প্রিয় ঘুঙুর বন্ধুরা আমাদের সবার প্রিয় লেখক হুমায়ূন আহমেদ। এই লেখকও এক সময় তোমাদের বয়সি ছিলেন। আজ তোমাদের জন্য রইল তার আত্মজীবনী ‘আমার ছেলেবেলা’ থেকে ঈদের একটা স্মৃতি...
উনুকে আমি কখনও হাসিখুশি দেখিনি। সারাক্ষণ সে চিন্তিত ও বিষণ্ন। শুধু একদিন হাসতে হাসতে দৌড়ে তাকে আমাদের বাসার দিকে আসতে দেখা গেল। জানলাম তার একটা বোন হয়েছে। দেখতে সে নাকি পরীর মতো সুন্দর। জন্মের পরপর সে হাসতে শিখে গেছে। সারাক্ষণ নাকি হাসছে।
আমি পরদিন সদাহাস্যময়ী উনুর ভগ্নিকে দেখতে গেলাম। উনুর মা শাড়ির আঁচল ফাঁক করে লাল টুকটুকে শিশুটিকে দেখিয়ে খুশি খুশি গলায় বললেন, নজর লাগাইও না। মাটিতে থুক দেও। যাতে শিশুটির ওপর নজর না লাগে সে জন্য আমি এবং উনু দুজনই মাটিতে একগাদা থুতু ফেললাম। এই ঘটনার খুব সম্ভব এক সপ্তাহের ভেতর উনুর বাবা সন্ন্যাসরোগে মারা গেলেন।
অন্যের দুঃখে অভিভূত হওয়ার মতো বয়স বা মানসিকতা কোনোটাই তখন ছিল না। কাজেই এ ঘটনা আমার মনে কোনো ছাপ ফেলল না। আমাদের বাসায়ও তখন বড় ধরনের সমস্যা। গনি চাচার চাকরি চলে গেছে। অ্যান্টিকরাপশনের মামলা চলছে তার বিরুদ্ধে। জেল হয়ে যাবে, মোটামুটি নিশ্চিত। তিনি কপর্দকশূন্য অবস্থায় তার স্ত্রী এবং পালক-পুত্রকে নিয়ে আমাদের বাসায় এসে উঠেছেন। গনি চাচার স্ত্রী রাত-দিন কাঁদেন। সেই কান্নাও ভয়াবহ কান্না। চিৎকার, মাটিতে গড়াগড়ি। আমরা ছোটরা অবাক হয়ে দেখি।
গনি চাচা উঠোনে পাটি পেতে সারা দিন শুয়ে থাকেন এবং তালপাতার পাখায় হাওয়া খান। দীর্ঘদিন তারা আমাদের বাসায় রইলেন। দুটি সংসার টানতে গিয়ে মা হিমশিম খেয়ে গেলেন। তার অতি সামান্য যেসব ছিল, সব বিক্রি হয়ে গেল। সেবার ঈদে আমরা কেউ কোনো কাপড় পেলাম না। আমাদের বলা হলো, অল্পদিন পরেই বড় ঈদ আসছে। বড় ঈদে সবাই ডাবল কাপড় পাব।
যেহেতু খানিকটা বড় হয়েছি- চারপাশের জগৎ কিছুটা হলেও বুঝতে শিখেছি, সে কারণে মনের কষ্ট পুরোপুরি দূর করতে পারছি না। মন-খারাপ করে ঘুরে বেড়াই। আশপাশের বাচ্চারা বাবাদের হাত ধরে দোকানে যায়। কলরব করতে করতে ফিরে আসে।
মনের কষ্ট দূর করতে উনুর চেয়ে ভালো কেউ নেই। মুহূর্তের মধ্যে সে অন্যের মন-খারাপভাব দূর করে দিতে পারে, যদিও সে নিজে আগের চেয়ে বিষণ্ন হয়ে যায়।
উনুকে বাসায় পেলাম না, উনুর মাকেও না। তারা সবাই কোথায় নাকি চলে গেছে। খুব খারাপ লাগল। উনুদের পাশের বাসার এক ছেলে বলল, উন জল্লারপাড়ের এক চায়ের দোকানে কাজ করে। বাবাবিহীন সংসারের দায়িত্ব এই বয়সেই সে মাথায় নিয়ে নিয়েছে।
খুঁজে খুঁজে একদিন তাকে বের করলাম। ময়লা হাফপ্যান্ট পরা। টেবিলে টেবিলে চা দিচ্ছে। আমি বাইরে থেকে ডাকলাম- এই উনু! সে তাকাল, কিন্তু দোকান থেকে বেরিয়ে এলো না।
বাসায় ফিরে এলাম। বাসায় খুব আনন্দ। খুব উত্তেজনা। বাবা জগদল থেকে আমাদের নিতে এসেছেন এবং ঘোষণা করেছেন এই ঈদেই আমাদের সবাইকে কাপড় এবং জুতা দেওয়া হবে। কেনাও হবে আজ।
আনন্দে লাফাতে লাগলাম।
উনুর কথা মনে রইল না।
সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি
প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু
রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯
যোগাযোগ
প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]
বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]
বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯, +৮৮০১৮১৫৫৫২৯৯৭ । ই-মেইল: [email protected]
সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]
2023 Protidiner Bangladesh All Rights Reserved. Developed By Protidiner Bangladesh Team.