× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

চিরায়ত বাংলা

সোনারগাঁয়ের দারুশিল্প

রবিউল হুসাইন

প্রকাশ : ০৪ মার্চ ২০২৩ ১৩:৪৩ পিএম

আপডেট : ০৪ মার্চ ২০২৩ ১৩:৪৩ পিএম

কাঠ খোদাই করে তৈজস বানাচ্ছেন সোনারগাঁয়ের একজন দারুশিল্পী

কাঠ খোদাই করে তৈজস বানাচ্ছেন সোনারগাঁয়ের একজন দারুশিল্পী

প্রাচীন বাংলার রাজধানী সোনারগাঁ একসময় চারু ও কারুশিল্পের চারণভূমি ছিল। বিশেষ করে এখানকার দারুশিল্পের ইতিহাস বেশ প্রাচীন। সুলতানি আমল, মুঘল, ইংরেজ, হিন্দু জমিদারি আমলসহ হাল আমলেও এ শিল্পের ধারাবাহিকতা বিদ্যমান রয়েছে।

সোনারগাঁয়ের ঐতিহ্যবাহী চিত্রিত হাতি, ঘোড়া, পুতুল ও কাঠ খোদাই কারুশিল্প দেশে-বিদেশে সমাদৃত। যদিও সোনারগাঁয়ে দারুশিল্পের উল্লেখযোগ্য প্রাচীন নিদর্শন এখন আর অবশিষ্ট নেই। তবু চিত্রিত হাতি, ঘোড়া, পুতুল ও কাঠ খোদাই কারুশিল্প সোনারগাঁকে এখনও দারুশিল্পে এগিয়ে রেখেছে।

সোনারগাঁয়ে যেসব প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন টিকে আছে সেগুলোয় কাঠের উল্লেখযোগ্য ব্যবহার লক্ষ করা যায়। বিশেষ করে প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনাগুলোর দরজা, জানালা ও সিঁড়ির রেলিংয়ে কাঠের নয়নাভিরাম অলংকরণ ছিল। 

সোনারগাঁ একসময় প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর থাকার দরুন দারুশিল্পের অন্যতম কাঁচামাল কাঠ এখানে বেশ সহজলভ্য ছিল। কাঠের এ সহজলভ্যতার কারণেই সোনারগাঁয়ে দারুশিল্পের প্রসার ঘটেছিল।

কাঠের তৈরি ঘরের বেড়া, দরজা ও জানালায় দারুশিল্পের অনন্য কারুকাজের জন্য প্রাচীন সোনারগাঁয়ের বেশ সুনাম ছিল। গৃহনির্মাণ কাজে ফুল, লতাপাতা, পাখি ও বিভিন্ন জ্যামিতিক নকশায় পারদর্শী ছিলেন সোনারগাঁয়ের কারুশিল্পীরা।

ঘর ছাড়াও অভিজাত পরিবারের আসবাবপত্র যেমন নকশা করা খাট, পালঙ্ক, সিংহাসন, পালকি, হাতের লাঠি, কোরআন শরিফের রেহাল, চেরাগদানি, ফুলদানি, নারকেল কোরানি, খড়ম, চৌকি, নকশা করা পিঁড়ি, টেবিল, চেয়ার, আলমিরা, আলনা ও সিন্দুকে নানান ধরনের শৈল্পিক নকশার উপস্থিতি ছিল।

হিন্দু জমিদারি আমলে এখানকার দারুশিল্পে বিভিন্ন ধরনের দেবদেবীর ভাস্কর্য যুক্ত হয়েছে। এখানকার সূত্রধর সম্প্রদায় এ ভাস্কর্য শিল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল। মুসলিম সম্প্রদায়ের দারুশিল্পীরা মূলত বাস্তুনির্মাণ ও নকশাখচিত কাঠের আসবাবপত্র তৈরিতেই যুক্ত ছিলেন বেশি।

সোনারগাঁ অঞ্চলটি যেহেতু বয়নশিল্পের জন্যও বিখ্যাত ছিল, জগদ্বিখ্যাত মসলিন তৈরি হতো; তাই বয়নশিল্পর সুতা কাটার কাঠের যে চরকা সেটাও এখানকার দারুশিল্পীরাই তৈরি করতেন। এ ছাড়া কাপড়ে নকশার ছাপ দেওয়ার জন্য কাঠের তৈরি ছাঁচও তৈরি হতো সোনারগাঁয়ে।


বিভিন্ন উৎসব-পার্বণ ও মেলায় একসময় সোনারগাঁয়ের কাঠের তৈরি চিত্রিত হাতি, ঘোড়া ও মমি পুতুল ব্যাপকভাবে বিক্রি হতো।  ঐতিহাসিক লাঙ্গলবন্দের অষ্টমী স্নানোৎসব উপলক্ষে যে মেলা বসত, সেখানেও এসব কারুপণ্যের অনেক চাহিদা ছিল। সোনারগাঁয়ের হাতি, ঘোড়া ও পুতুল তৈরির শিল্পীরা জানান, লাঙ্গলবন্দের যে স্নানোৎসব, সেখানে একসময় একেকজন দারুশিল্পী দুই থেকে তিন হাজার কারুপণ্য অনায়াসে বিক্রি করতেন। এ ছাড়া ভারতের বিখ্যাত গঙ্গাসাগর মেলায়ও সোনারগাঁয়ের দারুশিল্পীরা এসব কারুপণ্য নিয়ে যেতেন। বর্তমানে মেলা কিংবা হাটে এসব কারুপণ্যের তেমন চাহিদা নেই। সময়ের পরিক্রমায় এগুলো এখন বিলীনের পথে।

সোনারগাঁয়ে অর্ধশত সূত্রধর পরিবার এসব কারুপণ্য তৈরির সঙ্গে যুক্ত থাকলেও বর্তমানে দু-একটি পরিবার বংশপরম্পরায় এ পেশা ধরে রেখেছে। পৌর এলাকার রঘুভাঙ্গার আশুতোষ সূত্রধর ও বীরেন্দ্র চন্দ্র সূত্রধর এখনও কাঠের ঐতিহ্যবাহী শিল্পে জীবিকা নির্বাহ করছেন। কারুপণ্যের উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি, বিপণনে জটিলতা, কাঁচামালের সংকট ও ভোক্তাদের রুচির পরিবর্তনের কারণে এ শিল্পকর্মটি এখন বিলীনের দ্বারপ্রান্তে।

বর্তমানে প্লাস্টিক ও অন্যান্য উপাদানে তৈরি গৃহস্থালি সরঞ্জামের ব্যবহার বেড়েছে বিধায় কাঠের তৈরি সরঞ্জামের চাহিদা ও ব্যবহার কমেছে।

এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত অধিকাংশই পেশা পরিবর্তন করেছেন। সোনারগাঁয়ের প্রবীণ দারুশিল্পী আব্দুল আউয়াল মোল্লা ও তরুণ দারুশিল্পী রফিকুল ইসলাম ঐতিহ্যের সঙ্গে রুচি ও চাহিদার সম্মিলন ঘটিয়ে দারুশিল্পে এনেছেন নতুন মাত্রা। তারা বংশপরম্পরায় এ পেশায় যুক্ত থাকলেও নিজেদের মেধা ও শৈল্পিকতা দিয়ে পেশাগত উন্নয়নের চেষ্টা করছেন। নকশা করা কাঠের প্লেট, বাটি, ট্রে, ফটোফ্রেম, চামচ, মোমদানি, আয়নার ফ্রেমসহ অসংখ্য ডিজাইনের কারুপণ্য তৈরি করেন তারা। সোনারগাঁয়ে যারা দারুশিল্পকে আগলে রেখেছেন তারা জানান, দারুপণ্য দীর্ঘ সময় নিয়ে হাতে তৈরি করতে হয় তাই উৎপাদন ব্যয় বেশি। সে তুলনায় বাজারমূল্য কম । তবে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা, পণ্যের মানোন্নয়ন, যথাযথ বাজারজাতকরণ, বিপণনব্যবস্থার উন্নয়ন, পণ্যের যথাযথ মূল্য নির্ধারণসহ এ শিল্পকে আন্তর্জাতিক বাজারে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা গেলে এটি একটি সম্ভাবনায়ময় শিল্পে পরিণত হবে, জানান সোনারগাঁয়ের দারুশিল্পীরা।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: protidinerbangladesh.pb@gmail.com

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: pbad2022@gmail.com

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: pbonlinead@gmail.com

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: pbcirculation@gmail.com

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা