× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

মানুষ-পাখির মিতালি যে গ্রামে

শাহিনুর সুজন (রাজশাহী) চারঘাট

প্রকাশ : ০৪ মার্চ ২০২৪ ০৯:৫৭ এএম

আপডেট : ০৪ মার্চ ২০২৪ ১০:৪৩ এএম

রাজশাহীর চারঘাটের সাদিপুরে পাখিদের কিচিরমিচির শব্দে ঘুম ভাঙে গ্রামের মানুষের। প্রবা ফটো

রাজশাহীর চারঘাটের সাদিপুরে পাখিদের কিচিরমিচির শব্দে ঘুম ভাঙে গ্রামের মানুষের। প্রবা ফটো

পাখিদের অভয়ারণ্য হয়ে উঠেছে রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার সরদহ ইউনিয়নের সাদিপুর গ্রাম। পাখিদের কিচিরমিচির শব্দে ভোরে ঘুম ভাঙে গ্রামের মানুষের। আর প্রতিদিন এসব পাখি দেখতে আসে আশপাশের শত শত মানুষ। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শত বছরের অধিক সময় গ্রামের বাঁশবাগানসহ বিভিন্ন গাছে বাসা বাঁধে বিভিন্ন জাতের পাখি। এলাকাটি মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশ হওয়ায় পাখিদের অভয়ারণ্য হয়ে উঠেছে।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সাদিপুর গ্রামে প্রায় ১০ একর জায়গাজুড়ে বাঁশবাগান রয়েছে। সেখানে রেয়েছে বিলুপ্তপ্রায় কালো পানকৌড়ি, শামুক খোল, সাদা বক, জ্যাঠা বক, আম বক, কানি বক, শালিক, দোয়েল, বুলবুলি, বাবুই, ঘুঘু, ডাহুক, কোকিল, টুনটুনি, কালামুখ, দেশি গাঙচষা, পালাসি, বাংলা শকুন, রাতচোরাসহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখির বাস। ভোরে পাখিগুলো উড়ে খাবারের সন্ধানে চলে যায় আশপাশে খোলা মাঠে। সন্ধ্যায় আবার ফিরে আসে নীড়ে। 

বছর বছর বেড়েই চলেছে পাখির সংখ্যা। সকাল-সন্ধ্যায় ঝাঁকে ঝাঁকে পাখির কোলাহলে মুগ্ধতা ছড়ায় মানুষের মনে। সরেজমিনে দেখা গেছে, গ্রামের বিভিন্ন বাড়ির বাঁশ ঝাড়, গাছ-গাছালি যেন পাখিদের এক একটি স্বর্গরাজ্য ও অভয়াশ্রম। চারপাশে শুধু পাখিদের কোলাহল আর কিচিরমিচির শব্দ। পানকৌড়ি, সাদা বক, রাতচোর পাখিরা বাঁশ বা বিভিন্ন গাছের চূড়ায় বসে ডানা ঝাপটায়। আবার মাথার ওপর দিয়ে দুয়েক চক্কর দিয়ে এসে গাছের চূড়ায় বসে। 

কোনোটা গাছের এক ডাল থেকে অন্য ডালে, আবার কোনোটা বাঁশের এক কঞ্চি থেকে অন্য কঞ্চিতে, এক গাছ থেকে অন্য গাছে নির্বিঘ্নে উড়ছে। পাখির বাসার ভেতর থেকে ছানা শব্দ করে ডাকে। তাদের খাওয়াতে ব্যস্ত মা-পাখিরা। পাখিদের কোনোটি বাসা বাঁধছে আপন মনে, আবার কোনোটি ডিমে তা দিচ্ছে। মানুষের সঙ্গে মিতালি করে নিরাপদে ও খুব কাছাকাছি বসবাস করছে পাখিরা। গ্রামের বাসিন্দাদেরও পাখিদের প্রতি ভালোবাসা তুলনাহীন। নিজ চোখে না দেখলে বোঝা যাবে না কতটা নিবিড় বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছে মানুষ ও পাখির মধ্যে। 

অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক ফজলুল হোসেন বলেন, আমরা ছোট থেকে দেখে আসছি এমন পাখির কোলাহল। আমার দাদারাও দেখেছে। সে হিসেবে শত বছর হবে পাখিদের অবাধ বিচরণ। তবে পাখিগুলো দেখতে খুবই ভালো লাগে। এরা দিন-রাত প্রায় সব সময় কিচিরমিচির করলেও আমাদের কোনো অসুবিধা হয় না। সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এলাকাটি পাখির অভয়ারণ্য হিসেবে পরিণত হবে।

মাসুদ, সাইদুর নামে দুজন জানান, পাখিরা আশপাশের বাড়ির আম, কাঁঠাল, লিচু, রেইনট্রি, নিমসহ বিভিন্ন গাছের অনেক নতুন ডাল এবং বাঁশের মাথা ভেঙে ফেলে। বিষ্ঠার দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে। এত যন্ত্রণার পরেও সবাই পাখিদের খুব ভালোবাসে। ঝড়-বৃষ্টি হলেই পাড়ার যুবকরা ছুটে যায় বাঁশবাগানে। পাখির ছানা পড়ে থাকতে দেখলেই নীড়ে তুলে দিয়ে আসে। পাখি কাউকে শিকার করতে দেওয়া হয় না। 

সরদহ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান হাসানুজ্জামান মধু বলেন, পাখি শিকার এবং তাড়িয়ে না দেওয়ার বিষয়ে সচেতন করে আসছি। এ ছাড়া সরকারি উদ্যোগে পাখি সুরক্ষার ও সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। এই গ্রামকে পাখিদের অভয়াশ্রম হিসেবে গড়ে তুলতে উদ্যোগ নেওয়া উচিত। এতে করে পরিবেশের ওপর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।’

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) চারঘাট উপজেলার সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘এ অঞ্চলের বড় বড় গাছপালা ও ফসলের মাঠ উজাড় করে পুকুর খনন করা হচ্ছে, অতিমাত্রায় কীটনাশক ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে পাখিরা খাদ্য ও বাসস্থান সংকটে পড়েছে। এমন প্রতিকূল অবস্থার মধ্যেও সাদিপুর এলাকায় এত পাখির কোলাহল এই উপজেলার জন্য কিছুটা স্বস্তিকর।’

উপজেলা বন কর্মকর্তা (বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ) মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘চারঘাটের বিভিন্ন এলাকায় পাখিরা এসে প্রজনন ঘটায়। আমবাগানসহ পুরোনো গাছগুলোতে আবাস গড়ে তোলে। আমরা এ বিষয়ে প্রতিনিয়ত খোঁজখবর রাখছি। পাখিদের নিরাপদ আশ্রয় নিশ্চিত করতে গাছ লাগানোসহ নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা