× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

উদ্যোগ

আলো ছড়াচ্ছেন পরিবেশকর্মী মামুন

মুশফিকুর রহমান

প্রকাশ : ১২ মার্চ ২০২৩ ১২:৫৪ পিএম

মামুন গ্রামে গ্রামে গিয়ে সব বয়সের মানুষকে পরিবেশ রক্ষায় সচেতন করেন 	 ছবি : লেখক

মামুন গ্রামে গ্রামে গিয়ে সব বয়সের মানুষকে পরিবেশ রক্ষায় সচেতন করেন ছবি : লেখক

শীতকাল কিংবা গ্রীষ্মকাল। ঘড়ির কাঁটায় যখন বাজে সকাল ৭টা। মাহমুদুল ইসলাম মামুন বাড়ি থেকে সাইকেলে চড়ে বেরিয়ে পড়েন বিভিন্ন গ্রামের উদ্দেশে। শুধু সাইকেল নয়, সাইকেলে থাকে বিভিন্ন লেখকের চমৎকার সব বই এবং গাছের চারাসহ বিভিন্ন কিছু। মামুন গ্রামে গ্রামে গিয়ে এসব বই দিয়ে আসেন। আবার কেউ বই পড়ে ফেরত দিলে তাকে পুরস্কার হিসেবে দেন গাছের চারাও।

এ ছাড়া রাস্তায়, দোকানে, বাড়ির আঙিনায় কিংবা খোলা আকাশের নিচে আসর করে বসে শিশু-কিশোরসহ সব বয়সের মানুষ নিয়ে বই পাঠ করে শোনান, পরিবেশ রক্ষায় সচেতন করেন, বৃক্ষ রোপণ করতে উৎসাহিত করেন এবং আলোচনা করেন নানা বিষয়ে। দুই দশক ধরে বিনা পয়সায় এসব করছেন মামুন।

সকাল গড়িয়ে যখন দুপুর। তখন বাজারে উচ্ছিষ্টাংশ সংগ্রহ করে রিসাইকেল করতেও দেখা যায় তাকে। বাজারের আবর্জনা, মুরগি কাটার পর উচ্ছিষ্ট নাড়িভুঁড়ি, ডিমের খোসা ইত্যাদি তুলে বালতিতে করে নিয়ে যান। এগুলো দিয়ে আবার পাখি এবং কুকুরের খাবার তৈরি করেন। তাই কুকুর, পাখিরাও ভিড় করে তার বাড়িতে। আবার সন্ধ্যা হলেই শিক্ষার্থীরা হাজির হয়। তাদের বিনা পয়সায় পাঠদান করেন মামুন।

পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার আজিজনগর গ্রামে বেড়ে ওঠেন মাহমুদুল ইসলাম মামুন। তিনি এলাকায় পরিবেশবন্ধু, শিক্ষাকর্মী, বৃক্ষবন্ধু হিসেবেও বেশ পরিচিত। রংপুর কারমাইকেল কলেজ থেকে বাংলা সাহিত্যে স্নাতকোত্তর শেষ করেন তিনি। ছাত্রজীবন শেষে পরিবেশের এত অনিয়ম দেখে চাকরির দিকে না ছুটে পরিবেশ রক্ষায় কাজ করছেন।

পরিবেশকর্মী মাহমুদুল ইসলাম মামুন জানান, ছোটবেলায় স্কুল ছুটি দিলেই নদীর ধারে বসে পরিবেশের কথা ভাবতাম। দেখতাম পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। তখন থেকেই পরিবেশ বিপর্যয় রক্ষায় কাজ করার ইচ্ছা জাগে। তাছাড়া শৈশব থেকেই বই পড়তাম, গাছ লাগাতাম।

মামুন বাড়িতে হাঁস-মুরগি পালন করে। সেসব পালন করে যা আয় হয় তা দিয়েই বই, গাছের চারা কিনে শিশু-কিশোরদের বই দেন এবং গাছের চারা উপহার দেন তিনি। তার এসব কাজে মা ও বড় ভাই সব সময়ই উৎসাহিত করেন। তবে তার বাবা আগে বাধা দিলেও পরবর্তী সময়ে মেনে নিয়েছিলেন। শৈশব থেকেই গাছ লাগানো, বই পড়া ও প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসা তার। মামুন কারোর কাছে পাগল, আবার কারোর কাছে হয়ে উঠেছেন হিরো। তার ঝুলিতে জমিয়েছেন মজার নানা স্মৃতি আর অভিজ্ঞতা। মামুন অনেকটা স্মৃতিকাতর হয়ে বলেন, অনেকেই বলত মামুন বোধ হয় পাগল, মাথায় সমস্যা আছে। কিন্তু পরে তারাই আবার ভালো বলেন। আবার বাহিরে বের হলেই ছোটরা মামুন ভাই বলে চিৎকার করে ওঠে।

করোনাকালে যখন থমকে গিয়েছিল বিশ্ব। তখনও থেমে থাকেননি মামুন। তিনি গ্রামে-গ্রামে তার সাইকেল নিয়ে ঘুরে শিশু-কিশোরদের স্বাস্থ্যবিধি মেনেই বই পড়িয়েছেন, গাছের চারা উপহার দিয়েছেন এবং শিখিয়েছেন অনেক কিছু। তিনি মনে করেন, শুধু উচ্চশিক্ষিত হলেই হবে না, বরং মানবিক শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে গড়ে উঠতে হবে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির সময়ে আশার আলো দেখাচ্ছেন পরিবেশকর্মী মামুন। তিনি বলেন, অগণিত মানুষ এখন আনাচকানাচে সবজি করে খাচ্ছে। তাদের চারা দিয়েছি এবং এখনও দিয়ে যাচ্ছি। থেমে নেই বই পড়ানোও। সমানতালে চলছে বই পড়ানোসহ নানাবিধ কাজ।

মামুন আরও জানান, মানুষের দায়িত্বহীনতার কারণে পরিবেশ দূষিত হয়ে উষ্ণায়ন বেড়ে জলবায়ু পরিবর্তন হচ্ছে। ফলেই আজ নানাবিধ দুর্যোগে জর্জরিত পৃথিবী। আবার পলিথিনের ব্যবহারও পরিবেশকে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। কিন্তু মানুষ উচ্চশিক্ষিত হয়েও এসব করছে। এজন্য আমি কাজ করছি এবং মানুষদেরও সচেতন করেছি।

তার কাজের জন্য একজন সাদা মনের মানুষ এবং ব্যতিক্রমী মানুষ হিসেবে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন পরিবেশবন্ধু মামুন। ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে তিনি জানান, টাকা-পয়সা, বাড়ি-গাড়ি করার কোনো স্বপ্ন নেই তার। তিনি পরিবেশকর্মী হয়ে পরিবেশ রক্ষায় কাজ করে যাবেন এবং আদর্শ মানুষ গড়তে শিশু-কিশোরদের বই পড়াবেন আজীবন।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা