শওকত আলী রতন
প্রকাশ : ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৩:৩৮ পিএম
ভাষাশহীদদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসার নিদর্শন স্বরূপ নিজ উদ্যোগে ১০০টি শহীদ মিনার নির্মাণ করতে চান ঢাকার দোহার উপজেলার বিলাশপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা আব্দুস সালাম চৌধুরী। এ পর্যন্ত তিনি ৪০টি শহীদ মিনার নির্মাণের কাজ সম্পন্ন করেছেন। আরও ১২টি শহীদ মিনার নির্মাণাধীন রয়েছে; যা এ বছর সম্পন্ন হবে। প্রতিবছর তিনি ১০টি শহীদ মিনার নির্মাণের মাধ্যমে শত শহীদ মিনার গড়ার স্বপ্ন পূরণ করতে চান।
শহীদ মিনার গড়ার স্বপ্নটা তার মাথায় আসে ২০০৮ সাল থেকে। ওই বছর তিনি বিলাশপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। সেখানে গিয়ে দেখেন শিক্ষার্থীরা কলাগাছ দিয়ে শহীদ মিনার গড়েছে। অস্থায়ী ওই মিনারের ওপরই ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানালেন। পরেরদিন সেখানে দেখেন শহীদ মিনারটি আর নেই! তিনি তখন ভাবলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্থায়ী শহীদ মিনার থাকা দরকার। ওই ভাবনা থেকেই তিনি শহীদ মিনার গড়ার উদ্যোগ নেন। স্বপ্নটা তখন দেখলেও নির্মাণে যে ব্যয় সেটার জোগাড় না থাকায় সময়মতো কাজটা শুরু করতে পারেননি। ২০১৮ সালের মাঝামাঝিতে এসে তিনি বিলাশপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শহীদ মিনারের কাজ শুরু করেন। পরের বছর ২১ ফেরুয়ারির দিন শিক্ষার্থীরা তার নির্মিত শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শহীদদের শ্রদ্ধা জানায়।
এ বছরে লটাখোলা উচ্চ বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার স্থাপন করেন তিনি। তার এই উদ্যোগ সম্পর্কে বিদ্যালয়ের সভাপতি আব্দুর রহমান আকন্দ জানান, সম্প্রতি আমাদের স্কুলে একটি শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়েছে। দেশপ্রেমের এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করে চলেছেন আব্দুস সালাম চৌধুরী। দেশে অনেক বিত্তশালী রয়েছে; তার মতো কজন আছে!’
এ পর্যন্ত আব্দুস সালামের নির্মিত প্রতিটি শহীদ মিনার নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ২ থেকে ৪ লাখ টাকা। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের আদলে গড়া শহীদ মিনারের নির্মাণব্যয় প্রায় ৪ লাখ টাকা আর ছোট আকৃতির শহীদ মিনারে ব্যয় ২ লাখ টাকা।
ঢাকার দোহার উপজেলার বিলাশপুর ইউনিয়নের বিলাশপুর গ্রামের কারী আব্দুল হাসেম চৌধুরীর ছেলে আব্দুস সালাম চৌধুরী। তিনি শহরে বেড়ে উঠলেও গ্রামের মানুষের প্রতি রয়েছে অগাধ ভালোবাসা। এলাকার মানুষের টানে ছুটে আসেন। বন্যার্ত, শীতার্ত এবং ক্ষুধার্তদের প্রতি সাহায্য-সহযোগিতার হাত বাড়ান মানবিক এই মানুষটি। ব্যতিক্রমী মানুষটির ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি জানান, মানুষ বিত্তশালী হলে প্রয়োজনীয় শখ মেটায় আর আমার স্বপ্ন ভাষা আন্দোলনের বীর শহীদদের সম্মানে শহীদ মিনার নির্মাণ করা। বিষয়টিকে অনেকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করলেও আমি আমার চিন্তা-চেতনার ওপর অটল। সুস্থ থাকলে ১০০ শহীদ মিনার নির্মাণ করে যেতে চাই। আগামী প্রজন্মের কাছে ভাষাশহীদদের স্মৃতি তুলে ধরতে চাই।’
ঢাকার দোহার, নবাবগঞ্জ, কেরানীগঞ্জ ছাড়াও রংপুর, গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর ফরিদপুর এবং মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগরে শহীদ মিনার গড়েছেন তিনি।