× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

গেরিলা আক্রমণে ২৫০ জন পর্যুদস্ত

অনুলিখন : আমিরুল আবেদিন

প্রকাশ : ২৩ মার্চ ২০২৩ ১৩:২৭ পিএম

বীর মুক্তিযোদ্ধা
হায়দারুজ্জামান খান জন্মস্থান : উত্তর তোপখানা
উপজেলা : বানিয়াচং
জেলা : হবিগঞ্জ
বর্তমানে তিনি বানিয়াচং ২নং উত্তর-পশ্চিম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান
মুক্তিযুদ্ধে দাশ পার্টির হয়ে বানিয়াচং থানা থেকে শুরু করে টেকেরঘাট পর্যন্ত অসীম সাহসিকতায় যুদ্ধ করেছেন
সেক্টর : ৫
সেক্টর কমান্ডার : মেজর (পরে লে. জেনারেল) মীর শওকত আলী, বীর উত্তম
সাব- সেক্টর কমান্ডার : এমএ মোতালেব

বীর মুক্তিযোদ্ধা হায়দারুজ্জামান খান জন্মস্থান : উত্তর তোপখানা উপজেলা : বানিয়াচং জেলা : হবিগঞ্জ বর্তমানে তিনি বানিয়াচং ২নং উত্তর-পশ্চিম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুক্তিযুদ্ধে দাশ পার্টির হয়ে বানিয়াচং থানা থেকে শুরু করে টেকেরঘাট পর্যন্ত অসীম সাহসিকতায় যুদ্ধ করেছেন সেক্টর : ৫ সেক্টর কমান্ডার : মেজর (পরে লে. জেনারেল) মীর শওকত আলী, বীর উত্তম সাব- সেক্টর কমান্ডার : এমএ মোতালেব

৭ মার্চ ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধু যে ঐতিহাসিক ভাষণ দিয়েছিলেন তা এখনও আমার মনে শিহরন জাগায়। ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’- বঙ্গবন্ধুর কণ্ঠে উচ্চারিত এ বাক্যের ভেতর সঞ্জীবনী ছিল, যা আমাদের  অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে। যুদ্ধের ময়দানে সুযোগ পেলেই আমরা এ ভাষণের রেকর্ড শুনতাম। বঙ্গবন্ধুর ভাষণের কথায় আমাদের রক্ত টগবগিয়ে উঠত। আমি অবশ্য মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করি যুদ্ধ শুরু হওয়ার কিছুদিন পর। বানিয়াচংয়ে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী আসার পর দায়িত্বপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন ফুলতলীর এক মৌলানার সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে পাঞ্জাবি ক্যাপ্টেন বলেন, আজ থেকে পূর্ব পাকিস্তানে যা কিছু আছে সবই গনিমতের মাল। তার কথা শুনে বাবা দ্রুত বাড়ি ফিরে আসেন। ফিরেই সোজাসুজি আমাকে বলেন, আর দেরি করা যাবে না। যুদ্ধে তোমাকে নামতেই হবে। দেশের মুক্তির জন্য ঝাঁপিয়ে পড়। মরলে শহীদের মর্যাদা পাবে আর বাঁচলে গাজি।

এভাবেই মাত্র ২১ বছর বয়সে আমার মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ। আমি ৫ নম্বর সাব-সেক্টরের অধীনে যুদ্ধ করেছি। তখন ৫ নম্বর সেক্টরের কমান্ডার ছিলেন মীর শওকত আলী আর সাব-সেক্টরের দায়িত্বে ছিলেন মেজর এমএ মোতালেব। যুদ্ধের ময়দানে যাওয়ার আগে আমাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়। আমাদের তখন ৬০ জনের বিরাট দল। দলে ১০-১১ জন হিন্দু ছেলে ছিল, বাকিরা মুসলমান। প্রশিক্ষণের জন্য আমাদের ভারতে যেতে হয়নি। ৫ নম্বর সাব-সেক্টরেই আমাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। ভারতীয় প্রশিক্ষক এক মাস আমাদের প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন। তিনি আমাদের কঠোর নজরদারিতে রাখতেন। ভুলচুক হলেই ধমক দিতেন। যুদ্ধের সময় গাফিলতির সুযোগ নেই তা বোঝাতেই যে আমাদের সঙ্গে এমন ব্যবহার করতেন তা আজ বুঝতে পারি। প্রশিক্ষণ শেষ হওয়ার শেষ দিকে তিনি একটা কথা বলেছিলেন যা আজও আমার মনে গেঁথে আছে। তিনি বলেছিলেন, ‘একটা কথা মাথায় রাখবে। আগে নিজের জান বাঁচাবে তারপর দুশমন খতম করবে। যদি তোমরাই না বাঁচো তাহলে দুশমন হটাবে কে? এটাই আমার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কমান্ড।’

বদলপুর, খাইল্লাজুড়ীসহ হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জ, বানিয়াচং, তাহেরপুর থেকে টেকেরঘাট পর্যন্ত আমাদের অপারেশন এরিয়া নির্ধারণ করা হয়। শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা জগৎজ্যোতি দাশ (দাশ পার্টির কমান্ডার) ও রমেশচন্দ্র পাণ্ডে দোলনের যৌথ কমান্ডে আমরা বানিয়াচংয়ে যুদ্ধ করতে আসি। গেরিলা হামলার কিছুদিন আগে বানিয়াচংয়ের বদলপুরে আত্মগোপনে থাকতে হয়েছিল। তখন পাকিস্তানিরা একটা ভুল খবর পেল। বানিয়াচং উপজেলার উত্তর জনপদ সনাতন ধর্মাবলম্বী অধ্যুষিত এলাকা মাখালকান্দিতে মুক্তিযোদ্ধারা আত্মগোপন করে আছেÑ এ খবর পেয়ে তারা সেখানে হামলা করে। তাদের হামলায় অনেকেই প্রাণ হারান। এ ঘটনায় আমরা ভীষণভাবে অসহায়বোধ করি। আমাদের কিছুই করার ছিল না। একটা ভুল তথ্যের কারণে এত মানুষের প্রাণ গেল। আমাদের ভারী অস্ত্রশস্ত্র সরবরাহ করা হয়েছিল। টেকেরঘাট থেকেই সব অস্ত্র, গোলাবারুদ আসত। মাখালকান্দিতে নৃশংস আক্রমণের পর আমরা সিদ্ধান্ত নিই, বানিয়াচং দুশমনের দখলমুক্ত করতে হবে। সেজন্য রাত জেগে একটি পরিকল্পনা সাজিয়ে ফেলা হয় এবং যৌথ কমান্ডে পরদিন আমরা বানিয়াচংয়ে অবস্থিত পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ওপর হামলা করি। পাকিস্তানি বাহিনী বাদেও আলবদর, আলশামস ও রাজাকাররাও ছিল। সব মিলিয়ে প্রায় ২৫০ জনকে আমরা কজন গেরিলা আক্রমণে পর্যুদস্ত করে ফেলি। আমাদের আক্রমণ প্রতিহত করতে না পেরে একসময় পাকিস্তানি সেনাবাহিনী আত্মসমর্পন করতে বাধ্য হয়। অবস্থা বেগতিক দেখে রাজাকার, আলবদর ও আলশামসের সদস্যদের অনেকে পালিয়ে যায়। এদের মধ্যে অল্প কজনকে আমরা আটক করতে সক্ষম হই। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে অস্ত্রসহ আমরা আটক করতে পেরেছিলাম। তারপর বানিয়াচংয়ের প্রেক্ষাপট পাল্টে যায়। ওই অপারেশনটি ছাড়াও আমি যে সেক্টরে যুক্ত ছিলাম সেখানে আরও কয়েকটি অপারেশনে অংশগ্রহণ করি। এর বাইরেও আমরা কোনো কোনো ক্ষেত্রে যুক্ত হয়েছিলাম।

বানিয়াচংয়ে আমাদের প্রথম অপারেশনের পরই হানাদার বাহিনী ও রাজাকার, আলবদর, আলশামসদের বিচরণের ক্ষেত্র গুটিয়ে যায়। বলা যায়, আমাদের ওই অপারেশনটি সেক্টরে নিয়োজিত নীতিনির্ধারকদের একটি সঠিক পরিকল্পনা ও সিদ্ধান্ত ছিল। ওই সিদ্ধান্তেরই বাস্তবায়ন করতে আমরা সম্মুখসমরে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলাম। স্বাধীনতা অর্জনের বায়ান্ন বছর পর আজও মানসপটে সেই স্মৃতি ভেসে ওঠে। দাশ পার্টিতে ৪০-৪২ জন সদস্য ছিলেন। প্রত্যেকেই অসীম সাহসিকতার সঙ্গে যুদ্ধ করেছেন। এত বছর পরও তাদের কথা মনে পড়ে। এ অভিজ্ঞতা পরে আমার অনেক কাজে এসেছে। দেশের মানুষ একজোট হলে সবকিছু করা সম্ভব। স্বাধীন দেশেও আমরা একজোট হয়ে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার এক যুদ্ধে আছি। সেই স্বপ্ন পূরণ হবেই।

অনুলিখন : আমিরুল আবেদিন


শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: protidinerbangladesh.pb@gmail.com

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: pbad2022@gmail.com

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: pbonlinead@gmail.com

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: pbcirculation@gmail.com

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা