× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

ভারতের রাষ্ট্রপতি ভবনে এক দিন

এসএএইচ ওয়ালিউল্লাহ

প্রকাশ : ৩০ জানুয়ারি ২০২৩ ১৬:৩৭ পিএম

যুব প্রতিনিধি দলের সঙ্গে কুশলাদি বিনিময় করছেন ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু                                                 ছবি: লেখক

যুব প্রতিনিধি দলের সঙ্গে কুশলাদি বিনিময় করছেন ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু ছবি: লেখক

ভারত সরকারের আমন্ত্রণে গত অক্টোবরে বাংলাদেশ থেকে ১০০ জনের যুব প্রতিনিধি দল ভারত সফর করে। আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে এ দলটির সঙ্গে আমারও দেশটিতে যাওয়া। দুপুরে দিল্লির ইন্দিরা গান্ধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে শত তরুণের বহনকারী বিমান অবতরণের পর ভারতের যুব মন্ত্রণালয় আমাদের ফুলেল শুভেচ্ছা জানিয়ে বরণ করে নেয়।

প্রথম দিনের কর্মসূচি অনুযায়ী আমরা বিমানবন্দর থেকে বেরিয়েই দিল্লির ‘প্রধানমন্ত্রী সংগ্রহশালা’ পরিদর্শন করি। প্রধানমন্ত্রী সংগ্রহশালা পরিদর্শন শেষে রাতে হোটেলে চেকইন করে খাবারের পর দ্রুত বিশ্রামের পালা। কারণ পরদিন ভোরেই ছুটতে হবে দিল্লি থেকে আগ্রা পানে। দ্বিতীয় দিনের কর্মসূচিতে রয়েছে আগ্রা দুর্গ এবং মুঘল সম্রাট শাহজাহানের অমরকীর্তি তাজমহল পরিদর্শন। দ্বিতীয় দিনে আগ্রা থেকে পুনরায় দিল্লিতে ফেরার সময় জানতে পারি, তৃতীয় দিন ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু আমাদের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি ভবনে।অন্যরকম শিহরণ কাজ করছিল মনের মধ্যে। প্রথমবার এসেছি বিভুঁইয়ে... তা-ও দেশটির আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে। আবার দেশটির খোদ রাষ্ট্রপতিও আমন্ত্রণ জানিয়েছেন সরাসরি রাষ্ট্রপতি ভবনে। এ অনুভূতি কলমের কালিতে ছড়িয়ে দেওয়ার সক্ষমতা আমার নেই।

তৃতীয় দিনের সকালটা ছিল আমাদের জন্য অন্যরকম। সকালে আমরা যাই দিল্লির ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামা পরিদর্শনে। ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামা থেকে বেরিয়ে আমাদের গন্তব্য ভারতের বিদেশ মন্ত্রণালয়। সেখানে আমাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রা। বিনয় মোহন কোয়াত্রার সঙ্গে সাক্ষাতের পর আমরা ফিরে যাই হোটেলে। দুপুরের খাবারের পর হোটেলের লবিতে একত্র হই। কিছুক্ষণের মধ্যেই আমাদের জন্য পর্যটন মন্ত্রণালয়ের নির্ধারিত বাস হাজির হয় হোটেলের সামনে। পুলিশ স্কোয়াডের প্রটোকলে আমরা যাত্রা করি বিশ্বের সর্ববৃহৎ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি ভবনের উদ্দেশে। বলে রাখা ভালো, ভারতের রাষ্ট্রপতি ভবনটি মুঘল ভারতীয় ও রোমান স্থাপত্যশৈলী এবং নান্দনিকতার সংমিশ্রণে তৈরি ভারতের সবচেয়ে আইকনিক স্থাপত্যের একটি। এটি ইন্ডিয়া গেটের মুখোমুখি রাজপথের পুবদিকে অবস্থিত।

৩৩০ একর জুড়ে অবস্থিত চার তলাবিশিষ্ট প্রাসাদটিতে রয়েছে ৩৪০টি কক্ষ, ৭৪টি বারান্দা, ১৮টি সিঁড়ি, বেশ কয়েকটি অডিটোরিয়াম, একটি বিশাল দরবার হল, ব্যাংকোয়েট হল এবং অশোক হল। এর মধ্যে লিভিংরুম ৬৩টি। এর কার্পেট এরিয়া প্রায় ২ লাখ বর্গফুট। তথ্যানুযায়ী, ২৯ হাজার শ্রমিক ১৭ বছরে এ প্রাসাদটি নির্মাণ করেন। প্রাসাদ এলাকার প্রায় ৭৫ একরের বেশি জুড়ে রয়েছে বাগান। এ ছাড়া জলাধার, প্রজাপতি কর্নার, বরই উদ্যান, আমবাগান, ময়ূর পয়েন্ট, কমলালেবুর বাগান, মুঘল উদ্যানসহ কত কি! 

হোটেল থেকে যাত্রার মিনিট ত্রিশেকের ব্যবধানে আমরা পৌঁছে যাই রাষ্ট্রপতি ভবনে। বাস থেকে নেমে প্রাসাদে প্রবেশের জন্য অপেক্ষা করতে থাকি। রাষ্ট্রপতি ভবনের কর্মকর্তারা আমাদের উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান এবং লালগালিচা দিয়ে প্রবেশ করানো হয় রাষ্ট্রপতি ভবনের দরবার হলে। দরবার হলে নির্ধারিত আসনে আমাদের বসার ব্যবস্থা করা হয়। এখানে বসেই আমরা ভারত প্রজাতন্ত্রের প্রথম তফসিলি সম্প্রদায়ভুক্ত রাষ্ট্রপতির সাক্ষাতের অপেক্ষা করতে থাকি। দরবার হল জুড়ে পিনপতন নীরবতা বিরাজ করছে।

কিছুক্ষণের মধ্যেই প্রাচীন রাজা-বাদশাহদের দরবারের মতো বিশেষ সাদা পোশাক, মাথায় ভারতীয় ঐতিহ্যবাহী পাগড়ি পরিহিত ও হাতে বর্শা নিয়ে সেনাবাহিনীর বিশেষ দলের সদস্যরা দরবার হলের চারদিকে সতর্ক অবস্থান নেন এবং রাষ্ট্রপতির জন্য নির্ধারিত আসনের ডানে-বাঁয়ে তিনজন করে দাঁড়িয়ে যান। হঠাৎ বিউগল বেজে উঠল। বুঝলাম দরবার হলে ভারত প্রজাতন্ত্রের মহামান্য রাষ্ট্রপতি প্রবেশ করছেন। সবাই দাঁড়িয়ে গেলাম। গার্ড অব অনার দিয়ে রাষ্ট্রপতির বিশেষ বাহিনীর সদস্যরা রাষ্ট্রপতিকে আসন পর্যন্ত নিয়ে যান। এরপর বেজে ওঠে ভারতীয় জাতীয় সংগীত। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন ভারতের যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা। যুব প্রতিনিধি দলের পক্ষেও আমাদের একজন বক্তব্য দেন। এরপর বক্তব্য প্রদান করেন শ্রীমতী দ্রৌপদী মুর্মু।

বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের উত্থান-সমৃদ্ধি বিশ্বের জন্য প্রেরণাদায়ক গল্প। প্রত্যেক ভারতীয়ের হৃদয়ে বাংলাদেশ একটি বিশেষ স্থান দখল করে আছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘ভারত বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বন্ধু এবং অংশীদার হতে পেরে গর্বিত এবং বাংলাদেশের সঙ্গে উন্নয়নের যাত্রা ভাগাভাগি করে চলেছে। এ চেতনা রক্ষা করা আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ যা আমাদের দুই দেশ ও আমাদের জনগণের মধ্যে গভীর বন্ধুত্বকে অনুপ্রাণিত করবে।’ রাষ্ট্রপতির বক্তব্য শেষে পুনরায় জাতীয় সংগীত বেজে ওঠে এবং তিনি দরবার হল ত্যাগ করেন।

অশোক হলে যুব প্রতিনিধি দলের সাথে ক্যামেরাবন্দী হয়েছেন ভারতের রাষ্ট্রপতি

এরপর আমাদের নিয়ে যাওয়া হয় রাষ্ট্রপতি ভবনের আরেক গুরুত্বপূর্ণ স্থান অশোক হলে। মন্ত্রমুগ্ধ তৈলচিত্রের নকশা ও ফারসি-শৈলীর কার্পেট দ্বারা অলংকরণের জন্য এ হলরুমটি বিখ্যাত। এখানেই শ্রীমতী মুর্মু আমাদের সঙ্গে ফটোসেশন করেন এবং অনানুষ্ঠানিক কুশলাদি বিনিময় করেন। এ সময় তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের তরুণদের একটি অতীত আছে; যা গৌরব, সমৃদ্ধি ও একটি ভবিষ্যৎ প্রতিশ্রুতিতে পূর্ণ।’ তিনি আমাদের ভারত ও বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে শান্তি, সমৃদ্ধি ও বন্ধুত্বের সোনালি যুগের সূচনার আহ্বান জানান। এরপর তিনি আমাদের তার রাষ্ট্রপতি ভবনে আতিথেয়তা গ্রহণের আমন্ত্রণ জানিয়ে অশোক হল ত্যাগ করেন।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা