কর্মজীবী নারী
আসমাউল হুসনা
প্রকাশ : ০৬ মার্চ ২০২৩ ১২:০৮ পিএম
কর্মজীবী নারীদের জন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পিরিয়ডকালীন ছুটি ঘোষণা করেছে
পিরিয়ড, তলপেটে ব্যথা, রক্তক্ষরণ প্রতিমাসেই এই বিষয়ের সম্মুখীন হতে হয় নারীদের। তবে ছোটবেলা থেকেই মায়েরা তার কন্যাসন্তানদের এ বিষয় নিয়ে এমনভাবে শিক্ষা দেনÑ যেগুলো পরে তাদের মধ্যে সৃষ্টি করে জড়তা। আমাদের সমাজে পিরিয়ড মানেই বোঝানো হয় গোপন কিছু। এই জড়তার জন্য দৈনন্দিন কাজের ভিড়ে চাপা পড়ে যায় এর অসহনীয় কষ্টের কথা।
রাজধানীর একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আছেন নাসিমা আলম। তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কর্মজীবনে পিরিয়ডকালীন সমস্যা উপেক্ষা করেই কাজ চালিয়ে যেতে হয় তাকে। এ সময় যাতায়াত করতে সম্মুখীন হতে হয় বিবিধ সমস্যার। এমনকি অফিসেও প্যাড বা স্যানেটারি ন্যাপকিন বদলাতে পড়তে হয় বিপাকে। তীব্র পেট ব্যথা নিয়েও হাসিমুখেই কাজ করতে হয়। এগুলো নিয়ে কারও সঙ্গে আলোচনা করা যায় না। ছুটি তো কল্পনার বাইরে।
পিরিয়ড বা ঋতুচক্র নারীদেহের একটি হরমোনজনিত ক্রিয়া। শারীরিক এই ক্রিয়া সাধারণত ৯-১৩ বছরে শুরু হয় এবং প্রতিমাসে নির্দিষ্ট দিন পর্যন্ত স্থায়ী হয়ে থাকে। পিরিয়ড হওয়ার আগে সাধারণত শরীরে ফোলা ভাব, পেট ব্যথা, কোমরে ব্যথা, পায়ে ব্যথাসহ বিভিন্ন উপসর্গ দেখা দেয়। এটা ৩-৫ দিন স্থায়ী হলেও কারও কারও ক্ষেত্রে এটি ৭ দিন পর্যন্ত স্থায়ী হয়। পিরিয়ড হওয়ার প্রথম দুদিন গা, হাত-পা ব্যথা, মাথা ব্যথা, ক্র্যাম্প ও হজমের মতো নানা শারীরিক সমস্যাসহ মানসিক স্বাস্থ্যেরও অবনতি দেখা দেয়।
তবে বিশেষ এই দিনগুলোতে বিশ্রাম নেওয়ার কতটুকুই-বা সুযোগ থাকে মেয়েদের। সারা দিন ঘরের কাজের পাশাপাশি কর্মজীবী নারীদের জন্য এই দিনগুলো আমাদের দেশে পরিস্থিতিতে খুব একটা অনুকূল না হলেও বিশ্বের বিভিন্ন দেশ বিশেষ এই সময়ে ছুটি ঘোষণা করেছে।
১৯৪৭ সালে জাপান এই মাসিক ছুটি প্রবর্তন করে। ১৯৪৮ সালে ইন্দোনেশিয়া প্রাথমিকভাবে ছুটি বিষয়টি গ্রহণ করে। ২০০৩ সালে এটি পুনর্গঠন করা হয়। পুনর্গঠিত আইনে বলা হয়, মহিলা শ্রমিকদের মধ্যে যারা তাদের ঋতুচক্রের ব্যথা অনুভব করে তারা প্রথম দুদিন কাজ করতে বাধ্য নয়।
দক্ষিণ কোরিয়ার শ্রমআইনের ৭৩ নাম্বার অনুচ্ছেদে ‘শারীরিক ছুটি’ প্রদান করা হয়। যার অধীনে মহিলাকর্মীদের মাসিক একদিনের ছুটি বরাদ্দ করা হয়। এ ছাড়াও তাইওয়ান, ভিয়েতনাম, বিহার, জাম্বিয়াসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এই ছুটি বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
সম্প্রতি স্পেনেও নারীদের জন্য সবেতনে মাসিক ছুটি ঘোষণা করা হয়। প্রতিমাসে ৩ থেকে ৫ দিন ছুটির প্রস্তাব করলেও স্পেন সরকার পিরিয়ড চলাকালীন পুরো সময়টাই ছুটি ঘোষণা করেছেন। তবে সে ক্ষেত্রে দেখাতে হবে ডাক্তার অনুমোদিত সনদ।
যেখানে বিশ্ব এতটা এগিয়েছে, সেখানে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটেও আনা দরকার পরিবর্তন। পিরিয়ড সম্পর্কিত কুসংস্কার ভেঙে এ দেশেও তৈরি হোক নারীবান্ধব পরিবেশ।