× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

চেরনোবিলের কুকুরেরা!

মাহির জামিল

প্রকাশ : ০১ এপ্রিল ২০২৩ ১২:২১ পিএম

চেরনোবিলের কুকুরের ডিএনএর গঠন তাদের স্বজাতি অন্য কুকুরদের থেকে একেবারেই আলাদা                      ছবি: সংগ্রহ

চেরনোবিলের কুকুরের ডিএনএর গঠন তাদের স্বজাতি অন্য কুকুরদের থেকে একেবারেই আলাদা ছবি: সংগ্রহ

১৯৮৬ সালের ২৬ এপ্রিল। প্রচণ্ড শব্দে কেঁপে ওঠে পুরো চেরনোবিল শহর। পৃথিবীর ইতিহাসে প্রথমবারের মতো পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে তেজস্ক্রিয় বিস্ফোরণ ঘটে। আশপাশের বায়ুমণ্ডলে দ্রুতই ছড়িয়ে পড়ে তেজস্ক্রিয় পদার্থ। চেরনোবিল বিদ্যুৎ কেন্দ্র ঘিরে ৩০ কিলোমিটার এলাকা থেকে মানুষজনকে সরিয়ে নেওয়া হয়। বলা হয়, তিন দিন পরই তারা ফিরতে পারবেন নিজ আবাসে। কিন্তু তাদের বেশির ভাগই আর ফিরতে পারেননি সেই ফেলে যাওয়া ঘরবাড়িতে। প্রচণ্ড তাড়াহুড়োর মধ্যে কিছুই নিতে দেওয়া হয়নি। এমনকি তাদের পোষা কুকুরগুলোও ফেলে যেতে হয়েছিল জবরদস্তির মুখে! 

‘কুকুরগুলো তেজস্ক্রিয়তায় আক্রান্ত’ এমন কারণ দেখিয়ে শত শত কুকুরকে মেরে ফেলা হচ্ছিল তখন। নিরুপায় মানুষ তাই ঘরের দরজায় চিরকুট রেখে যাচ্ছিল। তার প্রিয় কুকুরটাকে বাঁচিয়ে রাখার কাতর অনুরোধ ছিল সেসব চিরকুটে। ‘আমার ঝুলকাকে মারবেন না! ও খুব ভালো কুকুর।’ এ ধরনের অসংখ্য চিরকুট লেপ্টে ছিল বাড়ির দরজায় দরজায়। কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি। তখনকার সোভিয়েত সেনারা কোনোরকম দয়ামায়া ছাড়াই নিধন করেছে কুকুরগুলো। তবে কিছু কুকুর ছিল ভালোই করিৎকর্মা! তারা দৌড়ে ঘন জঙ্গলে গিয়ে লুকিয়ে ছিল। তাদের আর খুঁজে বেরই করা যায়নি। আর এভাবেই তারা বেঁচে গিয়েছিল মৃত্যুর হাত থেকে। খাবারও পেয়েছিল পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের থেকে।

চেরনোবিলে তেজস্ক্রিয় বিস্ফোরণের প্রভাব এতটাই মারাত্মক ছিল যে, মাটি বিষাক্ত হয়ে কয়েক মাইলব্যাপী গাছ উধাও হয়ে গিয়েছিল। বিনাশ হয়ে গিয়েছিল নানান প্রজাতির কীটপতঙ্গ। কয়েক মাসের মধ্যে আশপাশের হাজার হাজার মানুষ মারা গিয়েছিল থাইরয়েড ক্যানসারে! কিন্তু সেই কুকুরগুলোর কী হয়েছিল? যারা চেরনোবিল ছেড়ে কোথাও যায়নি! সেটা বরাবরের মতো অজানাই থেকে গিয়েছিল বহুকাল।


এর মাঝেই কেটে গেছে প্রায় ৩৭ বছর। চেরনোবিল শহরকে তো পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছিল সেই শুরুতেই। কালেভদ্রে কিছু দর্শনার্থী আর পরিচ্ছন্নতা কর্মী ছাড়া কারও আনাগোনা নেই সেখানে। তবে পুরো এলাকার একমাত্র স্থায়ী বাসিন্দা হিসেবে আছে কয়েকশ কুকুর! আর এমন প্রতিকূল পরিবেশে বেঁচেই বা আছে কেমন করে! তার হদিস জানতেই সম্প্রতি চালানো হয়েছে একটি গবেষণা। সেই গবেষণার ফলাফলেই উঠে এসেছে চমকপ্রদ সব তথ্য!

চেরনোবিল বিদ্যুৎকেন্দ্র ও আশপাশ এলাকায় থাকা কুকুরের স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করছিল ‘ক্লিন ফিউচারস ফান্ড’ নামে একটি অলাভজনক সংস্থা। গবেষকরা তাদের মাধ্যমে চেরনোবিলে থাকা প্রায় ৩০০ কুকুরের রক্তের নমুনা সংগ্রহ করেন।‌ এরপর নমুনা থেকে প্রাপ্ত DNA বিশ্লেষণ করার পরই রীতিমতো চমকে ওঠেন তারা! অবাক বিস্ময়ে দেখেন, এসব কুকুরের ডিএনএর গঠন তাদের স্বজাতি অন্য কুকুরদের থেকে একেবারেই আলাদা! শুধু কি তাই! তাদের জিন বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, কুকুরগুলো আদতে চেরনোবিল বিস্ফোরণের সময় থাকা কুকুরগুলোরই ১৫তম বংশধর!

দীর্ঘমেয়াদি তেজস্ক্রিয় দূষণ সহ্য করে বেঁচে থাকার জন্যই কি কুকুরগুলোর এমন জিনগত পরিবর্তন ঘটেছে? এমন সিদ্ধান্তে চলে আসা একটু কঠিনই বটে। কারণ এই পরিত্যক্ত এলাকায় খাবারের যথেষ্ট অভাব আছে। এ ছাড়া প্রচণ্ড শীত, রোগের প্রাদুর্ভাবও জিনগত পরিবর্তনে ভূমিকা রাখতে পারে। সবচেয়ে আশ্চর্যের ব্যাপারটি হচ্ছে, এতটা মারাত্মক তেজস্ক্রিয় দূষণযুক্ত এলাকায় তারা যুগের পর যুগ বেঁচে আছে। শুধু কি তাই, সফল প্রজননের মাধ্যমে বংশবিস্তারও করছে হামেশা। এসব খাপ খাইয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়ায় তাদের জিনগত পরিবর্তন একটা গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক হতে পারে বলেই মনে হয়! 

আজও বহু দর্শনার্থী চেরনোবিলে অল্প সময়ের জন্য ঘুরতে যান। লোকজনের আনাগোনা পেলে চেরনোবিলে থাকা এসব কুকুর দৌড়ে আসে। কারণ তাদের কাছে পর্যটক মানেই খাবার! তাই তারা পর্যটকদের কাছঘেঁষে থাকতে ভালোবাসে।‌ কখনও কখনও খুনসুটিতেও মেতে ওঠে আদর পেলে। তবে পর্যটকদের অনেকেই এসব কুকুরকে স্পর্শ করতে ভয় পান। ভেবে থাকেন, কুকুরগুলো হয়তো তেজস্ক্রিয়ভাবে দূষিত। যদিও ভয়টা অমূলক নয়।

গবেষকরা এখন নতুন একটি সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছেন। কুকুরগুলো কীভাবে এমন তেজস্ক্রিয় পরিবেশে বছরের পর বছর ধরে বেঁচে থাকার লড়াই চালাচ্ছে, তার ওপর আরও গবেষণা করতে চান তারা। সেই গবেষণার ফলাফল হয়তো একদিন মানুষের কাজে আসবে। কে জানে? হয়তো মহাশূন্যের তেজস্ক্রিয় পরিবেশে টিকে থাকার সমাধানও এনে দিতে পারে এ গবেষণা! দেখা যাক, ভবিষ্যতেই মিলবে তার যথার্থ উত্তর!


তথ্যসূত্র: 

1 . What Chernobyl’s stray dogs could teach us about radiation - Nature Journal 

2. Meet the dogs of Chernobyl - the abandoned pets that formed their own canine community - The Guardian 

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: protidinerbangladesh.pb@gmail.com

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: pbad2022@gmail.com

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: pbonlinead@gmail.com

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: pbcirculation@gmail.com

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা