× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

এক বিস্ফোরণে উড়ে যায় সাতজন

অনুলিখন : অরূপ রতন শীল

প্রকাশ : ২০ মার্চ ২০২৩ ১২:৪৭ পিএম

আপডেট : ২০ মার্চ ২০২৩ ১২:৪৯ পিএম

বীর মুক্তিযোদ্ধা
আরশাদ সায়ীদ

একজন গেরিলা যোদ্ধা
বগুড়া শহরের সূত্রাপুরের বাসিন্দা
তরঙ্গপুর ক্যাম্পে কমান্ডো প্রশিক্ষণ নেন
 ১৯ বছর বয়সে যুদ্ধে গিয়েছিলেন
সেক্টর : ০৭
সেক্টর কমান্ডার : শহীদ মেজর নাজমুল হক
ও মেজর (পরে লে. কর্নেল) কাজী নুরুজ্জামান, বীর উত্তম

বীর মুক্তিযোদ্ধা আরশাদ সায়ীদ একজন গেরিলা যোদ্ধা বগুড়া শহরের সূত্রাপুরের বাসিন্দা তরঙ্গপুর ক্যাম্পে কমান্ডো প্রশিক্ষণ নেন ১৯ বছর বয়সে যুদ্ধে গিয়েছিলেন সেক্টর : ০৭ সেক্টর কমান্ডার : শহীদ মেজর নাজমুল হক ও মেজর (পরে লে. কর্নেল) কাজী নুরুজ্জামান, বীর উত্তম

১৯৭১ সালে আমি ঢাকা মেডিকেল কলেজের ছাত্র। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের পর বুঝতে পারি পাকিস্তান ভেঙে যাচ্ছে। বাংলাদেশ নামক নতুন একটা দেশ গড়তে যাচ্ছে। এরপর আমরা ভারতে গিয়ে প্রশিক্ষণ নিই। আমাদের সেক্টর কমান্ডার ছিলেন ওয়ালেস ভাই। উনি আমাদের দেড় মাসের কমান্ডো প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন। এরপর উনি আমাদের সাতটি কাজ দিয়ে বগুড়ায় পাঠালেন। কাজগুলো খুব ভয়ংকর। সেক্টর কমান্ডারকে মারতে হবে, ট্যাংক, জিপ উড়িয়ে দিতে হবে। ব্রিজ ভাঙতে হবে। উনি আরও বলেছিলেন, আজ পর্যন্ত এখান থেকে যত মুক্তিযোদ্ধা গেছে- তারা রাজাকার মারা আর দু-একটা পাকসেনা মারা ছাড়া বড় কিছুই করতে পারেনি।

আমরা নৌপথে বগুড়ায় ফিরে প্রথমে হাটশেরপুরে সামাদ নামের এক দর্জিসাহেবের বাসায় উঠেছিলাম। এর পর ওয়ালেস ভাই ফারুক নামের একজনকে নিয়ে এলেন। প্রথমে ওনাকে দেখে সন্দেহ হলো স্পাই নাকি? নিজেই পরিচয় দিলেন উনি একজন সাবেক পাইলট অফিসার। আমাদের সঙ্গে যুদ্ধ করতে চান। উনি বললেন, আমাদের সঙ্গে মাইন আছে। আমরা হাটশেরপুর থেকে সাবগ্রাম এলাকায় চলে আসব। ট্রেন লাইনের নিচে মাইন দিব। বগুড়া-গাবতলী রাস্তার নিচে মাইন দিব। এই পরিকল্পনা করে আমরা বেরিয়ে এলাম। এর মধ্যে বৃষ্টি শুরু হলো। এঁটেল মাটি আর পিচ্ছিল রাস্তায় আমরা ধপাধপ পড়া শুরু করলাম। ফারুক ভাই কোনো কথাই শোনেন না। বললেন ঘণ্টায় চার মাইল যাব। আমরা বললাম, ফারুক ভাই একটা লোক কি এক ঘণ্টায় চার মাইল যেতে পারবে? এভাবে বিশ মাইল রাস্তা পাড়ি দেওয়া সম্ভব? ফারুক ভাই বললেন, ঠিক আছে আমরা তিন মাইল করে যাব। বৃষ্টি, বাধা এসব দেখে উনি পরে বললেন, এভাবে আর যাওয়া যাবে না। সোজা রাস্তা ধরতে গিয়ে আমরা যখন জমির মধ্যে লাফ দিলাম, সেই জমিতে বড় বড় পাটের গোড়া লেগেছিল। আমার জুতা দেবে গেল। এক পাট জুতা নিয়েই দৌড়ালাম। সেই রাতে উল্টাপাল্টা দৌড়ানোর কারণে আমরা গন্তব্যস্থলে পৌঁছাতে পারিনি। এরপর দেখি ওখানে এক ভদ্রলোক দাঁড়িয়ে আছেন। উনি  আমাদেরকে বললেন, আজকে আপনারা পৌঁছাতে পারবেন না। ইতোমধ্যে রাত ১২টা বেজে গেছে। এখান থেকে আপনাদের সাবগ্রাম যেতে ভোর চারটা বেজে যাবে। তখন ফিরে আসা আপনাদের জন্য সমস্যা হবে। এর চেয়ে আপনারা আজ রাতে আমার বাসায় থাকেন। আমি রাস্তাটা দেখে আসি। পরদিন আপনারা যাবেন। আমাদের সন্দেহ হওয়ার পরেও তার বাসায় ছিলাম। সত্যি তিনি আমাদের সহযোগিতা করেছিলেন। ওনার সঙ্গে যখন ওনার দেখানো রাস্তায় গেলাম। আমাদের রাস্তাটা ভুল ছিল। কারণ ওই রাস্তায় পাক আর্মিরা একটা পুলে পাহারা দিত। সেখানে আমরা ধরা পড়ে যেতাম। উনি আমাদের নৌকা দিয়ে নদী পার করে সাবগ্রামের কাছে নামিয়ে দিলেন। ওখানে আমরা প্রায় আধা মাইল রাস্তা ক্রলিং করায় আমাদের হাত-পা ছিলে যাচ্ছিল। উপায় নাই। মাথা উঁচু করা যাচ্ছিল না। সন্দেহ হচ্ছিল ওই ট্রেন লাইনের ওপর কোনো আর্মি গার্ড থাকবে। আমাদের সঙ্গে বগুড়া জিলা স্কুলের দুলাল ছিল। আমরা তিন-চারজন মিলে মাইন সেট করার পর ফারুক ভাই বললেন, ঠিক যখন ট্রেন উড়ে যাবে তখন কিন্তু ওরা বাই রোডে আসার চেষ্টা করবে। অর্থাৎ রাস্তার ওপরেও লাগাও। তারপর বললাম, ফারুক ভাই রাস্তার ওপর যে আমরা লাগাব যদি বাঙালি কেউ গরুর গাড়ি নিয়ে ওঠে। ফারুক ভাই বললেন, নিয়তি যদি তাই থাকে এতে কিছু করার নেই। আমরা যখন ফিরে আসছি একজন বললেন, আমি থেকে ফলাফল দেখে যাব। আপনারা হাটশেরপুর ফিরে যান।’

গেরিলা কমান্ডোতে আমাদের শেখানো হয়েছে হিট এবং রান পলিসি। কোনো সরাসরি যুদ্ধে যাবে না। আমরা প্রস্তুত করে দিয়ে ফিরে আসছি। আসার পথে ওই বাঙালি ঘাটের ওখানে একজন হিন্দু ঘাটিয়াল ছিল। উনি আমাদের হাটশেরপুর পাঠাচ্ছেন। এর মধ্যে বিকাল হয়ে গেছে। আমরা যখন হাটশেরপুরে ফিরি, দেখি অনেক লোক আমাদের দিকে তাকিয়ে কি যেন বলার চেষ্টা করছে। আমরা ঘাবড়ে গেলাম। আমাদের পিছনে কি পাকিস্তানি সৈন্য? বারবার পিছনে তাকিয়ে দেখি- না। কী ব্যাপার? তখন অনেকে দৌড়ে এসে আমাদের দিকে সবাইকে ঘাড়ে তুলে নাচানাচি করছে। আমরা কিছুই জানি না। ব্যাপারটা কি ঘটেছে? এর মধ্যে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই ছেলেটা চিৎকার করে বলছে, ‘ট্রেন লাইনের কিছু হয়নি। ট্রেন ওপর দিয়ে চলে গেছে। বৃষ্টির কারণে মাইন ড্যাম হয়ে গেছিল। কিন্তু ট্রেন চলে গেছে। ট্রেনের কিছুই হয়নি। এরপরই বাই রোডে সাতজন আর্মিসহকারে একটি গাড়ি যাচ্ছিল। সেখানে একজন ক্যাপ্টেনও ছিল। ওই মাইন ট্রাপ হয়ে যায়। ট্রাপ হওয়ার পর আমার চোখের সামনে তালগাছের ওপরে গাড়িটা উড়ে যখন ডিগবাজি খেয়ে পড়ল। আমি দৌড়ে গিয়ে গুনে দেখি সেখানে সাতজন পাকি সেনা। একজন মনে হয় অফিসার ছিল। তারা সবাই মারা গেছে ওখানে।’

এরপর আমরা গ্রামের মধ্যে ফিরে গেলাম।ওই ঘটনার পর এত উৎসাহ পেলাম যে, আসলেই যদি মানুষের ভেতরে ইচ্ছা বা আকাঙ্ক্ষাকে বড় করে রাখে, তাহলে সে অনেক বড় কাজ করতে পারে। প্রথম কাজই সফলভাবে করতে পেরেছিলাম। আমাদের সেক্টর কমান্ডার মেজর নাজমুল হক সাহেব এত খুশি হয়েছিলেন যে, আমরা যাওয়ার পর বলেছিলেন যে তোমরা যা চাও তাই দিব। এটাই ছিল যুদ্ধে আমার প্রথম সফল অপারেশন।

অনুলিখন : অরূপ রতন শীল

স্টাফ রিপোর্টার, বগুড়া অফিস

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা