গোলাম কিবরিয়া
প্রকাশ : ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৫:২৩ পিএম
তুমি আমার পাশে বন্ধু হে বসিয়া থাকো, একটু বসিয়া থাকো। এ আকুতি প্রকৃত সব বন্ধুত্বের মাঝেই থাকে। বন্ধুত্ব মানেই জীবনের সবুজতম সম্পর্ক। আত্মার কাছাকাছি যে বাস করে, সে-ই বন্ধু। সুসময় কিংবা অসময়ের সঙ্গী। জীবনে পরিবারের পরেই বন্ধুত্বের অবস্থান। বন্ধু মানে নিছক আড্ডার সঙ্গী হওয়া নয়, বরং বন্ধুর খুশিতে খুশি হওয়া, বন্ধুর দুঃখের সঙ্গী হওয়া। বন্ধুর পথে পথচলার চালিকাশক্তি হওয়া। বর্তমান তথ্যপ্রযুক্তির যুগে আমাদের ফেসবুকে-মেসেঞ্জারে নানা ধরনের বন্ধু তৈরি হয়ে থাকে।
কলেজ-ভার্সিটিতে পড়াশোনা, বিভিন্ন সোশ্যাল পার্টির মাধ্যমেও অনেক সময় বন্ধুত্ব তৈরি হয়। তবে সব বন্ধুত্বের সম্পর্ক স্থায়ী হয় না। কিছু সম্পর্ক থাকে একদিন, দুইদিন বা কয়েক মাস। আবার কিছু সম্পর্ক অনেক দিনের হলেও আস্থার জায়গাটি ঠিক মজবুত হয় না। অনেকটা পথ একসঙ্গে চলার পর মনে হয়- যে বন্ধুকে নিজের কঠিন সময়ে কাছে পাওয়া গেল না, সে আবার কেমন বন্ধু! চলুন দেখে মিলিয়ে নেওয়া যাক বন্ধুর পথে আপনার প্রকৃত বন্ধু কারা-
বন্ধুত্ব চিরকালের
প্রিয় বন্ধু চিরদিনের। জীবন-জীবিকার তাগিদে এক শহর থেকে অন্য শহরে দুজন আলাদা হয়ে গিয়েছেন। দুজন ভালো বন্ধু কখনই একে অপরকে ভুলে যাবে না, বরং আরও বেশি করে একে অপরকে মনে করবে এবং সময় পেলেই একে অপরের সঙ্গে দেখা করে খুনসুটি করবে।
দুঃসময়ে পাশে থাকা
এক বন্ধুর বিপদে চিন্তা-ভাবনা ছাড়াই অন্য বন্ধুর সাড়া দেওয়াই হচ্ছে প্রকৃত বন্ধুত্বের পরিচয়। প্রয়োজনে সময়ে অসময়ে বন্ধুর বিপদে তাকে সাহায্য করা। যে বন্ধুর জন্য আপনি এমন করতে পারবেন এবং যে বন্ধু আপনার পাশে সর্বদা থাকতে পারবে, সে-ই আপনার সত্যিকার বন্ধু।
প্রকৃত শুভাকাঙ্ক্ষী
ভালো বন্ধু সবসময় বন্ধুর ভালো চায়। নিজের ভালো হোক সবাই চায়, তবে তার জন্য বন্ধুর ক্ষতি হোক এমন ভাবা কিন্তু প্রকৃত বন্ধুর পরিচায়ক নয়।
সৎ থাকা
বন্ধুত্বে অবশ্যই সৎ থাকতে হবে। মিথ্যা তথ্য কিংবা ধারণা দিয়ে বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়া যায়, কিন্তু গড়লেও তা কখনই দীর্ঘস্থায়ী হয় না। অনেক বন্ধু থাকে; যারা একজনের কথা অন্যজনের কাছে নেগেটিভভাবে প্রকাশ করে। গসিপ বা মিথ্যা কথা বলে এমন বন্ধুদের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলবেন। এরা বন্ধুত্বের সম্পর্ক নষ্ট করে থাকে। নিজেরা অন্যের কাছে ভালো থেকে তারা অন্যকে হেয় করে বিভিন্নভাবে।
ভালো শ্রোতা হওয়া
বন্ধুত্বে ভালো শ্রোতা হওয়া খুব জরুরি। বন্ধুর সঙ্গে আড্ডায় কেবল নিজের কথাগুলোকেই প্রাধান্য দেওয়া উচিত নয়। অন্যজনের কথাও সমান গুরুত্ব দিয়ে শোনা উচিত।
পারস্পরিক বোঝাপড়া
বন্ধুর ইচ্ছাকে সব সময় সম্মান জানানো উচিত। যদি তা পছন্দ না হয়, তবে সরাসরি বলুন। সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ থাকা অবশ্যই জরুরি। একসঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলতে গেলে হোঁচট খেতেই পারেন, মান-অভিমান হতেই পারে। তাই বলে কোনো সম্পর্কের ইতি টানা সমাধান নয়। সময় নিয়ে নিজের সঙ্গে নিজে কথা বলুন ও ভাবুন।
বোঝার চেষ্টা করুন
সবকিছুতেই বন্ধুটি আপনাকে প্রয়োজন মনে করছে কি না তা বোঝার চেষ্টা করুন। অর্থাৎ শুধু বিপদে পড়লেই সে আপনার কাছে সাহায্য চাচ্ছে কি না তা পরখ করুন। প্রকৃত বন্ধু আপনাকে শুধু প্রয়োজনে নয়, সব সময় স্মরণ করবে। আপনার বন্ধু কি যেকোনো প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে? প্রকৃত বন্ধুরা সব সময় প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে থাকে। যদি আপনার বন্ধু সব ধরনের প্রতিশ্রুতিই ভঙ্গ করে, তা হলে বুঝবেন তিনি সঠিক নয়।
সব সময় প্রস্তুত
আপনার বন্ধুটি অন্য সবার কাছে যেমনই হোক না কেন, সে আপনার জন্য উদার কি-না সেটা দেখুন। ভালো বন্ধুরা কখনও কৃপণ প্রকৃতির হয় না। বন্ধুর প্রয়োজনে সে সবকিছু করতে প্রস্তুত থাকে। এমন বন্ধু বাছাই করুন যে আপনার প্রয়োজনে সব বাধা ডিঙিয়ে পাশে থাকবে।