× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

দিনাজপুরের বাঁশমালীদের দিনকাল

রবিউল ইসলাম

প্রকাশ : ২৭ মে ২০২৩ ১২:১৮ পিএম

দিনাজপুরের বাঁশমালীদের দিনকাল

চলছে আম, লিচুসহ অন্যান্য রসালো ফলের মৌসুম। লিচুর রাজ্য হিসেবে খ্যাত দিনাজপুরসহ আশপাশের জেলার মানুষ আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে এ সময় উপহার হিসেবে ফল পাঠায়। লোক কুটুমবাড়ি বলে কথা। একটু টিপটপ ও নান্দনিক পাত্রে ফল নিয়ে যাওয়াটা ছিল সম্মানের বিষয়। শুধু আত্মীয় বাড়িতে ফল পাঠানোর কাজে নয়, ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে সবখানে ফল পরিবহনের অন্যতম উপকরণ ছিল বাঁশের তৈরি টুকরি বা ঝুড়ি।

সম্প্রতি দিনাজপুরের বোচাগঞ্জ হাটের বাঁশের কারিগরদের সঙ্গে কথা হলো। রকমারি বাঁশজাত পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসে আছেন তারা। নতুন বাঁশের মিষ্টি সুবাস ভেসে আসছে। বাঁশের ডালা, কুলা ও ঝাঁকা রশি দিয়ে আঁটসাঁট করে বাঁধছেন বাহাদুর বৈশ্য নামের এক কারিগর। এসেছেন সেতাবগঞ্জের কড়ইল গ্রাম থেকে। তার পেশা ও পণ্য সম্পর্কে জানতে চাইলাম। তিনি জানালেন, ‘আগের মতো এসব বাঁশের জিনিসের কদর ও দাম কোনোটাই নাই। এখন ক্ষেত-খামারের কাজে মেশিনের যন্ত্রপাতি আসায় আমাদের জিনিসের চাহিদা কমে গেছে। আগে তো আম, লিচু পাকার আগেই পাইকাররা জিনিসপত্তর অগ্রিম অর্ডার দিত।’ তিনি আরও জানান, ‘ফল বহনের কাজে বাঁশের ঝাঁকার বদলে আইছে প্লাস্টিকের খাঁচা। মাছ ধরার চাঁইয়েরও দরকার পড়ে না তেমন। ফলের মৌসুম লাগছে। আবার ধানের কাজেও এসব জিনিসের একটু চাহিদা বাড়ছে। তাই কিছু জিনিসপত্তর বেচাবিক্রি বাড়ছে। কিছুদিন পরে এই হাট ফাঁকা পড়ে থাকবে।’ 

কেমন আয়-রোজগার হয়- এমন প্রশ্নের উত্তরে বীরগঞ্জ থানার লক্ষ্মীপুর গ্রাম থেকে হাটে আসা আরেক কারিগর ফটিক বৈশ্য জানালেন, ‘প্রতিটি জিনিসের যে দাম। দিনপাত চলা কঠিন। এর ওপর আছে বাঁশের দাম। এই পেশা ছাড়া তো আর কোনো কাজ আমাদের নাই। লাভ না হলেও এই কাজই কামড়ে ধরে আছি।’ এমন পরিস্থিতি শুধু তার একার নয়- এই হাটে আসা আরও কয়েকজন বাঁশমালীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেল। যাদের একটু অর্থকড়ি আছে, তাদের অনেকেই পেশা বদল করছে। অথচ অতীতে এ অঞ্চলে বাঁশের লোকপণ্য তৈরি করাই ছিল তাদের বংশপরম্পরের পেশা। বাঁশের তৈরি পণ্য বেচাকেনার জন্য এটিই বড় হাট। এখানে বীরগঞ্জ, হরিপুর, আশপাশের গ্রামের কারিগররা আসেন তাদের তৈরি রকমারি পণ্য বিক্রি করতে। মানুষ আর আগের মতো এসব পণ্য ঘর-গৃহস্থালির কাজে ব্যবহার করে না।

একটি ভালো মানের বাঁশের দাম এখন ২০০-২২০ টাকা। সেই বাঁশ দিয়ে দুই দিনে একজন ব্যক্তি চারটি ঝাঁকা তৈরি করতে পারেন। একটি ঝাঁকার মূল্য ১৮০ টাকা। পাইকারি বিক্রি করলে ১০০-১২০ টাকা। ওই হিসাবে একজনের দৈনিক আয় ২৫০-৩০০ টাকা। তবে লিচুর মৌসুমে বাঁশের টুকরির চাহিদা থাকায় ৪৫০-৫০০ টাকা পর্যন্ত মাথাপিছু আয় হয় তাদের। 

বাঁশের তৈরি কিছু শিল্প আছে, যা সাজসজ্জার কাজে ব্যবহার করলেও এই অঞ্চলের কারিগরদের তেমন কোনো পৃষ্ঠপোষকতা না থাকায় হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের আদিবাসীদের জীবনাচরণ ও অনুভূতির প্রতীক বাঁশের তৈরি নানাবিধ পণ্য। নিত্যব্যবহার্য এই বাঁশ কালক্রমে লোকসংস্কৃতি ও কারুশিল্পের প্রধান উপকরণ হয়ে ওয়ে উঠলেও আধুনিকতার নামে এবং প্লাস্টিকসহ অন্যান্য পণ্যের সহজলভ্যতার ফলে হারিয়ে যেতে বসেছে নান্দনিক লোকশিল্পটি। আমাদের লোকশিল্প ও কারুশিল্পের অন্যতম উপকরণ বাঁশের তৈরি কুলা, মাথাল, ভাতঝাঁপি, পাখা, ডালি, খইচালা, লিচুর খাঁচা, আমের খাঁচা, ডালা, ঝাড়ু, খুচিঘর, মাচা, মই, মাদুর, ঝুড়িসহ কত প্রকার যে জিনিস! এসব পণ্য তৈরিতে মুলিবাঁশ, তল্লাবাঁশ ও বইরাবাঁশ দিয়ে শিল্পকর্ম করা সহজ। অন্যদিকে এসব বাঁশেরও উৎপাদন কমছে তুলনামূলকভাবে। লোকজীবনে এসব পণ্যের ব্যবহারও কমে গেছে। অস্তিত্ব সংকটে আছে এ শিল্পকর্ম। যদিও সম্প্রতি নগরজীবনে বাঁশের তৈরি নান্দনিক আসবাবপত্রের ব্যবহার বাড়লেও খরচের অনুপাতে যথেষ্ট মূল্য বাঁশমালীরা পান না। তাই পরিবেশবান্ধব এই বাঁশপণ্যের ব্যবহার বাড়ানো দরকার। 

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা