× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

মেঘালয়ে ঝরনাধারায়

ফয়সাল নাঈম

প্রকাশ : ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৩:১৩ পিএম

আপডেট : ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৩:১৭ পিএম

মেঘালয়ে প্রকৃতির মাঝে অন্যরকম অনুভূতি এনে দিবে আপনার মনে         ছবি : ফয়সাল নাঈম

মেঘালয়ে প্রকৃতির মাঝে অন্যরকম অনুভূতি এনে দিবে আপনার মনে ছবি : ফয়সাল নাঈম

পাহাড়ি রাজ্য মেঘালয়জুড়ে দেখা মেলে অজস্র ঝরনার                                 ছবি : ফয়সাল নাঈম

পাহাড়ি রাজ্য মেঘালয়জুড়ে দেখা মেলে অজস্র ঝরনার ছবি : ফয়সাল নাঈম

পাহাড়ি রাজ্য মেঘালয়জুড়ে দেখা মেলে অজস্র ঝরনার। উমক্রেম ফলস, বোরহিল, ক্রাংসুরি, সেভেন সিস্টার্স, এলিফ্যান্ট, সুইট, স্প্রেড ঈগল, বিশপ, বিডেন ফলসসহ চলতি পথে চোখে পড়বে নাম না-জানা অনেক ঝরনার। মেঘের রাজ্য মেঘালয়ের ঝরনাধারার গল্প শোনাচ্ছেন ফয়সাল নাঈম

মেঘের রাজ্য মেঘালয়। বাংলাদেশের সীমান্তঘেঁষা উত্তর-পূর্ব ভারতের একটি প্রদেশ। এ রাজ্যের উত্তর ও পূর্ব দিকে আসাম রাজ্য এবং দক্ষিণ ও পশ্চিম দিকে বাংলাদেশ। মেঘালয় উত্তর-পূর্ব ভারতের সেভেন সিস্টার্স রাজ্যগুলোর অন্যতম। শিলং হচ্ছে তার রাজধানী। শিলংকে বলা হয় প্রাচ্যের স্কটল্যান্ড। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৪৯০৮ ফুট উচ্চতায় শিলংয়ের অবস্থান। গত বছরের আগস্টে প্রায় ৩ রাত ৪ দিন কাটানোর একটা ছোট গল্প আপনাদের জন্য! গল্পের শুরুটা হয় রাত ১১টায় সায়েদাবাদ থেকে সিলেটে যাত্রা করার মধ্য দিয়ে। এরপরের দিন সকালে সিলেট শহরে নেমে সকালের নাশতা করে বর্ডারে চলে যাই আমরা একটা প্রাইভেট কার নিয়ে! বলা ভালো আমরা ছিলাম ৫ জন সদস্য। তামাবিল বর্ডারে প্রথমে আমরা ট্রাভেল ট্যাক্স পরিশোধ করি। বর্ডারের কাজ যত দ্রুত শেষ করে আমরা প্রথমে চলে যাই মেঘালয়ের প্রবেশপথ নামে খ্যাত ডাউক বাজারে। দুপুরের খাবার সেরে নিয়ে একটা ছোট মারুতি গাড়ি ভাড়া করি। এই গাড়ি আমাদের সঙ্গে থাকবে ডাউকির সকল স্পট ঘুরে চেরাপুঞ্জি পর্যন্ত! প্রথমে আমরা ঝুলন্ত ব্রিজ উমগ্রেট হয়ে মেঘালয়ে প্রবেশ করি। এই ব্রিজটি জাফলং থেকে দেখা যায়। যার একপাশে বাংলাদেশ আরেকপাশে মেঘালয়। 

উমিক্রেম ফলস

আগের দিন বৃষ্টি হওয়ায় উমিক্রেম ফলসের আসল রূপ দেখতে পেলাম। এর পর আমরা যাত্রা করি মাওলাইনং গ্রামের পথে। কিন্তু রাস্তায় আরেকটি সুন্দর ঝরনার দেখা পাওয়া যায়। যার নাম বোরহিল ফলস। এই ঝরনার পানি একটি ব্রিজের নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে এবং এই প্রবাহকে আমরা বিছনাকান্দি নামে চিনি। দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে পরিষ্কার গ্রাম মাওলাইনং। ঠিক এর পাশেই রয়েছে লিভিং রুট ব্রিজ।

মাওলাইনং গ্রাম হয়ে লিভিং রুট ব্রিজ

এই গ্রামের যিনি প্রধান তার মুখে শোনা যায় যে প্রথম থেকেই নাকি এই গ্রামের লোকেরা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে খুবই সচেতন। এই গ্রামে রাস্তার কোণে কোণে রয়েছে বাম্বু ক্যাপের মতো দেখতে ডাস্টবিন। যা এই গ্রামের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শুধু যে গ্রামটি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন তা কিন্তু নয়, গ্রামের মানুষের ও পোশাক-পরিচ্ছদ বাড়িঘর সবকিছু একদম ঝকঝকে তকতকে। এই গ্রামে ট্যুরিস্টরা যেসব নোংরা ফেলে তা পরিষ্কারের জন্য তাদের কাছ থেকেই ডোনেশান নেওয়া হয়। সেখান থেকে ঘুরে চলে গেলাম লিভিং রুট ব্রিজ দেখতে।

মূল রাস্তা থেকে সিঁড়ি বেয়ে বেশ খানিকটা নিচে নামতে হয় এই ব্রিজ দেখতে। লিভিং রুট ব্রিজের নিচ দিয়েও বয়ে গেছে নাম না-জানা একটি ঝরনার প্রবাহ! সিঁড়ি ধরে বেশকিছু দূর ট্রেকিং করে নামার পরই চোখ আটকে যাবে আশ্চর্য এই সেতুতে। এখানকার এন্ট্রি ফি ৪০ রুপি। গ্রামের পাহাড়ি নদী থাইলংয়ের ওপরে প্রাকৃতিকভাবে গাছের শেকড়ে তৈরি সাঁকোটি দেখতে প্রতিদিনই ভিড় জমান অসংখ্য পর্যটক। বিশাল দুটি গাছের শেকড় জড়াজড়ি করে আছে ঝিরির ওপরে। একটু একটু করে বেড়ে প্রাকৃতিক সেতু তৈরি করেছে গাছ দুটি। সেই সেতুর ওপর দিয়ে অনায়াসে পার হয়ে যেতে পারবেন। 

পড়ুন : নাগাল্যান্ডের গহিনে...

পাহাড়ি পথ ধরে চেরাপুঞ্জি

সন্ধ্যার দিকে আমরা রওনা হই চেরাপুঞ্জির দিকে। ডাউকি পার হয়ে আমরা পাহাড়ি পথ ধরে যেতে থাকি চেরাপুঞ্জির দিকে। মাইলের পর মাইল জনমানবহীন পাহাড়ি রাস্তা রাত ১০টা ৩০ মিনিটে আমরা চেরাপুঞ্জিতে আসি আমাদের নির্ধারিত হোম স্টেতে। কিন্তু এখানে তো আরেক কাণ্ড! রাত ৮টায় এখানে সব বন্ধ! বলা বাহুল্য, আমরা ছিলাম চেরাপুঞ্জির সোহরা শহরে (আঞ্চলিক নাম এটি)। এই জায়গাটি সারা বছর ঠান্ডা থাকে এবং যারা যাবেন অবশ্যই শীতের কাপড়ের সঙ্গে হোম স্টে বা হোটেলে গিজার আছে কি না চেক করে নেবেন। রাতে যেহেতু কিছু দেখতে পাচ্ছিলাম না, তাই সকালে শহরটা দেখতে কেমন হবে সেটার একটা প্রবল আকাঙ্ক্ষা ছিল, তবে সকালে উঠে যা দেখেছিলাম তা বলার বাইরে। আমাদের হোম স্টে থেকে সরাসরি পাহাড়ের ভিউ দেখা যাচ্ছিল এবং মেঘ যাওয়া-আসার ভেতরে ছিল। আমরা গাড়ি নিয়ে বের হয়ে পরি চেরাপুঞ্জির ঝরনাগুলো দেখতে।

পথে পথে ঝরনা

তালিকায় প্রথমে ছিল নোয়াকালিকাই ফলস। সোহরা থেকে প্রায় ২ ঘণ্টার কাছাকাছি একটা জার্নির পর আমরা সেখানে যাই। এই পুরা জার্নিতে রাস্তাগুলো দেখে মনে হয় আগে হয়তো খুব জমজমাট একটি শহর হুট করে ভুতুরে শহরে পরিণত হয়েছে। পুরোনো সব কারখানা পরে রয়েছে, ঘরবাড়িগুলোও অনেক পুরোনো। নোয়াকালিকাই ফলসটি মেইন ভিউ পয়েন্ট থেকে অনেক নিচে। সব সময় মেঘ দিয়ে আচ্ছন্ন থাকে, খুব পরিষ্কার ভিউ পেতে ভাগ্যের সহায়তা প্রয়োজন। প্রায় ১ ঘণ্টার অপেক্ষার পর কিছু সময়ের জন্য সুন্দরভাবে দেখা পাই এই সুন্দর ঝরনাটি। এরপর আবার মেঘের চাদরে ঢাকা পড়ে যায়। আবার আমরা সোহরা শহরে ফিরে এসে আমাদের পরবর্তী গন্তব্য আরও বেশ কয়েকটি ঝরনার জন্য রওনা হই। পথে পাহাড়ের সারির দেখা মিলবে, এই রাস্তা তুলনামূলক খারাপ। তাই ভালো গাড়ি নিয়ে যাওয়া উচিত।

প্রথমে আমরা আমাদের যাত্রা বিরতি দেই ডেমথেম ফলসের এখানে। এখানে পাহাড়ে পা ঝুলিয়ে বসে মেঘের সঙ্গে ঝরনা দেখার অনুভূতি নেওয়া যায় অনায়াসে। ডেমথেমের পালা শেষ করে আমরা যাত্রা শুরু করি ওয়াশিয়া ডং ঝরনার দিকে। এই ঝরনাটির বিশেষ দিক থেকে ৩ ধাপ হয়ে পানি সমতলে মিলিত হয়েছে। রাস্তা থেকে বেশ খানিকটা পাহাড়ি প ট্রাকিং করে নিচে আসতে হবে ঝরনাটি দেখতে। পাহাড়ি পথ। বাঁশের সিঁড়িসহ গাছের গুঁড়ির সিঁড়ি দিয়ে নেমে আপনাকে এই ঝরনা পর্যন্ত আসতে হবে। নিচে নেমে দেশীয় স্টাইলে লুঙ্গি পরে একটা জম্পেশ গোসল দিয়ে ফেলি আমরা। পানি ছিল বরফের মতো ঠান্ডা। আর যা বললাম একদম পরিষ্কার। ঝরনার দ্বিতীয় স্টেপে উঠে খানিকটা ফাঁকা জায়গা পেয়ে জম্পেশ আড্ডা দিলাম। এসব করতে করতে সময় গড়িয়ে যখন বিকাল, তখন হালকা নাশতা সেরে নিয়ে ফিরতি পথে রওনা হই।

সেভেন সিস্টার্স ফলস

সন্ধ্যার ঠিক আগমুহূর্তে সোহরা শহরের সেভেন সিস্টার্স ফলসের ভিউ পয়েন্ট থেকে সুন্দর একটা সূর্যাস্ত দেখি। এটি আপনি চেরাপুঞ্জি ইকো পার্ক হিসেবেও ধরতে পারেন, এখানে মৌসুমি কেইভ নামে একটা গুহা থাকলেও সময় অভাবে সেটি দেখা হয়নি। চেরাপুঞ্জিতে আরও কিছু স্পট রয়েছে। যেমন- ডাবল ডেকার রুট ব্রিজ, রেইনবো ফলস, ওকাবা ফলসসহ আরও কিছু। কিন্তু আমাদের রুট প্লান অন্য হওয়ায় এগুলোতে আমরা যেতে পারিনি। যাই হোক, সেভেন সিস্টার্স ফলস দেখে আমরা রওনা হই শিলং শহরের দিকে। এখানের সব কাজ শেষ করে আমরা শিলং শহর ত্যাগ করে সোনংপেডাং-এর দিকে গেলাম। আমার দেখা সবচেয়ে সুন্দর ঝরনা ফিফি ফলস ঘুরে দেখলাম। রাস্তা থেকে বেশ খানিক ভিতরে এটি। ২টি স্টেপ পানি ঝরে পরে এই ঝরনাটির সৃষ্টি। প্রথম স্টেপের থেকে দ্বিতীয় স্টেপটি বেশি সুন্দর, দ্বিতীয় স্টেপটি বেশ উঁচু। অনেক উঁচু থেকে ঝরনার পানি সজোরে আছড়ে পরে সরাসরি এসে।

মেঘালয়জুড়েই আমরা পাহাড়ের একেক রকম মুগ্ধকর দৃশ্য দেখলাম। ফিফি ফলস ঘুরে আমাদের পরবর্তী আকর্ষণ ছিল ক্রানসুরি ফলস, চেরাপুঞ্জিতে জিপ লাইনিং। জিপ লাইনিংয়ের একটা অভিজ্ঞতা নিয়ে নিলাম। দূরন্ত গতিতে ক্রানসুরি ফলসের ওপরে দিয়ে এক পাহাড় দিয়ে আরেক পাহাড়ের উড়ে গেলাম। পুরো মেঘালয় রাজ্যজুড়ে অনেক দর্শনীয় স্থান রয়েছে। যা ভ্রমণপিপাসুদের পছন্দের তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে। 

নোট : যাদের ভিসা করা নেই, তাদের ভিসা করতে হবে ডাউকি বর্ডার দিয়ে। 

সঙ্গে যা নিতে হবে-

  •  কাঁধে ঝোলানো ট্রাভেল ব্যাগ। সঙ্গে মোটা কাপড় রাখতে হবে এবং ওয়েদার রিপোর্ট নিয়ে ট্যুরের আগে রেইন কোট বা ছাতা লাগবে কি না জেনে নেবেন।
  •  সানগ্লাস, হ্যাট, সান ক্রিম, প্রয়োজনীয় ওষুধ।
  •  ক্যমেরা ও এক্সট্রা ব্যাটারি। চার্জের জন্য পাওয়ার ব্যাংক।

মনে রাখতে হবে আমরা প্রকৃতির সন্তান। তাই কোনোভাবেই প্রকৃতির সৌন্দর্য ও ভারসাম্য নষ্ট হয় এমন কিছু আমরা করব না। মেঘালয় একটি আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকা। তাই আমাদের কোনো প্রকার আচরণে যেন ওখানকার কেউ মনঃক্ষুণ্ন না হয়, সেদিকে বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে।

ছবি : লেখক


শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা