মারুফা মেহজাবিন মিষ্টি
প্রকাশ : ২৪ মার্চ ২০২৩ ১২:৪৯ পিএম
ছুটির দিনে দাদুর কাছে গল্প শোনার অপেক্ষায় থাকি। কিন্তু দাদু আজ বাসায় নেই। ছোটরা হইচই করছে। তাই আমি ওদের একটা গল্প শুনাব। এটি কোনো গল্প নয়। এ রকম ঘটনা অনেক আছে। আমি একটা মাত্র ঘটনা বলছি।
নিয়নের দাদা, দাদি, ছোট্ট কাকা আর বাবাসহ সুখের সংসার। ভালোই যাচ্ছিল দিনকাল। ওর দাদা চাটমোহর বাজারে লবণের ব্যবসা করত।
এর মধ্যেই দেশে চলে এলো পাকিস্তানি মিলিটারি। এসেই শুরু হলো বাঙালিদের ওপর অন্যায়-অত্যাচার। এসব দেখে অনেকেই ভয়ে শহর থেকে গ্রামে চলে এসেছে। নিয়নদের গ্রামেও শহর থেকে অনেক মানুষ আসছে। গ্রামের মানুষ ঘর থেকে বেশিরভাগ বের হতো না। কোথাও যেত না। ভয়ে লুকিয়ে থাকত। রেডিওতে খবর শুনতে জড়ো হতো। গ্রামের পাশই দিয়ে বয়ে গেছে বড়াল নদী। নদীর ধারে বড় আমগাছের নিচে বসে গ্রামের মানুষ খবর শুনত। দেশে যে যুদ্ধ লেগেছে, দেশের এমন দুরবস্থা। অন্যায়-অত্যাচারের কথা শুনে তারা আর চুপ করে থাকতে পারছে না। সিদ্ধান্ত নিল, তারা রুখে দাঁড়াবে।
এই খবর মিলিটারিদের কাছে পৌঁছে দিয়েছে তায়জল রাজাকার। গ্রামে নাকি পাকিস্তানি মিলিটারি আসবে। গ্রামের প্রধানও হাত মিলাইছে। জানোয়ারদের কথা না শুনলে সবাইকে মেরে ফেলবে। তাই গ্রামের মানুষজন প্রয়োজন ছাড়া কেউ বাইরে বের হচ্ছে না। একপর্যায়ে সিদ্ধান্ত নিল গ্রামের সবাই মিলে কথা বলবে। এরপর বড়াল নদীর পাশে বড় মাঠে সবাইকে ডাকা হলো। অনেকেই এসেছেন সেখানে। নিয়নের বাবা, কাকুসহ গ্রামের অনেকই জড়ো হয়েছেন। এই অন্যায়-অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে হবে। স্বাধীনভাবে চলতে হবে। এত অত্যাচার সহ্য করা যাবে না। তাদের সুযোগ দিলে আরও আমাদের ওপর উঠে দাঁড়াবে।
আমাদের যা আছে সেটা নিয়েই রুখে দাঁড়াতে হবে। তখন হইচই শুরু করেছে একেক জনের একেক প্রশ্ন? বিনু নামে ছোট্ট একটা মেয়ে বলল, আমি যুদ্ধ করার জন্য প্রস্তুত। যেভাবেই হোক, আমাদের স্বাধীনভাবে বাঁচতে হবে। ওই মেয়েটির কথা শুনে সবাই অবাক। সবাই ফুপুর কথায় অনেক সাহস পেয়েছিল। সবার চোখে পানি চলে এসেছিল। সবাই বলছিল বাহ্! এত সাহসী এই মেয়েটা।
গ্রামপ্রধান গিয়ে পাকিস্তানি মিলিটারিদের বলছে গ্রামের মানুষেরা খেপে গেছে। তারা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। এই কথা শুনে সেইদিনই পাকিস্তানি মিলিটারিরা গ্রামপ্রধানকে নিয়ে হামলা করল। সবাই পাকিস্তানি মিলিটারিদের সঙ্গে যুদ্ধ করছে। পাকিস্তানি মিলিটারিদের গুলিতে অনেকই মারা গেছেন। চারদিকে রক্তের বন্যা বয়ে গেছে। বিনু খুব চালাক ছিল। সে রাজাকার তায়জালের পিছন থেকে মাথায় পাথরের টুকরো দিয়ে আঘাত করেছিল। মাথা ঘুরে পরে যেতেই বিনু ধাক্কা দিয়ে নদীতে ফেলে দিয়েছিল। এমন সময় একটা গুলি এসে লাগল বিনুর বুকে। মাটিতে ছিটকে পড়ল সে। রক্তে ভেজা বিনুর জামাটা। তখনও প্রাণপণে লড়াই করে যাচ্ছে সবাই। আর বিনুর কথা আটকে আটকে যাচ্ছে। বিনু কাতর কণ্ঠে বলল, যেভাবেই হোক পাকিস্তানি নৌকা যেন ঘাটে না ভিড়তে পারে। এই বলে বিনু শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করল।
গ্রামের সবাই নদীর ঘাটের পাশে বড় গাছের আড়ালে লুকিয়ে রইল। মিলিটারির নৌকা ঘাটে পৌঁছানোর আগে দুরুম দুরুম গুলি চালাল মুক্তিযোদ্ধারা। নৌকা ফুটো হয়ে গেল। ঘাটে পৌঁছানোর আগেই নৌকা ডুবে গেল। নিয়নদের গ্রাম মুক্ত হলো। পাকিস্তানি মিলিটারিরা বড়াল নদীতে ডুবে মারা গেল। ওদের অস্ত্র নিয়ে গ্রামের মানুষজন নতুন যুদ্ধের প্রস্তুতি নিল।
অষ্টম শ্রেণি, সেন্ট রীটাস হাই স্কুল
মথুরাপুর, চাটমোহর, পাবনা