× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

স্বাধীনতার সূর্য ওঠা মুজিবনগর

গোলাম কিবরিয়া

প্রকাশ : ২৩ মার্চ ২০২৩ ১৪:৩৬ পিএম

আপডেট : ২৬ মার্চ ২০২৩ ০০:৪২ এএম

পাখির চোখে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি কমপ্লেক্স 	  ছবি : পিনু রহমান

পাখির চোখে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি কমপ্লেক্স ছবি : পিনু রহমান

মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলার ইতিহাসখ্যাত আম্রকানন বাঙালির হৃদয়ে বিশেষ স্থান করে নিয়েছে। কারণ এ আম্রকাননে স্বাধীনতার লাল সূর্য দীপ্তি ছড়িয়ে নীলাকাশ ভরে দিয়েছিল। স্বাধীনতার মাসে ঐতিহাসিক স্থানটি ঘুরে আসতে পারেন। 

আমাদের মুক্তিযুদ্ধের রাজনৈতিক প্রতিরোধের প্রথম প্রহর মুজিবনগর। স্বাধীনতার মাসে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিঘেরা জায়গাগুলোতে ঘুরে নতুন এক অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারেন। আর প্রথম পছন্দ হিসেবে বেছে নিতে পারেন বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী সরকারের রাজধানী মেহেরপুরের মুজিবনগর। মেহেরপুরের ছোট্ট শহর মুজিবনগর। এ দেশের ইতিহাসে খুবই গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে জায়গাটি। কুষ্টিয়া জেলার মেহেরপুর মহকুমার বৈদ্যনাথতলার আমবাগানে স্বাধীন-সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রথম সরকার শপথ গ্রহণ করে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রপতি এবং সৈয়দ নজরুল ইসলামকে বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করা হয়। ওইদিন অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি হিসেবে সৈয়দ নজরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ, অর্থমন্ত্রী ক্যাপ্টেন এম. মনসুর আলী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এইচএম কামারুজ্জামান শপথ গ্রহণ করেন। কর্নেল এমএজি ওসমানীকে সেনাপতি নিযুক্ত করা হয়। এ অনুষ্ঠানে ১০ এপ্রিল গঠিত গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রও পাঠ করা হয়। এরপর বৈদ্যনাথতলার নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় মুজিবনগর। ঘুরে আসুন স্বাধীনতার সূতিকাগার মেহেরপুর জেলা থেকে। 

যা দেখবেন

মুজিবনগরে মূল গেট দিয়ে ঢুকে প্রথমে দেখতে পাবেন মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি কমপ্লেক্স। ৬৬ একরের বিশাল আয়তনের নান্দনিক এই কমপ্লেক্সটিতে একটি জাদুঘর, মিলনায়তন, সংলগ্ন প্লাজা, স্বাধীনতা ক্লাব, পাঠাগার, রেস্ট হাউস, হেলিপ্যাড, পিকনিক স্পটসহ নানা সুবিধা সংযোজন করা হয়েছে। মূল কমপ্লেক্সটি চারতলা উঁচু একটি বৃত্তাকার ভবনকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়েছে, যার প্রতিটি তলায় দর্শনার্থীদের জন্য প্রশস্ত করিডর রাখা হয়েছে। করিডরে দাঁড়িয়ে নিচে তাকালে বাংলাদেশের একটি বিশাল মানচিত্র দেখতে পাওয়া যায়। কমপ্লেক্স ভবনের বাইরে কমপ্লেক্স-সংলগ্ন খোলা চত্বরে বৃত্তাকারভাবে ঐতিহাসিক ছয় দফার রূপক হিসেবে ছয়টি গোলাপবাগান, সাতই মার্চের ভাষণ, মুজিবনগর সরকারের শপথগ্রহণ, মন্ত্রিসভা, পতাকা উত্তোলন, পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণসহ ৪০ জন মুক্তিযোদ্ধার ভাস্কর্য দেখা যায়। সেক্টরভিত্তিক যুদ্ধকালীন নানা ঘটনার ছোট্ট ভাস্কর্যগুলো যেন চোখের সামনে মেলে ধরেছে ১৯৭১-এর বাংলাদেশকে। মানচিত্র স্থাপনার ঠিক বাইরে রয়েছে ১৯৭১-এর নানা ঘটনাপঞ্জির স্মারক ম্যুরাল, আছে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণরত অবস্থার ম্যুরাল, মুজিবনগর সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্তদের ভাস্কর্য, অস্থায়ী রাষ্ট্রপতিকে গার্ড অব অনার প্রদানের দৃশ্য, ১৯৭১ সালের ৪ এপ্রিল তেলিয়াপাড়ায় গঠিত মুক্তিবাহিনীর ম্যুরাল, নিয়াজির আত্মসমর্পণের চিত্র, পাকিস্তানিদের নির্যাতনের নানা দৃশ্য। বিরাটাকার দুটি পাকা দেয়ালে লিখে রাখা হয়েছে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র ও পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণপত্র। মুজিবনগর ভ্রমণের অন্যতম আকর্ষণ হলো মুজিবনগর স্মৃতিসৌধ।

মুজিবনগর স্মৃতিসৌধ 

১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল মেহেরপুর জেলার মেহেরপুর সদর থানার (বর্তমান মুজিবনগর উপজেলা) বৈদ্যনাথতলা গ্রামের ঐতিহাসিক আম্রকাননে বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী সরকারের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। ঐতিহাসিক শপথগ্রহণের স্থানে মুজিবনগর স্মৃতিসৌধ নির্মিত হয়েছে। ২৩ বছরের পাকিস্তানি সামরিক শাসকদের নিপীড়নের প্রতীকস্বরূপ এখানকার স্মৃতিসৌধে ২৩টি মিনার তৈরি করা হয়েছে। সব বয়সের মানুষ এখানে ভ্রমণ করেন। স্মৃতিসৌধ ও ঐতিহাসিক আম্রকানন যেকোনো পর্যটকের দৃষ্টি আকর্ষণ করবে। 

মুজিবনগর স্মৃতিসৌধ                                                                                 ছবি : বাবুল আব্দুল মালেক

মুজিবনগরের মানচিত্র

ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ এ স্থানের আরও তাৎপর্যপূর্ণ করে তোলার লক্ষ্যে উক্ত কমপ্লেক্সে একটি মানচিত্রের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন সেক্টরকে দেখানো হয়েছে। এই কমপ্লেক্স মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাবলির স্মারক ম্যুরাল স্থাপন করা হয়েছে। সার্বিকভাবে মুজিবনগর স্মৃতিসৌধ, মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি কমপ্লেক্স, ঐতিহাসিক আম্রকানন, ঐতিহাসিক ছয় দফার রূপক উপস্থাপনকারী ছয় ধাপের গোলাপবাগান বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের এক জীবন্ত প্রদর্শন হিসেবে বিবেচিত হওয়ার দাবি রাখে।

মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি কমপ্লেক্সের ভিতরের অংশে মুক্তিযুদ্ধকালীন কিছু ঐতিহাসিক ঘটনার ভাস্কর্য স্থাপন করা হয়েছে। স্মৃতি কমপ্লেক্সের বাইরের অংশে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণ, মুজিবনগর সরকারের শপথগ্রহণ এবং পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের দৃশ্যসহ আরও ঐতিহাসিক ঘটনার ভাস্কর্য স্থাপন করা হয়েছে। 

মুক্তিযুদ্ধকালীন বিভিন্ন সেক্টরের অবস্থান বাংলাদেশের মানচিত্রে প্রদর্শন করে মানচিত্রটি মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি কমপ্লেক্সের অভ্যন্তরস্থ মূল আঙ্গিনায় স্থাপন করা হয়েছে। সুদৃশ্য এ মানচিত্রটি মুক্তযুদ্ধকালীন বিভিন্ন সেক্টরের অবস্থান ও উল্লেখযোগ্য ঘটনাবলি সম্পর্কিত এক প্রামাণ্যচিত্র।

এ ছাড়াও মুজিবনগর থেকে ভারত সীমান্তের তারকাঁটা দেখা যায়। বিজিবি অনুমতি নিয়ে দেখে আসতে পারবেন।

যেভাবে যাবেন   

রাজধানী ঢাকা থেকে মেহেরপুর সদরের দূরত্ব ৩১২ কিলোমিটার। সড়কপথে বিভিন্ন পরিবহনে মেহেরপুর পৌঁছাতে সময় লাগবে ৬ থেকে ৭ ঘণ্টা। মেহেরপুরে বঙ্গবন্ধু সেতু ও পদ্মা নদী পারাপার হয়ে দুভাবেই যাওয়া যায়। যারা বঙ্গবন্ধু সেতু হয়ে যাবেন তারা ঢাকার কল্যাণপুর থেকে বাস পাবেন। কল্যাণপুর থেকে এসি ও নন-এসি বাস পাবেন। আর যারা ফেরি পারাপার হয়ে যাবেন তারা বাস পাবেন গাবতলী থেকে। শহর বাস টার্মিনাল থেকে আধাঘণ্টা অন্তর মুজিবনগরের উদ্দেশ্যে বাস ছেড়ে যায়। দুরত্ব ১৪ কিমি। 

এ ছাড়াও ঐতিহাসিক মেহেরপুরে আরও যা ঘুরে দেখতে পারেন-

আমঝুপি নীলকুঠি 

নাম থেকেই বোঝা যাচ্ছে ব্রিটিশ শাসনামলে এখানে নীলের চাষ করা হতো। ইউরোপে নীলের ব্যাপক চাহিদার কারণে ব্রিটিশরা এ দেশের কৃষকদের জোরপূর্বক নীল চাষ করাত। কুঠিটিতে নীলচাষ ও মজুদ করে রাখা হতো। জনশ্রুতি রয়েছে, এই কুঠিতে বসেই মীর জাফর, লর্ড ক্লাইভসহ অন্য বেনিয়ারা নবাব সিরাজ উদ্দৌলাকে হত্যার ষড়যন্ত্র করেন। নীলচাষ ও নীলকরদের দীর্ঘ ইতিহাস মেহেরপুর বুকে জড়িয়ে রেখেছে। আমঝুপি নীলকুঠি ১৮১৫ সাল অথবা এরও কিছুকাল পরে স্থাপিত হয়েছে। এখানে দেখবেন নীলকুঠি, কাজলা নদী, আমবাগান। বর্ষাকালে যদি যান, তবে আসার পথে চাঁদবিল গ্রামের বিশাল বিল দেখে আসবেন।

যেভাবে যাবেন   

মেহেরপুর জেলা সদর থেকে সড়কপথে দূরত্ব ৭ কিমি । ব্যাটারিচালিত রিকশার সাহায্যে ২৫ মিানট সময়ে আমঝুপি নীলকুঠিতে পৌঁছানো যায়। 

ভাটপাড়ার নীলকুঠি, সাহারবাটি 

১৮৫৯ সালে স্থাপিত ধ্বংসপ্রায় এই নীলকুঠিটি ইট, চুন-সুরকি দ্বারা নির্মাণ করা হয়। এর ছাদ লোহার বিম ও ইটের টালি দিয়ে তৈরি। এই কুঠির পাশ দিয়ে বয়ে গেছে কাজলা নদী।

যেভাবে যাবেন   

মেহেরপুর জেলা সদর থেকে সড়কপথে দুরত্ব ১৭ কিমি । ব্যাটারিচালিত রিকশারর সাহায্যে ৪০ মিনিটে ভাটপাড়া নীলকুঠিতে পৌঁছানো যায়। 

থাকার ব্যাবস্থা 

মেহেরপুর জেলা সদরে সার্কিট হাউস, পৌর হল, ফিনটাওয়ার আবাসিক হোটেল, ইসলামিয়া আবাসিক হোটেলে আবাসন ব্যবস্থা রয়েছে। যারা এক রাত মুজিবনগর কাটাতে চান, তাদের জন্য মুজিবনগর মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি কমপ্লেক্সে বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের হোটেলে আবাসনের সুব্যবস্থা আছে। এ ছাড়া জেলা পরিষদের স্থাপিত ডাকবাংলোয় কক্ষে আবাসনের ব্যবস্থা আছে। ফেরার পথে অবশ্যই কাঁসারী বাজারের বাসুদেবের দোকানে রসকদম্ব ও সাবিত্রী নিতে ভুলবেন না। 

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: protidinerbangladesh.pb@gmail.com

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: pbad2022@gmail.com

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: pbonlinead@gmail.com

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: pbcirculation@gmail.com

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা