শনিবারের হাসি
জোবায়ের রাজু
প্রকাশ : ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১১:১৭ এএম
আপডেট : ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১১:১৮ এএম
সন্ধ্যার পর ফেসবুকে ঢুকলে অন্তুর একাধিক ছবি চোখে পড়ে। প্রতিদিন সে বইমেলায় যায় আর ব্যাগভরা কেনা বই হাতে ছবি তুলে ফেসবুকে আপলোড করে ক্যাপশনে লিখে কার কী কী বই কিনেছে। অন্তুর এমন কর্মকাণ্ডে আমি অবাক। সারা দিন টইটই করে ঘুরে বেড়ানো ছেলেটা কবে বইয়ের দিকে ঝুঁকে গেল! তবে অন্তুর কাজে আমি অবাক হলেও খুশি।
কারণ বইপ্রেমী এই আমি অন্তুর কেনা সব বই ধার এনে পড়তে পারব। অন্তু রোজ বইমেলায় গিয়ে যে গণহারে এত বই কেনে, না জানি ওর ঘরে কতগুলো বই জমা হয়েছে। তবে এতগুলো বই কেনার কারণে অন্তুকে একটা পুরস্কার দেওয়া যায়।
২.
বিকালে আমার ঘুম ভাঙল অন্তুর ফোনকলে। রিসিভ করতেই ওপার থেকে সে জানায়, ‘দোস্ত, টিভি দেখ। আক্কাস চ্যানেলে আমার ইন্টারভিউ হবে এখন, প্লিজ, দেখে ছবি তুলে আমাকে পাঠাস। ফেসবুকে ছাড়তে হবে।’ বলেই লাইন কেটে দিল অন্তু। আমি দ্রুত টিভি খুলে দেখি সত্যি সত্যি অন্তুর লাইভ ইন্টারভিউ হচ্ছে। বইমেলা থেকে সরাসরি উপস্থাপক অন্তুকে প্রশ্ন করছে-
- আপনার হাতে অনেক বইয়ের ব্যাগ দেখতে পাচ্ছি।
- জি। আমি বই খুব ভালোবাসি।
- কয়টি বই কিনেছেন আজ?
- আজ কিনেছি বাইশটি। রোজ মেলায় বই কিনি।
- তাহলে আপনার ঘরে নিশ্চয়ই বইয়ের সমাহার!
- জি। প্রতিদিন মেলায় আসব এবং আরও বই কিনব।
- আপনার জন্য শুভকামনা রইল।
অন্তুর ইন্টারভিউ দেখলাম। ওর এভাবে বইয়ের দিকে আগ্রহ বাড়াতে আমি সত্যি খুব খুশি।
৩.
অন্তুদের বাড়িতে এলাম ওর কেনা বইয়ের সমারোহ দেখতে। কিন্তু ঘরে কোনো বই দেখতে পাচ্ছি না। ব্যাপার কী!
- কীরে দোস্ত, বইমেলা থেকে যে এত বই কিনলি, কই?
- হিহি।
- হাসছিস কেন?
- হিহি।
- আজব তো!
- শোন, আমি কোনো বই কিনিনি।
- মানে!
- রোজ বিকালে বইমেলায় যাই। আমার ছোটবোনের ক্লাসের বইগুলো ব্যাগে ভরে মেলায় সন্ধ্যা পর্যন্ত পায়চারি করি। ছবি তুলি। আমার হাতে বইয়ের ব্যাগ দেখে পাবলিক তাকিয়ে থাকে আর মনে মনে ভাবে, বইপ্রেমী এই আমি অনেক বই কিনেছি। কিন্তু ব্যাগে কী বই আছে, তা তো কেউ জানে না।
- তার মানে তুই কোনো বই কিনিসনি?
- না। খবরদার, ফেসবুকে এটা প্রকাশ করিস না।
অন্তুর বক্তব্য শুনে আমি হাসব না কাঁদব, বুঝতে পারছি না। এখানে বই ধার নিতে এসে বোকা হব, ভাবতেই পারিনি।