আব্দুল্লাহ আল মামুন
প্রকাশ : ১৭ জানুয়ারি ২০২৩ ১৩:৪৬ পিএম
নিঃশ্বাসের মতো সরল সত্য হয়ে চারপাশে খেলা করছে আমাদের মনের বেখেয়ালে ঘটে যাওয়া হাজারো ভুলের উদাহরণ। ভুলের অন্তহীন এ রাজ্য থেকে আমরা বেরিয়ে আসতে চাই। অথচ আমরা পাতালপুরীতে বন্দি হয়ে আছি যেন, বেরোতে পারি না; ছটফট করে মরি; এভাবে বেঁচে থাকাটা অর্থহীন হয়ে যায়। আমরা আশায় থাকি, কেউ উদ্ধার করতে আসবে আমাদের।
ভুলের সাম্রাজ্য ছেড়ে পৃথিবীর আলো-বাতাস-রোদ গায়ে মেখে আমরা নতুন একটি ভোরের স্বপ্নে বুঁদ হয়ে থাকব- এমন আশা সবারই। কিন্তু মশাল জ্বেলে কেউ এগিয়ে আসে না। আশায় থাকতে থাকতে আমরা ঘুমিয়ে পড়ি, ভুলের কালো চাদর গায়ে জড়িয়ে। এ চাদর এমনভাবে জড়িয়ে যাচ্ছে যেন আর ফিরে আসতে পারি না।
এই যে এত এত ভুল, এত এত ভ্রান্তি তার উৎস কোথায়? কেন ঝরনার জলের মতো পাহাড়ের শরীর বেয়ে নেমে আসে এসব ভুল? কোন বাতাসের গায়ে ভেসে ফুলের রেণুর মতো ছড়িয়ে পড়ে চারপাশে ভুলগুলো? প্রশ্ন আছে কিন্তু উত্তর জানা নেই। যদি বলি, আমাদের জীবনের মতোই সরল ও সত্য এসব ভুল; যা আমাদের তাড়িয়ে বেড়ায়, অস্থির করে তোলে। দম আটকে ফেলতে চায়। তবে অবাক হওয়ার কিছু নেই।
ভুল আর সফলতা, সে তো মুদ্রার দুই পিঠের মতোই বর্তমান। জীবনে সফলতার জন্য চাই উদ্যম, বিশ্বাস আর কর্মনিষ্ঠা। ভুল থেকে শিক্ষা নিয়েই তো আমরা এগিয়ে যাব সঠিক পথে। ভুলকে যদি অন্ধকারের সঙ্গে তুলনা করি, তবে এ ভুলের পরই পথের শেষে দেখা মিলবে আলোর। সেই আলোর নামই তো সফলতা।
তবু যদি ব্যর্থতা এসে ধরা দেয়, নষ্ট করে দিতে চায় পরিকল্পনা; আমরা যেন সেই ব্যর্থতাকে ভুল ভেবে দূরে সরে না যাই জীবনের মহাসড়ক থেকে। ছোট্ট ছোট্ট ভুলগুলোই আমাদের এগিয়ে নিয়ে যাবে। আমাদের সঠিক পথের দিশা দেবে। যত ভুল ঘটবে কাজে, ততই ফুল ফুটবে জীবনে।
মনে রাখতে হবে, প্রতিদিনকার ছোট ছোট ভুলের মাশুল দিতে গিয়ে যেন পিছিয়ে না পড়ি। ভুলের মানচিত্রে যেন ব্যর্থতারই নাম লেখা না থাকে। ভুল হোক, কারণ ভুলই শেখাবে, ভুলই জ্বালাবে আলো।
তবে ভুলের হাত থেকে বেঁচে থাকতে জানাও জরুরি। সেজন্য প্রয়োজন একটু সতর্কতা আর নিজের প্রতি, চারপাশের মানুষের প্রতি, নিজের কাজের প্রতি একটুখানি বাড়তি মনোযোগ। যারা ভুল করে তারাই পায় সত্যের দেখা। রবিঠাকুর বলেছেন, ‘ভুল করিবার অধিকার যাহার নাই, সত্যকে আবিষ্কার করিবার অধিকারও সে পায় নাই। পরের শত শত ভুল জড়ভাবে মুখস্থ করিয়া রাখার চেয়ে সচেষ্টভাবে নিজে ভুল করা অনেক ভালো। কারণ যে চেষ্টা ভুল করায় সেই চেষ্টাই ভুলকে লঙ্ঘন করাইয়া লইয়া যায়।’
একান্তই যদি নিজের ভুলের মাশুল দিতে গিয়ে হতে হয় হয়রান, তবে আপন মানুষের কাছেই আমরা পাব আশ্রয় আর আশার ঠাঁই। তারাই জোগাবে সাহস, তারাই দেবে উদ্যম। এই মানুষগুলো চিনতে হবে। তাদের চিনতে ভুল করলেই যে অগ্নিচুল্লির মতো ব্যর্থতাগুলো গিলে খাবে।
ভুল শুধরে নিতে প্রিয় মানুষগুলো আর প্রিয় মুহূর্তের কথা ভেবে শক্তি সঞ্চয় করব মনে। শপথ করব, যেন আগামীর পথচলায় ভুলগুলো আবার ফিরে আসতে না পারে তার কালো পতাকার ছায়া উড়িয়ে। প্রতিটি দিন, প্রতিটি মুহূর্ত যেন শুরু করতে পারি ভুলের সীমানার বাইরে থেকে।
হে ভুল, হে ভ্রান্তি, হে সাফল্য, হে ব্যর্থতা- তোমরা তো আমাদের চারপাশ, আমাদের সময়, আমাদের বর্তমানের মতোই বাস্তব। তোমরা তো একে অন্যের পরিপূরক। তোমরাই জীবনকে সুন্দর করে তুলতে আমাদের হাত ধরে নিয়ে যাও সুন্দরের কাছে, সত্যের কাছে। যেখানে গেলে মনে হয়, এই মুহূর্তের জন্যই তো এত কষ্ট, এত পরিশ্রম। এই তো প্রাপ্তি, এই তো অর্জন।
আমরা আশায় বাঁধব বুক। নিজেদের কারণে ঘটে যাওয়া ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে নতুন শুরুর প্রত্যয় মনের গহিন কোণে লালন করব, সফলতার সোনার চাবি হাতে না পাওয়া পর্যন্ত। এভাবেই একদিন তিক্ত ভুলগুলো ভবিষ্যতের পাথেয় হয়ে থাকবে। এ ভুলগুলোই যেন একদিন আমাদের প্রিয় স্মৃতিতে পরিণত হয়।
সবশেষে বলি, বারান্দায় টবে লাগানো গোলাপের চারা, যাকে অল্প অল্প করে শিশুর মতো ভালোবাসা দিয়ে, জল দিয়ে, ঝোড়ো হাওয়ার কবল থেকে রক্ষা করে দিনের পর দিন লালন করি আমরা। সেই গোলাপের চারার মতো যার কলিতে একদিন ফুল ফুটবে, সেই ফুল দেখে আমরা আনন্দের সৌরভ নিয়ে পৃথিবীর বুকে নেমে আসব, সেই ফুলের সৌরভে সুবাসিত হয়ে যাবে চারপাশ।
আমরা বিস্মৃত হয়ে যাব ফেলে আসা দিনের যন্ত্রণা-কাতরতা, ভুলের কুয়াশাচ্ছন্নতা, ভুলে ভরা জীবনের ঘোরলাগা সময়। বারান্দার গোলাপের চারা বড় হতে থাকবে। একটি ফুলের জায়গায় সেই গাছে ফুটে থাকবে অজস্র ফুল। সেই ফুলের মতোই আমাদের ভুলগুলোও একদিন ফুল হয়ে ফুটবে। সেই ফুলের সুবাস আমরা ছড়িয়ে দেব চারপাশে।