× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

ঐতিহ্যবাহী জামাইবরণ মেলা

দীপক কুমার সরকার

প্রকাশ : ২৯ মে ২০২৩ ১২:৫৬ পিএম

ঐতিহ্যবাহী জামাইবরণ মেলা

মাঠের ধান কাটা শেষ। ধানগাছের কাণ্ডে পুনরায় গজিয়েছে কচি পাতা। সেগুলো দক্ষিণা বাতাসে দুলছে। এই নতুন পাতার মতোই এখানকার মানুষের মনেও তাড়া দিচ্ছে উৎসবের ঢেউ- যে উৎসব উদযাপিত হয়ে আসছে প্রায় সাড়ে চার শ বছর ধরে। এটা নিয়ে আছে নানা কিংবদন্তি! বলছি বগুড়ার শেরপুর উপজেলা সদর থেকে তিন কিমি পশ্চিমে অবস্থিত কেল্লাপোশী গ্রামের মেলার কথা। মেলা শুরুর সপ্তাহখানেক আগে থেকে আশপাশের কয়েক গ্রামের মানুষের মাঝে বিরাজ করে অন্যরকম আমেজ। থাকতে হবে আত্মীয়স্বজনের উপস্থিতি। গৃহ আঙিনাকেও সাজাতে হবে ভিন্নভাবে- যেন সাজ-উৎসবের ক্ষণ।

প্রতি বছর জ্যৈষ্ঠ মাসের দ্বিতীয় রবিবার থেকে শুরু হয় এই মেলা। ২৮ মে রবিবার থেকে শুরু হয়েছে। মেলা চলবে বুধবার পর্যন্ত। এটি স্থানীয়দের কাছে ‘মাদারের মেলা’ ও ‘জামাইবরণ’ মেলা নামে পরিচিত। যে নামেই ডাকুক না কেন! এটি এ অঞ্চলের মানুষের কাছে প্রাণের এক মেলা। 

কথিত আছে, ১৫৫৬ সাল থেকে কেল্লাপোশীতে এ মেলা হয়ে আসছে। জনশ্রুতি আছে- বৈরাগনগরের বাদশা সেকেন্দারের ছেলে গাজী মিয়া। আর তার দত্তক পুত্র কালু মিয়া। দুই ভাই ফকির-সন্ন্যাসীর বেশ ধারণ করে ব্রাহ্মণনগরে আসেন। ব্রাহ্মণ রাজা মুকুটের ছিল সাত পুত্র ও এক কন্যা চম্পাবতী। চম্পাবতী গাজীকে দেখে মুগ্ধ হয়। কালু মিয়া বিষয়টি জানতে পেরে গাজীর বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে মুকুট রাজার কাছে যান। বিয়ের কথা উত্থাপন করলে কালু বন্দি হন। গাজীর সঙ্গে যুদ্ধ বাধল মুকুট রাজার। মুকুট রাজার কাছ থেকে ভাই কালু মিয়াকে উদ্ধারের জন্য গাজী মিয়া কেল্লাপোশী নামক একটি দুর্গ নির্মাণ করেন। যুদ্ধে রাজা মুকুটের পরাজয় ঘটে। গাজী ও চম্পাবতী পরিণয়ে আবদ্ধ হন।

গাজী ও চম্পাবতীর সেই শুভ পরিণয় হয়েছিল জ্যৈষ্ঠ মাসের দ্বিতীয় রবিবার। ওই সময় গাজীর বিয়ে উপলক্ষে কেল্লাপোশী দুর্গে নিশান উড়িয়ে তিন দিনব্যাপী আনন্দ উৎসব চলে এবং সেখানে মাজার গড়ে তোলা হয়। তখন থেকেই চলে আসছে এ মেলা।

কেল্লাপোশীর শাহাদত হোসেন বাদশা জানান, ‘মেলার অন্তত সপ্তাহখানেক আগ থেকেই গ্রামের লোকজন নানা ধরনের প্রস্তুতি নিতে থাকেন। এবারও এই মেলা নিয়ে চলছে সাজ সাজ রব।’ মেলা শুরুর সপ্তাহখানেক আগ থেকে গ্রামে গ্রামে চলছে একটি ভিন্নধর্মী খেলা। বড় একটা বাঁশ লাল কাপড়ে মুড়িয়ে এবং নানা রঙে সাজিয়ে সেটির বিভিন্ন স্থানে চুল লাগিয়ে ১৫-২০ জনের দল ঢাকঢোল, গান-বাজনার নানা সরঞ্জাম নিয়ে আশপাশে গ্রাম প্রদিক্ষণ করে। দলটি মেলা এলাকায় অবস্থিত মাজার প্রাঙ্গণে গিয়ে শেষ হয় জ্যৈষ্ঠ মাসের দ্বিতীয় রবিবারে। 

নিমন্ত্রণে আসা নতুন-পুরোনো জামাই-বউদের সমাদর করা হয় মর্যাদার সঙ্গে। জামাইরা থাকেন ভিন্ন সাজে। কারণ মেলায় নাইওর আসা জামাইদের হাতে তুলে দেওয়া হয় সেলামি। সে অর্থ এবং নিজের অর্থ দিয়ে জামাইদের মেলা থেকে শ্বশুড়বাড়ির জন্য কিনতে হয় খাসি। এ ছাড়াও বড় বড় মাটির পাতিল ভর্তি করে মিষ্টান্ন, সবচেয়ে বড় মাছ, মহিষের মাংস, রকমারি খেলনা ক্রয় করেন। শ্যালক-শ্যালিকাদের নিয়ে মেলা ঘুরে ঘুরে দেখেন। তাদের সার্কাস, নাগরদোলা, জাদুখেলা, পুতুলনাচ দেখিয়ে দিনব্যাপী আনন্দ শেষে ছাতা, ছোটদের কাঠের ও ঝিনুকের তৈরি খেলনাসামগ্রী নিয়ে সন্ধ্যায় বাড়ি ফেরেন। 

এ মেলার অন্যতম আকর্ষণ লাঠিখেলা। এ খেলা দেখাতে দর্শক ভিড়া জমায়। এছাড়া মেলার মাঠে বিভিন্ন ধরনের কাঠ, বাঁশের তৈরি আসবাবপত্র, বাহারি স্বাদের মিষ্টি, ফলমূল, নানা জাতের মাছ, কুটির শিল্পসামগ্রী, মহিষ ও খাসির মাংস, রকমারি মসলার দোকান বসে। মানে ভালো দামে সাশ্রয়ী- রকমারি পণ্য কেনার জন্য বছরব্যাপী অপেক্ষা করেন এলাকাবাসী। শেরপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) নবকুমার সাহা বলেন, ‘গ্রামীণ ঐতিহ্যের নিদর্শন হিসেবে পরিচিত এ মেলার সঙ্গে মিশে আছে এ অঞ্চলের মানুষের আবেগ ও অনুভূতি।’

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা