× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

এই সময়ে আমের দেশে

গোলাম কিবরিয়া

প্রকাশ : ০৩ জুন ২০২৩ ১৩:১৬ পিএম

আপডেট : ০৩ জুন ২০২৩ ২৩:২৪ পিএম

কানসাট আমবাজার                                          ছবি : মম মোস্তফা

কানসাট আমবাজার ছবি : মম মোস্তফা

কানসাট আমবাজার                                          ছবি : মম মোস্তফা

কানসাট আমবাজার ছবি : মম মোস্তফা

রাস্তার দুইধারে যতদূর চোখ যায়, শুধুই আমের বাগান। বিস্তৃত বাগানে একের পর এক গাছ থেকে পাড়া হচ্ছে আম। ঝুড়িতে করে সেই আম তোলা হচ্ছে ভ্যানে; যাচ্ছে হাটে। মণকে মণ আম প্রতিদিন কেনাবেচা করছেন ব্যবসায়ীরা। বিস্তারিত লিখেছেন গোলাম কিবরিয়া

প্রতিটি জায়গার নিজস্ব রঙ-গন্ধ আছে- রাজশাহীর সীমানায় পা দিতেই কথাটা নতুন করে মনে পড়ল। আমের সুবাসে মৌমাতাল পুরো অঞ্চল। গাছে গাছে ঝুলছে কাঁচা-পাকা আম। রাস্তার দুই ধারে যত দূর চোখ যায়, শুধুই আমের বাগান। ইচ্ছা করলেই মাটিতে দাঁড়িয়ে, এমনকি শুয়ে-বসেও ছোঁয়া যায়। চাইলে দু-একটা পেড়ে খেতেও পারবেন। যারা এই অভিজ্ঞতা নিতে চান, তাদের জন্য এটাই আদর্শ সময়। প্রখর এই রোদেও ছায়াঘেরা বাগানগুলোতে পাবেন স্নিগ্ধ, শান্তিময় এক পরিবেশ। দেখবেন বিস্তৃত বাগানে একের পর এক গাছ থেকে পাড়া হচ্ছে আম। ঝুড়িতে করে সেই আম তোলা হচ্ছে ভ্যানে; যাচ্ছে হাটে। সেখানে সারি সারি মানুষ মণকে মণ আম প্রতিদিন কেনাবেচা করছেন।

বানেশ্বরের আমের হাট

আমের জন্য বানেশ্বর হাট অনেকের কাছেই পরিচিত। এই হাটের অবস্থান রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলায়। ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কের পাশেই এই হাট। সেখানে গাদাগাদি করে দাঁড়িয়ে শতাধিক আমবোঝাই ভ্যানগাড়ি। পাশে আরেকটি ছোট মাঠ। সেটিও আমের ভ্যানে ভরা। আমগাছের ছায়াঘেরা মহাসড়কের দুই পাশে যত দূর চোখ যায় শুধু আম আর আম। আমবোঝাই কয়েকশ ভ্যান অপেক্ষমাণ বিক্রেতা আর পাইকারদের ভিড়ে। 

সকালে ঢাকার গাবতলী থেকে বাসে করে রওনা দিই নাটোরের উদ্দেশে। বিকেলে পৌঁছে যাই বনলতা সেনের নাটোর। সেখানে রাত কাটিয়ে সকালে তালাইমারি থেকে লেগুনায় করে রওনা দিলাম বানেশ্বরের উদ্দেশে। বানেশ্বর পৌঁছতে আমাদের সময় লাগল প্রায় ২৫ মিনিট। সেখানে একটি হোটেলে সকালের নাশতা সেরে আমরা ঢুকে পড়লাম আমের হাটে। যারা ইতোমধ্যে আম নিয়ে চলে এসেছে তারা বসে নেই। বাজারজুড়ে যেন চলছে আমকে কেন্দ্র করে এক উৎসব। কোথাও আম বিক্রি হচ্ছে, কোথাও বা ক্রেতা দোকানির সঙ্গে দামাদামি করছেন। দামাদামির একপর্যায়ে ক্রেতার মন নরম করতে দোকানি একটু কৌশল করে একটা মিষ্টি আম কেটে খাইয়ে দিচ্ছেন ক্রেতাকে! সময় যত গড়াতে লাগল, বাজার যেন ততই জমজমাট হতে লাগল।

রাজশাহীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভ্যানে করে আসছে বিভিন্ন স্বাদের রসালো আম। গুটি, গোপালভোগ, হিমসাগরÑ আরও কত কত নাম। ভ্যানে চেপেই বিক্রেতারা ক্রেতাদের ডাকছেন, আম বিক্রি করছেন। আকার ও জাতভেদে আমের দাম ওঠানামা করছে। ফেসবুকসহ বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্মে বিক্রি হচ্ছে আরও বেশি। আমের কেনাবেচা দেখতে দেখতে অনেকটা ক্লান্ত হয়েই ঢুকে পড়ি পাশের এক আমবাগানে। আমের ভারে গাছের ডালগুলো এতটাই নুয়ে গেছে যে কোনো কোনো ডাল মাটি স্পর্শ করেছে। মালিকের সম্মতিতে আমরা সুযোগ পেলাম গাছ থেকে আম ছিঁড়ে খাওয়ার। এই স্বাদ কখনও ভুলবার নয়। 

আমের রাজধানীর খোঁজে

বন্ধু শামীম জানালো, রাজশাহীর চারঘাট ও বাঘায় অনেক আমের বাগান থাকলেও প্রকৃত আমবাগান দেখতে হলে আমাদের চাঁপাইনবাবগঞ্জে যেতে হবে। সেখানকার শিবগঞ্জ উপজেলাকে বলা হয় আমের রাজধানী। রাজশাহী শহর থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরত্বে চাঁপাইনবাবগঞ্জ। বাসে প্রায় দেড় ঘণ্টা লেগে গেল। একসময় চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার পুরোটাই নাকি ছিল আমের বাগান। এখনও শহরের আদালতপাড়া, পুলিশ সুপারের কার্যালয়, জেলা প্রশাসকের কার্যালয় এবং কলেজের পুরো অংশই আমবাগান। শহরটা ঘুরলে মনে হবে, আমবাগানের মধ্যেই যেন মানুষের বসতি। সদর উপজেলা ছাড়াও শিবগঞ্জ, ভোলাহাট ও গোমস্তাপুর—উপজেলাও আমবাগানের মধ্যেই।

থানাঘাটের বাজার

চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের পশ্চিম পাশ দিয়ে বয়ে চলা সুন্দর নদীটিই মহানন্দা। আমের মৌসুমে শহরের থানাঘাটে প্রতিদিন সকালবেলা দূর-দূরান্ত থেকে আমবোঝাই অনেক নৌকা ভিড় জমায়। খুব ভোরে শুরু হয় এ বাজার। বেলা বাড়ার কিছু পরই শেষ হয়ে যায়।

শহর থেকে বেরিয়ে মহানন্দা সেতু পেরিয়ে শিবগঞ্জের দিকে রওনা দিলে রাস্তার দুই পাশে চোখে পড়বে শত শত আমবাগান। শহর থেকে শিবগঞ্জের দূরত্ব মাত্র ১৭ কিলোমিটার। রাস্তায় যেতে যেতে চোখে পড়ল আমের ভ্যান, আমের গাড়ি, মানুষের হাতে আম, মাথায় আম এ যেন আমজনতার আম। এখানকার সেনের বাগান, মোজাফফর মিয়াদের বাগান, কানসাটের রাজার বাগান, কানসাটের পাগলা নদীর পশ্চিম পারের চৌধুরীদের বাগানসহ আরও অনেক নামকরা আমের বাগান রয়েছে। আমরা ঘুরে ঘুরে আমবাগান দেখি। 

অভিজ্ঞতা থেকে জানি, সারা বছর আমবাগানগুলো নিরিবিলি থাকলেও এপ্রিল, মে, জুন, জুলাই— এই সময়টা আমবাগানে ঘোরার জন্য সবচেয়ে ভালো সময়। গরম থাকলেও এই সময় চাইলেই গাছ থেকে টাটকা আম পেড়ে খেতে পারবেন। যেকোনো বাগানে ঘুরতে পারবেন। বিশ্রাম নিতে পারবেন আমবাগানের মধ্যে থাকা ছোট ছোট মাচায়। আমরা যেমন ক্লান্ত শরীর এলিয়ে দিয়েছি বন্ধু মনু মোহন বাপ্পাদের আমবাগনে। 

কানসাট আমবাজার                                          ছবি : মম মোস্তফা

কানসাট আমবাজার

শিবগঞ্জ ঘুরতে এসে কানসাট না যাওয়াটা বিশাল বোকামি। কানসাটেই সম্ভবত বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় আমের হাট। ফজলি, ক্ষীরশাপাতি, ল্যাংড়া, গোপালভোগ, বোম্বাই, লক্ষ্মণভোগ, ফণিয়া, হিমসাগরসহ নানা প্রজাতির আমের দেখা মিলল এখানে। উৎসুক চোখে এক আড়তের সামনে গিয়ে দাঁড়াই। শত শত গাড়ি ঢুকছে, বের হচ্ছে, লোকজন আসছে-যাচ্ছে। মনে হচ্ছে, এ যেন আমের স্বর্গ। এসব দেখতে দেখতেই পেটে টান পড়ে। হাটের পাশের ছোট দোকানগুলোর একটিতে গিয়ে বসে পড়ি। এ অঞ্চলের বিখ্যাত গরম গরম কালাই রুটি বেগুন ভর্তা দিয়ে মুখে পুরতেই যেন অমৃতের স্বাদ পাই। 

সাপাহার আমের নতুন ঠিকানা

রাজশাহী বা চাঁপাইনবাবগঞ্জের মতো নওগাঁর আমের ঐতিহ্য প্রাচীন নয়। মাত্র বছর দশেক হলো জেলার সাপাহার, পোরশা, নিয়ামতপুর ও পত্নীতলা উপজেলায় আমবাগানের প্রচলন হয়েছে। এখানকার মানুষ তাদের আবাদি জমিতে ধান চাষ বাদ দিয়ে অধিক লাভের আশায় আমের চাষ শুরু করেন। স্বল্প সময়ের মধ্যে দেশের আম উৎপাদনে নওগাঁ জেলা এখন দেশের শীর্ষে। জেলার পোরশা ও সাপাহারের আম এখন দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশেও যাচ্ছে বেশ সুনামের সঙ্গে। তাই আমাদের পরবর্তী গন্তব্য সাপাহার। বর্তমানে দেশের সর্ববৃহৎ আম বাজার নওগাঁ জেলার সীমান্তবর্তী এই সাপাহার উপজেলায়। নানা জাতের আম কেনাবেচার মধ্য দিয়ে বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে জমে উঠেছে আমের হাট।

প্রতিদিন ভোর থেকে আম বেচাকেনা শুরু হয় এখানে। জিরো পয়েন্ট থেকে গোডাউনপাড়া পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে সড়কের দুই পাশে গড়ে উঠেছে আমের আড়ত। দরদাম ঠিক হওয়ার পর এসব আড়তে আম বিক্রি করছেন চাষিরা। এলাকার বিভিন্ন আমবাগান ঘুরে দেখা গেল প্রায় প্রতিটি গাছেই ঝুলে আছে নানা জাতের আম। উল্লেখযোগ্য আমের মধ্যে রয়েছে গোপালভোগ, হিমসাগর, আম্রপালি, ক্ষীরমাপাতি, কাটিমন, নাকফজলি ও আশ্বিনা। এ সময়ে তাই আপনারাও বাগান ও আমের হাট ঘুরে দেখতে বেড়িয়ে আসতে পারেন রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নওগাঁ থেকে।

যেভাবে যাবেন

দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে সড়কপথ, রেলপথ কিংবা আকাশপথে চলে যান রাজশাহী। সেখান থেকে সারা দিনই চাঁপাইনাবগঞ্জের বাস ও ট্রেন চলে। চাইলে ঢাকা থেকে সরাসরিও চাঁপাইনবাবগঞ্জ আসতে পারেন। ঢাকার গাবতলী ও কল্যাণপুর থেকে এ পথের বাসগুলো ছাড়ে। যেগুলোর মধ্যে আছে-- দেশ ট্রাভেলস, মডার্ন এন্টারপ্রাইজ, ন্যাশনাল ট্রাভেলস, হানিফ এন্টারপ্রাইজ, লতা পরিবহন, দূরদূরান্ত পরিবহন ইত্যাদি।

চাঁপাইনবাবগঞ্জে থাকার খুব ভালো হোটেল নেই। তাই পরিবার নিয়ে এলে রাজশাহীতে থাকাই ভালো। রাজশাহীতে থাকার জন্য যেমন সরকারি পর্যটন কেন্দ্র রয়েছে, তেমনি রয়েছে ভালো মানের অনেক হোটেলও। আবার রাজশাহী দিয়ে ঢুকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁর সাপাহার ও পোরশা হয়ে সরাসরি ঢাকা চোলে আসতে পারেন। আর ট্রেনে যারা ভ্রমণ করতে চান তাদের নওগাঁ সদরে চলে আসতে হবে। জেলা সদর থেকে মাত্র পাঁচ কিলোমিটার দূরে বিখ্যাত সান্তাহার জংশন থেকে নীলসাগর, রংপুর এক্সপ্রেস, দ্রুতযান কিংবা লালমনিরহাট এক্সপ্রেসে চড়ে ঢাকা চলে আসতে পারবেন। 

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা