প্রেমের অণুগল্প
কঙ্কন সরকার
প্রকাশ : ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১২:৪৯ পিএম
ট্রেন ছেড়ে দেবে দেবে করছে, ঠিক এমন মুহূর্তে হুড়মুড়িয়ে উঠল মেয়েটি। টিকিট আর সিট নম্বর মিলিয়ে আমার সোজাসুজি পাশের সারির চেয়ারটাই মিলে গেল তার। এই অবস্থায় কোনো যুবকের মনের মনের মধ্যে কী ঘটবে তা কি আর বলতে হয়!
এত কাছে বসে এক তরুণী যাবে বারো ঘণ্টার ট্রেনযাত্রায়! তার সঙ্গে ট্রেনে তুলে দিতে এসেছেন যিনি, কাছাকাছি বয়সের, তিনি ব্যাগ তুলে দিয়ে জানালা গলে প্লাস্টিকে মোড়ানো টকটকে একটা লাল গোলাপ দিয়ে বলল, যত্ন করে রেখে দাও।
মুহূর্তেই বিদ্যুৎ খেলে যায় শরীরময়! তাহলে গোলাপ দেওয়ারও কেউ আছে!
স্বস্তি যে সাহায্যকারী যাত্রী হলেন না!
ট্রেন চলা শুরু হলো। চোখকে কি আটকানো যায়! বারবার চলে যাচ্ছে দর্শনে।
আড়দৃষ্টিতে কিংবা সোজাসুজি। সেও যে দেখে, বোঝা গেল।
কথা যদি বলা যেত! কিন্তু যাত্রাপথে অনেক দূর গিয়েও সুযোগ হচ্ছিল না তার! কেননা চোখ তার কখনও ফোনে, কখনওবা জানালা দিয়ে বাইরে! তবে ছেড়ে আসা স্টেশনের পরের স্টেশনে সিটবিহীন এক যাত্রী উঠে পাশে দাঁড়ালে তার সঙ্গে টুকটাক কথা হওয়ায় নিজেকে স্বয়ম্বরসভার ব্যর্থ প্রতিযোগী মনে হতে লাগল! তবে ওসব খুব বেশি সময় ধরে গড়াল না। কেননা এমনিতে রাত গভীরে যাচ্ছে তার ওপর ট্রেনের দুলনি। ‘বসন্তেরই মাতাল সমীরণে...’ তার ঘুম এসে গেলে যেন স্তব্ধ হলো পৃথিবীময়। তার ওপরে তার মুখমণ্ডল চাদরে ঢাকা পড়লে কামড়ায় ঝলমলে আলোয়ও যেন গহিন অমাবস্যা ঠাওর হতে লাগল!
রাত পেরিয়ে সকাল হলো। আর দুটো স্টপেজের পর নামতে হবে। কিন্তু তার আগেরটি আসতেই মেয়েটি নামার প্রস্তুতি নিল। থামলে গোলাপটি আমার হাতে দিয়ে বলল, প্লিজ...! থরথর করে কেঁপে উঠল গা! হাত বাড়িয়ে নেওয়াতে কী হবে তা কি বলতে হবে!
সে নামল। স্টেশনে তার জন্য অপেক্ষমাণ ব্যক্তিটি এগিয়ে এসে রিসিভ করল। মেয়েটি জানালা গলে মাথাটা এগিয়ে দিয়ে বলল, প্লিজ ফুলটি... এবার কম্পন নয়, ঘামছে যেন আপাদমস্তক!
গোলাপটি নিয়ে রিসিভকারীর হাতে দিয়ে বলল, শুভসকাল!
ততক্ষণে ট্রেন ছেড়ে দেওয়ার হুইসেল বেজে উঠল। জানালা দিয়ে দুজনার হাসিটুকু ছিল দেখার মতো।
সদর, গাইবান্ধা