মৌলভীবাজারসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের পছন্দ ম্যানেজার স্টলের রসগোল্লা
১৯৪৭ থেকে ’৭৩ সাল পর্যন্ত জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বেশ কয়েকবার এসেছিলেন সিলেট অঞ্চল সফরে। তিনি ওই সময়ে চষে বেড়িয়েছেন সিলেট, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজারের প্রত্যন্ত অঞ্চল। সে সময় সিলেট অঞ্চলে তাঁর প্রিয় খাবারের তালিকায় অন্যতম ছিল মৌলভীবাজারের ‘ম্যানেজার স্টল’-এর মিষ্টি। এমনকি তিনি যখন রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় ছিলেন তখনও লোকমারফত এ স্টলের মিষ্টি নিয়ে গেছেন তাঁর রাজধানীর বাসভবনে।
এ ছাড়া ম্যানেজার স্টলের মিষ্টির ভক্ত ছিলেন বিংশ শতকী বাঙালি সাহিত্যিক, আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম দিকপাল- ছোটগল্পকার, অনুবাদক ও রম্যরচয়িতা বহুভাষাবিদ সৈয়দ মুজতবা আলী। তার বাড়ি মৌলভীবাজার হওয়ায় প্রায়ই ম্যানেজার স্টলে এসে রসগোল্লা খেয়ে তৃপ্তির ঢেকুর তুলতেন। এ দুজন ছাড়াও দেশের অনেক রাজনীতিক, বুদ্ধিজীবী, কবি-সাহিত্যিক ম্যানেজার স্টলের মিষ্টির প্রেমে মাতোয়ারা ছিলেন। এখনও এখানে বসে সাহিত্যিক, রাজনীতিক, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবীর আড্ডা।
’৪৭-এর দেশভাগের পর যাত্রা হয় ঐতিহ্যবাহী ম্যানেজার স্টলের; যার বয়স ৭৫ বছর। স্টলটি যাত্রা থেকেই সব আন্দোলন-সংগ্রামের সূতিকাগার। মহান মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন সময় এখান থেকেই স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা পরিকল্পনার ছক এঁকেছেন। জেলার প্রবীণ ও বিশিষ্ট রাজনীতিবিদরা অনেকেই তরুণ বয়সে ম্যানেজার স্টলে বসেই অগ্রজদের কাছ থেকে নিয়েছেন রাজনীতির প্রথম পাঠ। এখনও জেলার বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মিলনমেলা এই ম্যানেজার স্টল।
জানা যায়, ৭৫ বছর আগে মৌলভীবাজার শহরের সেন্ট্রাল রোডে (চৌমোহনা সংলগ্ন) ছোট্ট একটি কুটিরে যাত্রা জেলার ঐতিহ্যবাহী এ মিষ্টান্ন দ্রব্যের দোকানটির। শুরুতে এ প্রতিষ্ঠানের নাম ছিল মদন-মোহন মিষ্টান্ন ভান্ডার। এর স্বত্বাধিকারী ছিলেন সুশীলচন্দ্র দাস। তিনি এলাকাবাসীর কাছে ম্যানেজারবাবু হিসেবে পরিচিত ছিলেন। সবাই ‘মদন-মোহন মিষ্টান্ন ভান্ডার’টিকে ম্যানেজারবাবুর স্টল বলেই চিনতেন, জানতেন। ফলে ধীরে ধীরে এ নামটিই সর্বত্র পরিচিত হয়। এ কারণে একসময় মদন-মোহন মিষ্টান্ন ভান্ডার থেকে এটি ম্যানেজার স্টল নামকরণ হয়।
সুশীলচন্দ্র দাস ১৯৯২ সালে মৃত্যুবরণ করেন। কিন্তু রয়েছে তার প্রতিষ্ঠিত জেলার ঐতিহ্যবাহী ম্যানেজার স্টল। এটি বর্তমানে পরিচালনা করছেন তার ছেলে সুমেশ দাস যিশু। কথা হয় তার সঙ্গে। তিনি বলেন, ১৯৪৭-এর দেশভাগের পর তার বাবা সুশীলচন্দ্র দাসের হাত ধরে যাত্রা হয় মদন-মোহন মিষ্টান্ন ভান্ডারের; যা সেই সময়ই ম্যানেজারবাবুর স্টল নামে পরিচিত ছিল। পরে এর নামকরণ হয় ম্যানেজার স্টল। ৭
৫ বছরের ঐতিহ্যবাহী এ মিষ্টান্ন ভান্ডারটি আদিকাল থেকে মৌলভীবাজারের ইতিহাস-ঐতিহ্য ও কৃষ্টির সঙ্গে যুক্ত একটি নাম। এ স্টলের স্পঞ্জ রসগোল্লা দেশব্যাপী বিখ্যাত। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আমল থেকে এ স্পঞ্জ রসগোল্লা গণভবন, বঙ্গভবন, সচিবালয়সহ দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে বিদেশেও যাচ্ছে। এ জনপদের অধিকাংশ প্রবাসী দেশে এলে বিদেশে ফিরে যাওয়ার সময় ম্যানেজার স্টলের রসগোল্লা সঙ্গে নিয়ে যান।
প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠাকালে ছিল বাঁশবেতের ছোট একটি কুটির। কুটিরের ভেতরে ও পেছনে প্রতিদিনই জেলার কবি-সাহিত্যিক, রাজনীতিক, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবীসহ সব শ্রেণি-পেশার লোকজন আড্ডায় মাতোয়ারা হতেন। সন্ধ্যার পর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলত প্রাণবন্ত আড্ডা। একসময় বাঁশবেতের কুটিরে স্থানসংকুলান না হওয়ায় তৈরি হয় পাকা ঘর। পুরোনো আসবাবপত্রের স্থান দখল করে নেয় নতুন আসবাবপত্র। দেয়ালে লাগানো হয় পোড়ামাটির চিত্রায়ণ। সেসব চিত্রায়ণে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে গাভি লালনপালন, দুধ সংগ্রহ, মিষ্টি তৈরি, আপ্যায়ন ও অনুষ্ঠানাদির নানা চিত্র।
ম্যানেজার স্টলের কারিগররা জানান, এ প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন ধরনের মিষ্টি বানাতে প্রতিদিন ৮০ থেকে ১০০ কেজি ছানার প্রয়োজন হয়। সিলেট অঞ্চলের বিভিন্ন গ্রাম থেকে দুধ সংগ্রহ করে ছানা তৈরি করতে হয়। ম্যানেজার স্টলের মূল আকর্ষণ স্পঞ্জ রসগোল্লা। এ ছাড়া রসমালাই, প্যারাসন্দেশ, জলমোহন, কালোজাম ইত্যাদির চাহিদাও রয়েছে ব্যাপক। এখানে প্রতিদিন গড়ে বিক্রি হয় প্রায় দেড় হাজার কেজি মিষ্টি। তবে স্পঞ্জ রসগোল্লার বিক্রিই সর্বাধিক।
সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি
প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু
রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯
যোগাযোগ
প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]
বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]
বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯, +৮৮০১৮১৫৫৫২৯৯৭ । ই-মেইল: [email protected]
সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]
2023 Protidiner Bangladesh All Rights Reserved. Developed By Protidiner Bangladesh Team.