বাংলাদেশের মেয়েরা বিভিন্ন খেলাধুলার পাশাপাশি ই-স্পোর্টস সেগমেন্টেও নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করছে। তারই প্রমাণ দেশের প্রথম নারী ভ্যালোরেন্ট ল্যান চ্যাম্পিয়ন দল সেলেস্টিয়ালস।
দেশের ই-স্পোর্টসে প্রথমবারের মতো পুরুষ গেমারদের পাশাপাশি স্বতন্ত্রভাবে টুর্নামেন্ট খেলেছে নারী গেমাররাও। রাজধানীর অদূরে পূর্বাচলে বেসিস সফটএক্সপোর ১৭তম আসরে গেমিং টেন্টে কি-বোর্ড-জয়স্টিকে ঝড় তুলেছেন ৫৫০ ই-স্পোর্টস ম্যান। অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৫০ জনই ছিলেন নারী। ভ্যালোরেন্ট গেমে আট টিমে অংশ নিয়ে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি, রবিবার গ্র্যান্ড ফিনালেতে নেমেছিলেন তিনটি দলের ১৮ নারী খেলোয়াড়।
সফটএক্সপোর শেষ দিন বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম নারী ই-স্পোর্টস চ্যাম্পিয়নশিপ আয়োজন করে বেসিস। এতে বিজয়ী হয়েছে ‘টিম সেলেস্টিয়ালস’। প্রথম রানার্সআপ হয়েছে ওয়াসাবি সাইরেন এবং সেকেন্ড রানার্সআপ টিম জেটস অফ।
৫০ জন নারীর আটটি টিম ই-স্পোর্টসে অংশগ্রহণ করে। সেখান থেকে প্রাথমিক বাছাইয়ে তিনটি টিম ফাইনালে ভ্যালোরেন্ট পিজি গেমে অংশ নেয়। টুর্নামেন্টে ভ্যালোরেন্ট পিজি গেম জয় করে ছয় নারী গেমার জিতে নিয়েছেন ট্রফির পাশাপাশি এক লাখ টাকা। সেরা খেলোয়াড় হয়েছেন রিমসা ইকবাল যিনি গেমিং জগতে উজিবুজি নামে পরিচিত, তিনি পেয়েছেন ১০ হাজার টাকার ডামি চেক। চ্যাম্পিয়ন দলের বাকি নারী সদস্যরা হলেন সাবরিনা ইসলাম, তাজরীন আলম, আশরাত কবির মীম, জেরিন নায়ার ও নিশাত নিতু।
সেরা খেলোয়াড়ের তকমা অর্জন করেছেন বিজয়ী দলের সদস্য রিমসা ইকবাল। সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হওয়ার অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে রিমসা বলেন, ‘চ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বপ্নটা ছিল বহুদিনের। টুর্নামেন্টের পুরোটা সময়জুড়েই নানা প্রতিবন্ধকতা ছিল, এর মাঝেই নিজের সামর্থ্য ও দক্ষতা প্রমাণ করতে পেরেছি। টিমের প্রতিটি সদস্যের মধ্যকার বোঝাপড়া ছিল খুবই ভালো। চ্যাম্পিয়ন হতে পেরে টিম সেলেস্টিয়ালসকে নিয়ে আমি অত্যন্ত গর্বিত।’
রিমসা ইকবাল, সদস্য, টিম সেলেস্টিয়ালস
প্রথমবারের মতো আয়োজিত ই-স্পোর্টস টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে রিমসা বলেন, ‘সম্পূর্ণ আয়োজন ছিল অত্যন্ত সুশৃঙ্খল ও পরিপাটি। মূলত নারী গেমারদের চারটি ক্যাটাগরিতে অংশগ্রহণের সুযোগ ছিল যেমন ভ্যালোরেন্ট, সিএসগো, মোবাইল লেজেন্ডস ও ফিফা। এ ছাড়া দর্শক যারা ছিল তারা অনেক বেশি সমর্থন জুগিয়েছিল, যা আমাদের আত্মবিশ্বাস কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিয়েছিল। সবকিছু মিলিয়ে বেশ অন্যরকম ও ভালো একটি অভিজ্ঞতা ছিল, শিখতে পেরেছি অনেক কিছু।’
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে নারী ই-স্পোর্টস খেলোয়াড়দের সম্ভাবনা কীভাবে দেখছেন- এ ব্যাপারে রিমসা ইকবাল বলেন, ‘আমি মনে করি, বর্তমানে বাংলাদেশে নারী ই-স্পোর্টস খেলোয়াড়দের গুরুত্ব উপলব্ধি করতে শুরু করেছে। শুধু নারী ই-খেলোয়াড়ই নয়, সব ই-স্পোর্টস খেলোয়াড়দের গুরুত্ব দিন দিন বেড়েই চলেছে। এভাবে এগোতে থাকলে আমরা শিগগিরই বিশ্বের ই-স্পোর্টস জগতে নিজেদের আধিপত্য ও বিশ্বমঞ্চে দেশের নাম তুলে ধরতে সক্ষম হব।’
নতুন নারী ই-স্পোর্টস খেলোয়াড়দের উদ্দেশে রিমসা ইকবাল দিয়েছেন বেশ কিছু পরামর্শ। তিনি বলেন, যারা ই-স্পোর্টসে অংশগ্রহণ করতে চায়, তাদের বলতে চাই, থেমে না থেকে চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। বেশি বেশি অনুশীলনের মাধ্যমে ই-স্পোর্টসের দক্ষতা বৃদ্ধি করা সম্ভব। যদি কেউ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার উদ্দেশ্যে খেলায় অংশগ্রহণ করে এবং লক্ষ্যে স্থির থাকে, অবশ্যই সে বিজয়ী হতে পারবে। আগ্রহীদের উদ্দেশে বলতে চাই, ই-স্পোর্টসে অংশগ্রহণ করলে নারী খেলোয়াড়দের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাবে- এভাবেই নতুন কারও ভিড় থেকেই উঠে আসবে পরবর্তী সেলেস্টিয়ালসরা।
এ টুর্নামেন্টে নারীদের পাশাপাশি পুরুষদের প্রায় ৮০টি টিমের ৫০০ জন অংশ নিয়েছেন। ভ্যালোরেন্ট, সিএসগো, এমএলবিবি এবং ফিফা গেমে অংশ নেন তারা। সিএসগো গেমে ই-স্পোর্টস চ্যাম্পিয়নশিপে বিজয়ী হয়েছে টিম গ্রেড বাইবারস, রানারআপ হয়েছে ‘ম্যান আই লাভ ফিশিং’। ভ্যালোরেন্ট গেমে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে টিম এক্সেজেলিস স্পোর্টস, রানারআপ হয়েছে টিম হেড হান্টার্স। অন্যান্য ক্যাটাগরি মিলিয়ে মোট ছয় লাখ টাকার পুরস্কার দেওয়া হয়েছে।
ই-স্পোর্টস চ্যাম্পিয়নশিপের মূল আয়োজক অ্যাঙ্গুলার ই-স্পোর্টস লিমিটেড। আয়োজক সংস্থা অ্যাঙ্গুলার ই-স্পোর্টস লিমিটেড কো-ফাউন্ডার সোলাইমান হাসান জানান, ‘এই ইভেন্টে আমরা প্রচুর সাড়া পেয়েছি। ই-স্পোর্টসের ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তার পেছনে একটি বড় কারণ প্রযুক্তি ও ইন্টারনেটের বিস্তৃতি। দ্রুতগতির ইন্টারনেট সংযোগ যেমন আমাদের ভারচুয়ালি একে অন্যের সঙ্গে যুক্ত থাকতে সাহায্য করছে, অন্যদিকে যেকোনো প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়াও সহজ হয়ে উঠছে। তিনি মনে করেন সম্ভাবনাময় এই ইন্ডাস্ট্রির জন্য অল্প সময়ের মধ্যেই সক্রিয় দর্শকশ্রেণি তৈরি হয়েছে, যাতে আরও বেশি স্পন্সর ও বিনিয়োগকারীরা আকৃষ্ট হচ্ছেন।’
ছয় সদস্যের বিজয়ী দলের সদস্যরা হলেন রিমসা ইকবাল, সাবরিনা ইসলাম, জারিন নাওয়ার, নিশাত নিতু ও এশরাত কবির মীম। রিমসা ইকবাল ও লেভেল সম্পন্ন করে জিইডি পরবর্তী পেশা হিসেবে গেমিং অনুসরণ করছেন এবং পাশাপাশি নিজের ব্যবসা পরিচালনা করছেন। অন্যদিকে সেলেস্টিয়ালস টিমের আরেক সদস্য জারিন নাওয়ার, গ্রীণ লাইফ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ইন্টার্ন ডাক্তার হিসেবে নিযুক্ত আছেন। এশরাত কবির মীম, শান্ত মারিয়াম ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজি থেকে ইংরেজি বিভাগে স্নাতক সম্পন্ন করেছেন। নিশাত নিতু, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএতে অধ্যয়নরত আছেন। আরেক সদস্য তাজরীন আলম, তিনি সম্প্রতি এ লেভেল সম্পন্ন করেছেন।