আসাদ জামান
প্রকাশ : ২১ মে ২০২৩ ১২:২৮ পিএম
একটি মেলার বয়স ৪২০ বছর! এটা অবাক হওয়ার মতো ঘটনা নয়। বিস্ময়কর ব্যাপার হলো, এই মেলা থেকে মনের আশা বা স্বপ্ন পূরণ হয়! আমাদের গ্রামীণ জনপদের পরতে পরতে ছড়িয়ে আছে কত যে মিথ বা কিংবদন্তি! তেমনি মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার সাহরাইল গ্রামের সিদ্ধাবাড়ির মেলার সঙ্গে জড়িয়ে আছে নানান মিথ।
ধারণা করা হয়, এই গ্রামেরই সিদ্ধাবাড়ির সন্ন্যাসী শম্ভুচান প্রায় ৪০০ বছর আগে মেলাটি শুরু করেন। কালের পরিক্রমায় মেলাটি সিদ্ধাবাড়ির মেলা নামে পরিচিতি পেয়েছে। তবে স্থানীয়রা এ মেলাকে শম্ভুচানের মেলা বা সন্ন্যাসীর মেলা নামে জানেন।
প্রতিবছরের মতো এবারও ২০ বৈশাখ থেকে বসেছে এ ঐতিহ্যবাহী মেলা। মাসব্যাপী এ মেলায় প্রতিবছরই যাওয়া হয়। এবার গিয়ে দেখলাম, মেলায় হাজারো পসরা সাজিয়ে বসেছেন নানান শ্রেণির মানুষ।
গরমের দাবদাহ। নতুন পোশাক পরে দর্শনার্থীরা মেলা আসা হরেক রকমের মিষ্টি পরখ করছেন। কেউ মিষ্টির হাঁড়ি নিয়ে বাড়ি ফিরছেন। বৃহৎ পরিসরে বসা এ মেলায় লোকজপণ্য, তামার তৈজসপত্র, মাটির হাঁড়ি-পাতিল, টেপা পুতুল, গরু, হরিণ, হাতি, মাছসহ গৃহস্থালিসামগ্রী ও নারীদের সাজসজ্জার উপকরণ নিয়ে দোকানিরা পসরা সাজিয়ে বসেছেন। এ ছাড়া শিশুদের আনন্দের জন্য বিভিন্ন রাইডের ব্যবস্থাও রয়েছে।
বিচিত্র সব দৃশ্য থেকে চোখ এড়ানো দায়। কাঠের দাড়িপাল্লার দড়ি হাতে দাঁড়িয়ে আছেন দুজন। পরনে লাল কাপড়। এরা কারোর মানত পূরণ হওয়ায় অনেক মা-বাবাকে নিজেদের সন্তানের ওজন পরিমাপ করে সেই পরিমাণ ফল সেখানে দিচ্ছেন তাদের কাছে। কেউ কেউ টাকা-পয়সাও দান করছেন। ভক্তদের বিশ্বাস, এখানে দান করলে মনের আশা পূরণ হয়।
প্রতিদিন হাজারে হাজার মানুষ এ মেলায় আসে। সারা দেশের দূর-দূরান্ত থেকে এখানে দর্শনার্থীরা তো আসেই এর পাশাপাশি ভারত, শ্রীলঙ্কা, নেপাল ও কানাডা থেকেও ভক্তরা মেলায় অংশ নিতে আসে। এ মেলা নিয়ে লোকশ্রুতি আছে, মেলা শুরুর আগেই শম্ভুচান সেখানে শিব মন্দির প্রতিষ্ঠা করে প্রতিদিন পূজা করে ধ্যানে বসতেন। তার কর্মযজ্ঞ দেখে আশপাশের লোকজন মনে করতেন তিনি অলৌকিক শক্তির ধারক। তারপর থেকেই আশপাশের সব ধর্মের নারী-পুরুষ তাদের মনের বাসনা পূরণের আশায় তার কাছে আসতেন।
মেলায় আগত দর্শনার্থী চম্পা রানী বিশ্বাসের সঙ্গে কথা হয়। তিনি ২০ বছর ধরে পরিবার ও সন্তান নিয়ে নিজের এবং পরিবারের সবার মঙ্গল কামনার জন্য এখানে আসেন। তার ধারণা, এখানে যারা আসেন প্রত্যেকেই কোনো না কোনো আশা-আকাঙ্ক্ষা নিয়ে আসেন। এই মেলায় যে যা মানত করেন, তা পূর্ণ হয় বলেই হাজার হাজার মানুষ এখানে আসেন।
সিদ্ধাবাড়ি মেলার আয়োজক কমিটির সভাপতি আশীষ কুমার সাহা জানান, এবারও সিদ্ধাবাড়ির মেলা চলছে। এই মেলাকে কেন্দ্র করে বাড়ি বাড়ি লোক-কুটুম আসা-যাওয়া করছেন। তিনি বলেন, ‘মেলাটি মূলত আমাদের লোক ঐতিহ্যের অংশ। অতীতে এখানে জারিগান, পালাগান ও কবিগানের আসর বসলেও এখন এটি বন্ধ আছে। আগামীতে গানের আসরটি চালু হতে পারে।’
সামাজিক আনন্দ-বিনোদনের এ রকম গ্রামীণ মেলার মাধ্যমে প্রসার ঘটছে বাঙালির সংস্কৃতি। মানুষে মানুষে মেলবন্ধন হচ্ছে।