেওয়া হলেও বাস্তবায়ন হয় না।’ 

এ বিষয়ে বন ও পরিবেশ বিষয়ক সংসদীয় কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘বিভিন্ন ক্যাটাগরির বনের জমি দখল হয়ে আছে। মন্ত্রণালয়কে আগে সংরক্ষিত বনের জমি উদ্ধারে পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে। এটা শুরু হলে অন্য দখলদাররা সতর্ক হয়ে যাবে। সরকারের লক্ষ্য বেদখলে থাকা বনভূমি উদ্ধার। গেজেটভুক্ত সংরক্ষিত বন দখলে রাখলেও দখলদাররা আদালতে গিয়ে কিছু করতে পারবে না।’ 

পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জনবল সংকটের বিষয়টি খোঁড়া অজুহাত। প্রভাবশালীদের সঙ্গে দ্বন্দ্বে না পেরে ওঠার কারণে বন বিভাগের জমি বেদখল হচ্ছেÑ কর্তৃপক্ষের এমন যুক্তিও বিশ্বাসযোগ্য নয়।

দখলদার ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান ৮৮ হাজার ২১৫

সারা দেশে বন বিভাগের মোট জমি ৩৭ লাখ ৭১ হাজার ১২৪ একর। এর মধ্যে তিন পার্বত্য জেলায় (রাঙামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি) রয়েছে ১৭ লাখ ১৬ হাজার একর জমি। বন অধিদপ্তর নয়, পার্বত্য এলাকার বনভূমিকে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে সেখানকার জেলা প্রশাসকরা। নিয়মিত অভিযান না চলায় পার্বত্য এলাকায় বেশিরভাগ বনভূমি বেদখল হয়ে গেছে। গত ২০০৭ সালে সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে বন বিভাগের বেদখল জমি উদ্ধারে অভিযান শুরু হয়। তবে সরকার পরিবর্তনের পর অভিযানে ভাটা পড়ে।

জবরদখল হওয়া আড়াই লাখের বেশি বনভূমির মধ্যে সিলেট বন বিভাগে ৬৫ হাজার ১১৯ একর, চট্টগ্রাম বিভাগীয় বন বিভাগে ৫০ হাজার ৬৮২ একর, উত্তরাঞ্চলের সাত জেলায় (দিনাজপুর, নওগাঁ, রংপুর, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী, ঠাকুরগাঁও ও পঞ্চগড়) ১৩ হাজার ৬৬৫ একর বনভূমি, গাজীপুরে ২৫ হাজার ৫৭০ একর, তিন পার্বত্য জেলায় প্রায় ১ লাখ ২ হাজার ৭৮০ একর বনভূমি বেদখল হয়ে গেছে। ভূমিদস্যুদের সঙ্গে বন বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজশ দীর্ঘদিনের। 

দখলীয় জমি নিয়ে আদালতে একাধিক মামলাও রয়েছে। সারা দেশে বনভূমির দখলদার ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৮৮ হাজার ২১৫। শুধু গাজীপুরেই একটি বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান, বেসরকারি সংস্থা (এনজিও)সহ ৫৯টি প্রতিষ্ঠান আটটি মৌজার বনভূমি দখলে রেখেছে। কেউ কেউ মার্কেট ও বড় শিল্পস্থাপনা গড়ে তুলে বছরের পর বছর দখল করে রেখেছে। যদিও সরকার উদ্ধার অভিযানের মাধ্যমে প্রতিবছর কিছু কিছু বনের জমি উদ্ধার করছে। সেখানে বন অধিদপ্তরের বনায়ন কার্যক্রম চলছে। 

বন বিভাগের জমি জবরদখলের ক্ষেত্রে স্থানীয় ভূমি অফিস ও বন বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজশ রয়েছে। জাল দলিল বানিয়ে দখলীয় জমিকে নিজের হিসেবে দেখিয়ে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান বানিয়েছেন কেউ কেউ। সেই জমি দেখিয়ে ঋণ নিয়েছে ব্যাংক থেকে। অনেকেই আইনি প্যাঁচে বছরের পর বছর বনের জমি অবৈধ দখলে রেখেছে। বেদখলে থাকা সংরক্ষিত বনভূমি উদ্ধারে সরকার আইনি লড়াইয়ে থাকায় উদ্ধার কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।

যা বলছেন বিশেষজ্ঞরা

পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সাবেক সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল বলেন, দেশের সুষম পরিবেশ বজায় রাখার জন্য বন বিভাগের গুরুত্ব অপরিসীম। বলা হয়, দেশে বন আছে ১৫-১৭ শতাংশ। অথচ এটি মাত্র ৫-৭ শতাংশ। দেশের বন ও প্রাকৃতিক পরিবেশকে ইতোমধ্যে ধ্বংস করা হয়েছে। তারপরও বন দখলপ্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে। 

তিনি বলেন, বন সংরক্ষণে যারা দায়িত্বে, তারা একে রক্ষা না করতে পারলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জবাবদিহিতার জায়গায় আনা উচিত। বন ও বনায়ন ভিন্ন জিনিস। প্রাকৃতিক বন ধ্বংস হয়ে গেলে সেটা আর পূরণ করা যায় না। তাই প্রাকৃতিক ভারসাম্য, জলবায়ুর ক্ষতির প্রভাব মোকাবিলায় বন সংরক্ষণ করতে হবে। পাশাপাশি বন সংরক্ষণের জন্য দক্ষ জনবল নিয়োগ করে সক্ষমতা বাড়াতে হবে। না হলে সবাই ক্ষতি ও ঝুঁকির মধ্যে পড়বে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আবদুর রব বলেন, ‘প্রাকৃতিক পরিবেশ বজায় রাখতে হবে। জীববৈচিত্র্যকে ঠিক রাখতে নতুন বনায়ন ও বৃক্ষ রোপণের আওতা বাড়াতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘বন যত নিধন ও দখল হবে, (শিল্পকারখানা বা বসতি) ততই দেশের পরিবেশের জন্য হুমকি বাড়বে। বন সংরক্ষণের জন্য সরকারের পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। এর জন্য মানুষকে সচেতন করতে হবে। কারণ জীববৈচিত্র্যকে রক্ষার জন্য বনের প্রয়োজন।’

দখলদারদের তালিকা প্রকাশ হয়নি 

পাঁচ বছর আগে বনভূমি দখলদারদের তালিকা প্রকাশের উদ্যোগ নিয়েছিল সরকার। এ লক্ষ্যে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় থেকে একটি তালিকা প্রস্তুত করা হয়। তালিকা প্রকাশ করা হবে বলে ঘোষণাও দেওয়া হয়। পাশাপাশি দখলদারদের সাত দিনের মধ্যে সকল স্থাপনা সরিয়ে নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্টদের নোটিস দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। বলা হয়, নির্দেশনা না মানলে বিভাগীয় কমিশনার ও ডিসিদের সমন্বয়ে উচ্ছেদ অভিযান চলবে। কিন্তু বাস্তবে তা আর হয়নি।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা