শাহ মো. সুলতান
প্রকাশ : ২৩ মার্চ ২০২৩ ১৩:৫৬ পিএম
সিমলা শহরের সৌন্দর্য সবাইকে মুগ্ধ করে
জ্ঞান অর্জনের বড় দুটি উপায় হচ্ছে বই পড়া ও সফর করা। তবে দ্বিতীয়টি আমার বেশি পছন্দের। একজন ভ্রমণপিপাসু হিসেবে আমি সব সময় অদেখা এবং প্রাচীনকে খুঁজে বেড়াই। আর তাই ভারতের বেশ কয়েকটি রাজ্যে (যেমন পশ্চিমবঙ্গ, দিল্লি, আগ্রা, হিমাচল প্রদেশ) ভ্রমণ করেছিলাম। রাজ্যগুলোর বিভিন্ন জায়গায় আমি প্রচুর ঘুরেছি এবং ছবি তুলেছি। তবে রাজ্যগুলোর বিভিন্ন শহর আর জায়গার মধ্যে যে রাজ্যের শহরটি আমার মনে সবচেয়ে বেশি দাগ কাটেছে তা হলো হিমাচল প্রদেশের সিমলা।
আমার এখনও মনে হয় সিমলা যেন আমাকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে। সিমলার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং এর নান্দনিকতা আমাকে এতটাই বিমোহিত করেছে যে সেখানে বারবার যেতে মন চায়। তাই এটা বলতে দ্বিধা নেই যে, হিমাচল প্রদেশের সিমলা ভ্রমণ আমার জীবনের স্থায়ী একটি অভিজ্ঞতা।
ভারতের একেকটি রাজ্যে ভ্রমণ করে ভিন্ন ভিন্ন অভিজ্ঞতা সঞ্চয় হয়। তবে হিমাচল প্রদেশের সিমলা ভ্রমণ করে আমার ভ্রমণ অভিজ্ঞতাকে উচ্চমাত্রায় নিয়ে যাই। সিমলা, উত্তর ভারতের হিমাচল প্রদেশের রাজধানী এবং সবচেয়ে জনপ্রিয় জায়গা। ২০০৮ সালে ভারতের পর্বত রেলওয়ে হিসেবে কালকা-সিমলা ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় স্থান লাভ করে।
কলকাতার হাওড়া স্টেশনের ৯ নাম্বার প্ল্যাটফর্ম থেকে রাত ৯টা ৫৫ মিনিটে হাওড়া-কালকা মেইল ট্রেনে (বর্তমান নাম ‘নেতাজি এক্সপ্রেস’) রওনা দিই। প্রায় ৩২ ঘণ্টারও বেশি সময় ট্রেন জার্নি করার পর কালকা স্টেশনে পৌঁছানো ছিল আমার জীবনে এক অন্য রকম এবং মনে রাখার মতো ঘটনা। কেননা, এত লম্বা সময় ধরে ট্রেন জার্নি কখনও করা হয়নি। এই মেইল ট্রেনে করে হাওড়া থেকে কলকা যাওয়ার পথে প্রায় ৩৭টি স্টেশনে দাঁড়ায়। আর এর ভাড়া ৬৭৫ রুপি। উল্লেখযোগ্য স্টেশনগুলো হলো : আসানসোল জংশন, মির্জাপুর, ফতেপুর, কানপুর সেন্ট্রাল, আলীগড় জংশন, ওল্ড দিল্লি, পানিপথ জংশন, আম্বালা ক্যান্ট. জংশন, চণ্ডীগড় ইত্যাদি।
কালকা স্টেশন গিয়ে পৌঁছলাম আনুমানিক ৩টার দিকে। কালকা স্টেশনে নেমে হালকা চা-বিস্কুট খেয়ে নিলাম আর কালকা থেকে সিমলা যাওয়ার টয় ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করতে থাকলাম। বলা হয়ে থাকে, সিমলায় এসে টয় ট্রেনের অভিজ্ঞতা না নিলে নাকি শিমলা ভ্রমণ অসম্পূর্ণই থেকে যায়। ভোর থেকেই কালকা থেকে সিমলা যেতে বেশ কয়েকটি টয় ট্রেন আছে। কিছু ট্রেন আছে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত, আবার কিছু আছে লোকাল ট্রেন। যাত্রী সুবিধা আর শ্রেণিভেদে নির্ভর করে সেগুলোর ভাড়া।
আমি ভোর ৬টা ২০ মিনিটের কালকা-সিমলা এনজি এক্সপ্রেস টয় ট্রেনের একটা টিকিট কেটে নিলাম ৬৫ রুপি দিয়ে। এই টয় ট্রেনের সিট নাম্বার নির্দিষ্ট করা থাকে না। যে আগে টিকিট কেটে ট্রেনে উঠবে, সে আগে সিট নিতে পারবে এবং সেই সিট তার (সিমলা পৌঁছানো পর্যন্ত তারই থাকবে)।
টয় ট্রেনটি যখন কালকাকে থেকে সিমলার উদ্দেশে ছেড়ে যায় তখন অন্যরকম এক অনুভূতি শুরু হতে থাকে। ধীরে ধীরে পারিপার্শ্বিক তাপমাত্রা ক্রমশ ঠান্ডা হতে থাকে। টয় ট্রেনটি সিমলা স্টেশনে পৌঁছানোর সময় বেশ কয়েকটি টানেল পাড়ি দেয়। ট্রেনটি যখন প্রতিটি টানেল অতিক্রম করে, তখন অন্যরকম এক রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা হয়। তা ছাড়া আমি টয় ট্রেনের জানালা দিয়ে যতবারই তাকিয়েছিলাম, ততবারই সিমলার অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আমাকে মুগ্ধ করেছিল।
প্রায় ৯০ কিলোমিটার পাহাড়ি পথ পাড়ি দিয়ে আনুমানিক ৬ ঘণ্টার পর টয় ট্রেনটি সিমলায় পৌঁছায় আর আমার সিমলা ভ্রমণ শুরু হয়ে যায়। সিমলা স্টেশনে নামার পর দুজনের সঙ্গে পরিচয় হয়, যারা অন্য রাজ্য থেকে সিমলায় ভ্রমণে এসেছেন। অতি অল্প সময়ে তারা আমার বন্ধু হয়ে যায়। তারা দুজনই আমার পুরো সিমলা ভ্রমণের সঙ্গী ছিলেন।
সিমলার আবহাওয়া মোটামুটি সব সময় ঠান্ডা থাকে। মাঝে মাঝে বৃষ্টিপাতও হয়। সিমলাতে অনেক জায়গা রয়েছে ঘুরে দেখার জন্য। সিমলার মল রোড এবং এর আশপাশের জায়গাগুলো হচ্ছে সবচেয়ে আকর্ষণীয়। মল রোডে রয়েছে প্রচুর ছোট-বড় দোকান। কেনাকাটার জন্য সিমলার মল রোড একটি উপযুক্ত জায়গা। সিমলার ঐতিহ্যবাহী টুপিসহ পরিবারের জন্য কিছু কেনাকাটা করি। জনপ্রিয় থ্রি-ইডিয়ট মুভির কিছু দৃশ্য শুট করা হয়েছিল এই সিমলায়।
দুপুরে আমরা সিমলার স্থানীয় খাবার খাই এবং খাবারগুলো সুস্বাদু ছিল। খাবারের দাম খুব একটা বেশি নয়। তারপর সিমলা শহরে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরি, প্রচুর ছবি আর কিছু ভিডিও নিই। সিমলা শহরে আমি একদিনই ছিলাম এবং সেদিনই সন্ধ্যাবেলার একটি টয় ট্রেন করে কালকায় ফিরে আসি। এরপরের গন্তব্য ছিল দিল্লির আর আরেকটি ট্রেনের টিকিট বুক করে দিল্লির উদ্দেশে রওনা দিলাম।
সিমলা সম্পর্কে কিছু কথা না বললেই নয়-
● সিমলা শহর খুব পরিষ্কার এবং সুন্দর। এই শহরে যেখানে-সেখানে ময়লা-আবর্জনা ফেলা পুরোপুরি নিষিদ্ধ।
● এই শহরের মানুষজন খুব পরিশ্রমী ও বন্ধুত্বপূর্ণ
ভ্রমণ মানুষকে যে অকৃত্রিম আনন্দ দেয়, তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ আমার এই হিমাচল প্রদেশের সিমলা ভ্রমণÑ যা আমার জীবনের স্থায়ী একটি অভিজ্ঞতা হয়ে থাকবে।