রহিম শুভ
প্রকাশ : ১৭ মে ২০২৩ ১২:৩০ পিএম
আপডেট : ১৭ মে ২০২৩ ১২:৫০ পিএম
একটি আমগাছের বয়স ২০০ বছরের ওপরে! ১ একর জমি নিয়ে তার বিস্তার। গাছের কাণ্ড থেকে ২০টি শাখা বের হয়ে ছড়িয়ে পড়েছে চারদিকে। একেকটা শাখার দৈর্ঘ্য ৪০ থেকে ৫০ ফুট। সেই ডালগুলোর ওপর দিয়ে অনায়াসে হাঁটা যায়। মাটি ছুঁয়ে ছুঁয়ে চলা এর ডালগুলোই একেকটা আমগাছের মতো। সূর্যপুরী জাতের এ আমগাছটিতে এখনও নিয়মিত ফুল-ফল আসছে। আমের স্বাদও অনন্য।
কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা এ আমগাছটির অবস্থান ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার হরিণমারী সীমান্তের মণ্ডুমালা গ্রামে। এলাকাবাসীর দাবি, এটি উপমহাদেশের সবচেয়ে বড় আমগাছের গ্রাম হিসেবে পরিচিত; যদিও কোনো প্রমাণ নেই।
গাছটির বয়স কত তা কেউ ঠিক করে বলতে পারে না। উত্তরাধিকারসূত্রে বর্তমানে গাছটির মালিক সাইদুর রহমান ও নুরুল ইসলাম নামে দুই ভাই। তারাও বলতে পারেন না ঠিক কবে গাছটির চারা রোপণ করা হয়েছিল। তারা জানালেন, ছয় পুরুষ আগে গাছটি লাগানো হয়েছে। সে হিসেবে এলাকাবাসীর মতো তাদেরও ধারণা, আমগাছটির বয়স ২০০ বছরের ওপরে। এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও জেলা কৃষি সম্প্রাসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, কার্বন টেস্ট ছাড়া গাছের সঠিক বয়স নির্ধারণ করা সম্ভব নয়। তবে অভিজ্ঞতা থেকে আমার কাছে এ গাছের বয়স ২০০ বছরের ওপরে বলেই মনে হয়েছে।
গাছটির সবচেয়ে বড় আকর্ষণ এর ডাল। এ গাছের ডালগুলো কাণ্ড থেকে বেরিয়ে একটু ওপরে উঠেই মাটিতে নেমে গেছে। তারপর আবারও উঠেছে ওপরের দিকে। দেখতে অনেকটা টেউয়ের মতো।
প্রাচীন এ গাছটি দেখতে প্রতিদিনই কৌতূহলী মানুষ ভিড় জমায়। বালিয়াডাঙ্গী থেকে আসা বিকাশ চন্দ্র সিংহ জানান, তিনি মাঝেমধ্যে বন্ধুদের নিয়ে এ গাছ দেখতে আসেন। সেদিন এসেছেন রংপুর ও পঞ্চগড়ের দুই বন্ধুকে নিয়ে। তার মতো আরও অনেকেই এসেছেন গাছটি দেখতে।
পীরগঞ্জ থেকে আসা নাজমুল ইসলাম বলেন, এর আগে দুবার এসেছি। তবে এবার এসেছি আম দেখতে। এত বড় গাছে আম ঝুলে আছে, দেখতেও ভালো লাগছে।
এলাকাবাসী জানালেন, একেকটি সূর্যপুরী আমের ওজন ১৫০ থেকে ২০০ গ্রাম হয়। বাজারে চাহিদা বেশি থাকায় এ গাছের আমের দাম অন্য আমের তুলনায় কেজিপ্রতি ৫০ টাকার মতো বেশি। এর আঁটি ছোট এবং শ্বাস বেশি।
সূর্যপুরী আমগাছটির অন্যতম মালিক নুরুল ইসলাম বলেন, প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে আমগাছটি দেখার জন্য ছুটে আসছেন দর্শনার্থীরা। দর্শনার্থী প্রবেশ বাবদ ২০ টাকা নেওয়া হয়। আর গত বছরের চেয়ে এ বছর মুকুল অনেক বেশি দেখা যাচ্ছে। গত বছর ৭০ মণ আম পেয়েছি। এ বছর আশা করছি ৩০০ মণ আম পাব। আর বাজারের চেয়ে এ গাছের আমের দাম একটু বেশি রাখা হয়। যেহেতু এটির চাহিদা অনেক বেশি।
ঠাকুরগাঁও জেলা কৃষি সম্প্রাসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, গাছটি রক্ষায় এবং এর মুকুল কীভাবে আটকানো যাবে সে বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছি এবং আমরা পর্যবেক্ষণ করছি।