× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

সিয়ার্স টাওয়ারের ৫০ বছর

এফআর খানের আকাশছোঁয়া

আব্দুল্লাহ আল মামুন

প্রকাশ : ০১ এপ্রিল ২০২৩ ১২:৪৫ পিএম

আপডেট : ০১ এপ্রিল ২০২৩ ১৩:৪৭ পিএম

এফআর খানের আকাশছোঁয়া

১৯৭৩ সালে যাত্রা শুরু করে এক সময়কার বিশ্বের সর্বোচ্চ ভবন সিয়ার্স টাওয়ার। ১১০ তলা ভবনটি  নাম বদলে উইলিস টাওয়ার হিসেবে পরিচিত হলেও এর নকশা ও নির্মাণের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বাংলাদেশি বরেণ্য স্থপতি ফজলুর রহমান খান। ভবনটি উদ্বোধনের ৫০ বছর এবং ৩ এপ্রিল তার জন্মদিন উপলক্ষে এ লেখা...


গগণচুম্বী শব্দের অর্থ আকাশছোঁয়া। এই শব্দের ইংরেজি মানে স্কাইক্র্যাপার। স্থাপত্য জগতে স্কাইক্র্যাপার বর্তমানে বহুল চর্চিত। আকাশছোঁয়া ভবন তৈরিতে বিত্তশালী দেশগুলো যেন প্রতিযোগিতায় রত। আর এই ধারণাকে বাস্তবে রূপ দিয়েছিলেন আমাদের বাংলারই এক কৃতীসন্তান, তার নাম ফজলুর রহমান খান। এফআর খান নামে যিনি অধিক পরিচিত।  

একটা সময় পর্যন্ত বিশ্বের সর্বোচ্চ উচ্চতার ভবনের তকমা নিয়ে পৃথিবীর বুক চিরে দাঁড়িয়ে ছিল সেই সিয়ার্স টাওয়ারের (যা বর্তমানে উইলিস টাওয়ার নামে পরিচিত) নকশাকার তিনি। ১৯৭০ সালে এই অসাধ্য সাধনের কর্মযজ্ঞ শুরু হয়ে দুই হাজার শ্রমিকের তিন বছরের প্রচেষ্টায় শেষ হয় এর কাজ। ১৯৭৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসের নয় তারিখ উন্মুক্ত হওয়া ভবনটি এ বছর ৫০ বছরে পা দিতে যাচ্ছে।


আমেরিকার শিকাগো, বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম শহর। ১৯০৬ সালে এই শহরে প্রতিষ্ঠিত হয় চেইন রিটেইল শপ সিয়ার্স-রোয়িবাক অ্যান্ড কোম্পানি বা সিয়ার্স। ১৯৬৯ সাল নাগাদ ব্যবসা সম্প্রসারণের মাধ্যমে সাড়ে তিন লাখ কর্মী নিয়ে কোম্পানিটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়। 

সে সময় শিকাগোর পশ্চিমাঞ্চলে মূল ভবনে কর্মীদের স্থান সংকুলান হচ্ছিল না। ১৯৬৬ সাল থেকেই কোম্পানিটি চাইছিল এমন একটি আইকনিক ভবন, যার আয়তন হবে ৪২ লাখ স্কয়ার ফুট, যেখানে অন্তত সাত হাজার কর্মী কাজ করতে পারবেন। তারা এমন ভবন নির্মাণের জন্য যোগাযোগ করে স্কিডমোর, ওয়িংস অ্যান্ড মেরিল নামের নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে। আর এই প্রতিষ্ঠানেই কাজ করতেন এফআর খান। 

এফআর খান ইতোমধ্যে অতি উচ্চতার ভবন নির্মাণে টিউবিউলার পদ্ধতির ধারণা দেন। টিউবিউলার পদ্ধতি নির্মিত ভবনের মাঝখানে রাখা হয় ফাঁপা টিউব, যার মাধ্যমে ভবনের মূল কাঠামোর বাইরের দিকে চাপ ভাগ হয়ে যায়। যা ভূমিকম্প, আবহাওয়া বা প্রাকৃতিক দুর্যোগজনিত যেকোনো চাপ মোকাবেলা করতে পারে। তার টিউবিউলার পদ্ধতি অনুসরণ করেই ১৯৭০ সালে শিকাগো শহরে তৈরি হয়েছিল ‘জন হ্যানকক সেন্টার’ নামের একটি শততলা উচ্চতার ভবন।

সিয়ার্স কোম্পানির ভবন নকশায় এফআর খান সাহায্য নিয়েছিলেন তারই সহকর্মী ও বিখ্যাত স্থপতি ব্রুস গ্রাহামের। ডিজাইন শেষে কাজও শুরু হয় এফআর খানের তত্ত্বাবধানে। সফল নির্মাণ শেষে ১১০ তলা ভবনটি ২৫ বছর ধরে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত বিশ্বের সবচেয়ে বড় ভবনের খেতাব নিয়ে সগর্বে আকাশমুখী হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। শুনতে অবাক লাগলেও সত্য, বর্তমানে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় দুই ভবন আরব আমিরাতের বুর্জ খলিফা এবং কুয়ালালামপুরের পেট্রোনাস টুইন টাওয়ারও তৈরি হয়েছে এফআর খানের টিউবিউলার পদ্ধতি অনুসরণ করে। বর্তমানে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন জায়গায় আকাশচুম্বী ভবন নির্মাণে অনুসরণ করা হয় তার এ পদ্ধতি। যার কারণে তিনি আকাশচুম্বি ভবনের পথিকৃৎ হিসেবে ইতিহাসের পাতায় স্থান করে নেন। সিয়ার্স টাওয়ারের সাফল্যের পর মধ্যপ্রাচ্য ও এশিয়ায়ও বেশ কিছু কাজের সঙ্গে যুক্ত হন তিনি। তার আরেকটি উল্লেখযোগ্য কাজ হলো সৌদি আরবের জেদ্দা বিমানবন্দরে নির্মিত হজ টার্মিনাল। আরবের ঐতিহ্যবাহী বেদুইনদের তাঁবু আর আধুনিক কারিগরি দক্ষতার মিশ্রণে নির্মিত এই টার্মিনালে ৮ ০ হাজার হজযাত্রী একত্রে ৩৬ ঘণ্টা বিশ্রাম নিতে সক্ষম। বাদশাহ আব্দুল আজিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের নকশাকারও ছিলেন তিনি। 

ফজলুর রহমান খানের জন্ম ১৯২৯ সালের ৩ এপ্রিল মাদারীপুর জেলার শিবচরে। ১৯৪৪ সালে ঢাকার আরমানিটোলা সরকারি উচ্চবিদ্যালয় থেকে মেট্রিক পাস করে ভর্তি হন কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে। উচ্চ মাধ্যমিক শেষে ভর্তি হন শিবপুর বেঙ্গল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে। সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার কারণে লেখাপড়া শেষ না করেই ঢাকায় ফিরে এসে বর্তমান বুয়েটে ভর্তি হন। বুয়েট থেকে বিএসসি পাসের পর বৃত্তি নিয়ে উচ্চশিক্ষার জন্য যান আমেরিকায়। ইউনিভার্সিটি অব ইলিনয় অ্যাট আরবানা শ্যাম্পেইন থেকে স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে এবং তত্ত্বীয় ও ফলিত মেকানিকসে ডাবল মাস্টার অব সায়েন্স ডিগ্রি লাভ করেন। পরে সেখান থেকেই স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেন।


পরবর্তীতে দেশে ফিরে আসলেও আবার কাজের সূত্রে ফিরে যান আমেরিকায়। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় তিনি সিয়ার্স টাওয়ার নির্মাণের কর্মযজ্ঞে ব্যস্ত থাকলেও ভোলেননি দেশকে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে জনমত তৈরিতে ছুটে গিয়েছেন আমেরিকার বিভিন্ন প্রান্তে।  সহায়তা ও তহবিল সংগ্রহেও কাজ করেন।  শিকাগোতে বাংলাদেশ ইমার্জেন্সি ওয়েলফেয়ার আপিল ও বাংলাদেশ ডিফেন্স লিগ নামের দুইটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় তার অবদানের কথা স্মরণ করে বাংলাদেশ সরকার ১৯৯৯ সালে তাকে মরণোত্তর ‘স্বাধীনতা পদকে’ ভূষিত করে।

এফআর খান তার অনন্য কর্মজীবনে পেয়েছেন অজস্র স্বীকৃতি। যার মধ্যে ১৯৭৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অব ইঞ্জিনিয়ারিং প্রদত্ত সর্বোচ্চ সন্মাননা। ১৯৭২ সালে তিনি ‘কনস্ট্রাকশনস ম্যান অব দি ইয়ার’-এ ভূষিত হন।ইঞ্জিনিয়ারিং নিউজ রেকর্ডস-এর ‘ম্যান হু সার্ভড দি বেষ্ট ইন্টারেস্ট অব দি কন্সট্রাকশন ইন্ডাস্ট্রি’-তে ফজলুর রহমানের নাম এসেছে পাঁচ বার। ১৯৮৩ সালে আমেরিকান ইন্সটিটিউট অব আর্কিটেক্টস ফজলুর রহমান খানকে তাঁর অসাধারণ অবদানের জন্য এআইএ ইনস্টিটিউট সম্মাননা প্রদান করে। একই বছর মুসলিম স্থাপত্যে অসাধারণ অবদানের (জেদ্দার হাজী টার্মিনাল) জন্য তাঁকে ‘আগা খান’ সম্মানে ভূষিত করা হয়। ‘কনস্ট্রাকশনস ম্যান অব দি ইয়ার’-

৩ এপ্রিল এফআর খানের ৯৪তম জন্মদিন এবং আধুনিক নির্মাণকলার বিস্ময় সিয়ার্স টাওয়ারের ৫০ বছরের প্রাক্কালে মহান মানুষটির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা।



সিয়ার্স টাওয়ারের জানা-অজানা

** ১১০ তলা সিয়ার্স টাওয়ারের উচ্চতা ১৪৫০ ফুট বা ৪৪৩ মিটার
** ভবনটির ওজন ২ লাখ ২২ হাজার ৫০০ টন, যা ২০ হাজার বাসের ওজনের সমান
**  ভবনটি নির্মাণে খরচ হয়েছিল ১৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার

** ভবনটি নির্মাণে কাজ করেছিলেন দুই হাজার শ্রমিক। সময় লেগেছিল তিন বছর

** গোটা ভবনের আয়তন সাড়ে চার লাখ বর্গফুট, যা ১০১টি ফুটবল মাঠের সমান

** আবহাওয়া পরিষ্কার থাকলে স্কাইডেক থেকে ৫০ মাইল দূর পর্যন্ত দেখা যায়

** এই ভবনে ব্যবহৃত ইলেকট্রিক তারের সমন্বিত দৈর্ঘ্য প্রায় ২৫ হাজার মাইল

** ভবনটিতে একসঙ্গে ১২ হাজার মানুষ কাজ করতে সক্ষম

** প্রতিদিন এই ভবনে ২৫ হাজার মানুষ যাতায়াত করে থাকে

** ভবনের স্কাইডেক দেখতে প্রতিবছর আসে অন্তত ১৭ লাখ পর্যটক

** ভবটিতে ব্যবহৃত টেলিফোন লাইনের সমন্বিত দৈর্ঘ্য প্রায় ৪৩ হাজার মাইল। যার মাধ্যমে পুরো আমেরিকাকে ১৫ বার বেঁধে ফেলা সক্ষম





শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: protidinerbangladesh.pb@gmail.com

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: pbad2022@gmail.com

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: pbonlinead@gmail.com

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: pbcirculation@gmail.com

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা