জান্নাতে নাঈম
প্রকাশ : ১৭ জানুয়ারি ২০২৩ ১৯:০৭ পিএম
আপডেট : ১৭ জানুয়ারি ২০২৩ ১৯:২৪ পিএম
বইয়ের সাদা পাতায় কালো অক্ষরে লিপিবদ্ধ আছে সভ্যতার ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি। আমাদের চিন্তা ও চেতনার বীজ জাগরিত করার অন্যতম মাধ্যম বই। বই আমাদের জীবন-জগৎকে প্রসারিত করে।
খ্যাতনামা কথাসাহিত্যিক ফ্রানৎস কাফকা বলেছেন, ‘আমাদের আত্মার মাঝে যে জমাটবাঁধা সমুদ্র, সেই সমুদ্রের বরফ ভাঙার কুঠার হলো বই।’ বই হলো আত্মার শুদ্ধতম খোরাক।
বই নিয়ে কাজ করছে এমন একটি প্রতিষ্ঠানের নাম ‘বেঙ্গল বই’। এই আলোকিত আঙিনার অবস্থান রাজধানীর ধানমন্ডির ২৭ নম্বর রোডের ৪২ নম্বর বাড়িতে। এটি সৃজনশীল মানুষের মিলনকেন্দ্রে রূপ নিয়েছে। এর যাত্রা হয় ২০১৭ সালে। এখানে বই কেনা ও পড়ার সুব্যবস্থা আছে। এর জন্য পাঠককে গুনতে হয় না কোনো অর্থ। রুচিশীল পাঠক তৈরিতে ভূমিকা রেখে চলেছে প্রতিষ্ঠানটি। বই না কিনেও নতুন ও পুরোনো বই পড়তে পারেন আগ্রহীরা। এ সংগ্রহশালায় রয়েছে ৪০ থেকে ৫০ হাজার বই। পাঠক চাইলে তার পুরোনো দুটি বইয়ের বিনিময়ে এখান থেকে একটি পুরোনো বইও সংগ্রহ করতে পারেন।
‘বেঙ্গল বই’য়ে শিশুদের জন্য আছে ভিন্ন ভিন্ন চত্বর। একটা অংশের নাম ‘আকাশকুসুম’। এ চত্বরে এলে বোঝা যায় শিশুদের আবেগ ও মনোভাব কীভাবে ফুটে উঠেছে। এ ছাড়া কমিকস বইয়ের বিশাল সংগ্রহ নিয়ে রয়েছে ‘কমিক ক্যাস’। এ চত্বরে পাঠকের ভিড় বেশি থাকে। এখানে মেম্বারশিপের মাধ্যমে চাইলে যে কেউ পড়তে পারবে।
সারা বছর এখানে বিভিন্ন উৎসব চলে। পাঠকের জন্য রয়েছে চা-কফি এবং নাশতার ব্যবস্থা। নিচতলায় চা, শিঙাড়া-পুরি-আলুর চপ পাওয়া যায় বিকাল থেকে। সিঁড়ি ভেঙে দোতলায় উঠলে দেখা মিলবে কফিশপের। ছুটির দিনে বেঙ্গল বইয়ের উঠানে থাকে সকালের নাশতার আয়োজন।
এখানে প্রবেশ করলে দেখা যায় নগরের সমস্ত জ্যামযাতনার বিপরীত দৃশ্য। গভীর মনোযোগ দিয়ে বই পড়ছেন পাঠক। টেবিলে টেবিলে শিল্পসংস্কৃতি নিয়ে বিস্তর আড্ডায় মেতে উঠছেন অনেকে। একান্ত নিরিবিলি প্রকৃতির সান্নিধ্যে গল্প করার জন্য পাতা আছে টেবিল।
বাড্ডা থেকে এসেছেন রিফাত নিগার। জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, ‘সপ্তাহে এক দিন এখানে আসি বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করতে। বন্ধুরা না আসা পর্যন্ত বই পড়ি।’ এ রকম অসংখ্য পাঠক এভাবেই বেঙ্গল বইয়ের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন।
বেঙ্গল বইয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা আখতার হোসেন জানান, এ সেবা প্রদানের উদ্দেশ্য হচ্ছে মানুষের পাঠাভ্যাস ফিরিয়ে আনা। মানুষকে মননশীল হিসেবে গড়ে তুলতেই এ উদ্যোগ।
জীবন সুন্দর, বইয়ের স্পর্শে আরও মধুর হয়ে উঠুক আমাদের ভুবন। এমন আলোকিত আঙিনা গড়ে উঠুক নগর, বন্দর, প্রতিটি মহল্লায়।