তৌহিদুল ইসলাম তুষার
প্রকাশ : ২৬ মার্চ ২০২৩ ১৭:৫৬ পিএম
আপডেট : ২৬ মার্চ ২০২৩ ১৭:৫৯ পিএম
টেকসই ও দীর্ঘমেয়াদি ফ্যাশন- এই পতিপাদ্যকে সামনে রেখে জমকালো আয়োজনের মধ্য দিয়ে শেষ হলো ‘বাংলাদেশ ফ্যাশন উইক ২০২৩’। গত ১৬ ও ১৭ মার্চ অনুষ্ঠিত এই ফ্যাশন শোতে ২৪ জন ফ্যাশন ডিজাইনার অংশ নিয়েছেন। যার মধ্যে ফ্যাশন ডিজাইনারস কাউন্সিল অব বাংলাদেশের (এফডিসিবি) সদস্য ১৮ জন। এ ছাড়াও ৬ জন ভারতীয় ফ্যাশন ডিজাইনার এই আয়োজনে অংশ নেন।
সদ্য প্রয়াত ফ্যাশন ডিজাইনার এমদাদ হকের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের মাধ্যমে শুরু হয় এবারের বাংলাদেশ ফ্যাশন উইক। ফ্যাশন ডিজাইন কাউন্সিল অব বাংলাদেশের উদ্যোগে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানের প্রধান পৃষ্ঠপোষক অ্যাপেক্স, বিশেষ পৃষ্ঠপোষক হুন্দাই বাংলাদেশ ও ব্যাংকিং অংশীজন কমিউনিটি ব্যাংক। এ ছাড়া আয়োজনটিতে সহযোগিতা করছে বাই হেয়ার নাও, এমটিবি, স্ট্রিক্স, মায়া, উজ্জ্বলা কেয়ার, নেচুরা কেয়ার লিমিটেড।
অনুমতি নিয়ে ঝামেলা হওয়ায় প্রথম দিনের আয়োজন একটু দেরি করে শুরু হয়। কিন্তু মডেলদের প্রথম কিউতে দারুণ উপস্থাপনা সব খারাপকে যেন ধুয়েমুছে দেয়। শুরুতে দেখা মেলে স্পন্সর প্রতিষ্ঠানের সংক্ষিপ্ত উপস্থাপনা। এরপর মূল পর্ব। মঙ্গল শোভাযাত্রার নানা থিম তুলে ধরা হয় কালেকশনটির মাধ্যমে। ডিজাইনার চন্দনা দেওয়ানের উপস্থাপনায় উঠে আসে লোকসংস্কৃতির নানা উপাদান। এর পরের কিউতে দারুণ সব শাড়ি জড়িয়ে র্যাম্প মাতিয়েছে মডেলরা। ভারতীয় ডিজাইনার গুঞ্জন জৈন সে দেশের জালা এবং ইকাত বুনন ঐতিহ্যকে তুলে ধরেন। তুষার এবং মালবেরি সিল্কের বুননে তৈরি শাড়ি সবার নজড় কাড়ে। তিনি এই সংগ্রহের নাম দিয়েছেন ‘ফ্ল্যামিঙ্গো’। দেশের তরুণ ডিজাইনার আফসানা ফেরদৌসী নিয়ে আসেন নীল-সাদা রঙের মিশেলে কালেকশন। ‘নীল নদীর গল্প’ শিরোনামের কালেকশনটি প্রদর্শন করেন একটি নদীর গল্প এবং জলজ জীবন। পোশাকে ডিজাইনগুলো ফুটিয়ে তোলা হয় ঐতিহ্যবাহী নকশিকাঁথা সেলাইয়ে। এর পরের কালেকশনটিতে দারুণ বৈচিত্র্যের দেখা মেলে। হবেই না বা কেন? চলতি বছরের স্প্রিং এবং সামার কালেকশন তুলে ধরেন আর এক তরুণ ডিজাইনার রিফাত রহমান। কথায় বলে ওল্ড ইজ গোল্ড। তার আর একবার প্রমাণ করলেন ডিজাইনার তাসফিয়া আহমেদ। ‘৯০-এর রোমান্টিক’ বিষয়টিকে মাথায় রেখে কালেকশনটি সাজানো হয়। এ সময়েও এই ডিজাইন দারুণ ট্রেন্ডি। একবারের জন্যও মনে হয়নি পুরোনো।
পোস্টেজ স্ট্যাম্প এবং হাতে লেখা চিঠি উঠে এসেছে পোশাকে। ভিন্নধর্মী কালেকশনটি করেছেন ডিজাইনার সাদিয়া রূপা। পোশাক খুব সাদামাটা হলেও গর্জিয়াসভাবে উপস্থাপন হয়েছে ‘কিনিহো’ কালেকশনটি। ভারতীয় ডিজাইনার ইবা মাল্লাই যেন সময়ের চাহিদা মেটাতেই নিজের মনের মাধুরী মিশিয়ে তৈরি করেছেন পোশাক। অরেঞ্জ ব্লুম শিরোনামে স্টাইলিশ পোশাকের কালেকশন নিয়ে হাজির হন নওশীন খায়ের। কাটছাঁটের পাশাপাশি ফেব্রিকেও বেশ গুরুত্ব পেয়েছে দেখলেই বোঝা যায়। আধুনিক পোশাকের দিকে বেশি মনোযোগ তরুণ ডিজাইনারদের। তেমনই উপস্থাপন ছিল ডিজাইনার ইমাম হাসানের ‘রিসোর্ট ওয়্যার’ কালেকশনে। পোশাকে ভিন্নধর্মী উপস্থাপন নিয়ে আসেন ডিজাইনার তানহা শেখ। ‘রাইডিং দ্য ওয়েডস অব লাইফ’ শিরোনামের পোশাকের কালেকশনটি ছিল পরের কিউতে। পোশাকের জমিনে ফুল-পাতার বেশ চল শুরু হয়েছে বছর তিনেক আগে থেকে। ভারতের ডিজাইনার রিমি নায়ক কালেকশনে আবার তার দেখা মিলল। ‘বোটানিক্স’ শিরোনামের গ্রীষ্ম ২০২৩ সংগ্রহটি তিনি প্রদর্শন করেন। প্রথম দিনের শেষ আয়োজনে ছিলেন কুহু গ্রামস্তন। দেখা মেলে শাড়ির নান্দনিক উপস্থাপনা। সেই সঙ্গে ছিল পুরুষের পোশাকের আয়োজন।
দ্বিতীয় দিনের আয়োজনে দেশি ডিজাইনারদের অংশগ্রহণ ছিল চোখে পড়ার মতো। শুরুতে প্রথম দিনের মতোই স্পন্সর আয়োজন। এরপরই মাহিন খানের সংগ্রহে কিউ মাতান মডেলরা। বাংলার ঐতিহ্যবাহী কারুশিল্পের নান্দিনকতা উঠে আসে পোশাকে। দেখা মেলে শাড়ি-পাঞ্জাবির নানা কারুকার্য। মুখে মাস্ক আর খোঁপায় বন্যপ্রাণীর বদন আর পোশাকের জমিনে ফুল-পাতা। ভিন্ন রকম উপস্থাপনা সবার নজড় কাড়ে। পরের কিউতে নানা রঙের পোশাকে বয়ননিপুণতা তুলে ধরেছেন পারমিতা ব্যানার্জি। মাহিন খানের মতোই ভিন্নধর্মী কালেকশন নিয়ে হাজির হন তেনজিং চাকমা। তুলে ধরেন বাংলাদেশের জীববৈচিত্র্য। কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের অপূর্ব সৌন্দর্যে পোশাকে ফুটিয়ে তোলেন রুখসানা এসরার রুনি। ‘দ্য সেন্ট অব স্প্রিং’ শিরোনামে রঙিন পোশাকের সম্ভার নিয়ে হাজির হন মাধুরী সঞ্চিতা স্মৃতি। চার্লি ম্যাথলেনার ডিজাইনে পোশাক নিয়ে কিউ মাতায় মডেলরা। বেজ মুড থিমের পোশাক নিয়ে হাজির হন লিপি খন্দকার। ‘বিউটি অব গ্র্যাভিটি’ শিরোনামের দারুণ উপস্থাপনা ছিল কামরুল হাসান রিয়াদের। এর পর ভিন্ন রকমের একটি কালেকশন উপস্থাপন করেন ফাইজা আহমেদের সৃজন অর্ঘ্য ‘দেশভক্তি’। সৌমিত্র মণ্ডলের শাড়ির দারুণ কালেকশন ‘মুসাফির’। হালকা গোল্ডেন রঙের শাড়ি যেন সবার মন জয় করে নেয়। অনুষ্ঠানের সর্বশেষ কালেকশনটি ছিল ডিজাইনার শৈবাল সাহার।