শনিবারের হাসি
টিএইচ মাহির
প্রকাশ : ১০ জুন ২০২৩ ১৩:০৯ পিএম
ভোর থেকেই বৃষ্টি পড়ছে। কখনও ঝিরিঝিরি, কখনও মুষলধারে। সাত-সকালে বৃষ্টি মাথায় নিয়ে বের হলাম অফিসের উদ্দেশে। অফিস পর্যন্ত গাড়ি যাওয়ার উপায় নেই। রাস্তা বন্ধ। কারণ সিটি করপোরেশনের লোকজন ড্রেন আর ম্যানহোল পরিষ্কার করছে। মেজাজটা বিগড়ে গেল। অগত্যা ময়লা পানি পাশ কাটিয়ে অফিসের গেট পর্যন্ত হেঁটে আসতে হলো।
এসে দেখি দারোয়ানটা এখনও ঘুমাচ্ছে। মেজাজটা আবার চরমে উঠল। অনেকক্ষণ ডাকার পর দরজা খুলল সে। ভেতরে ঢুকেই দারোয়ানকে দিলাম মহা ঝাড়ি। ওরই বা কী দোষ। সব কিছু
বন্ধ করে ঘুমাতে যায় অনেক রাতে।
আজ অফিসে জরুরি মিটিং। সবাইকে আগে আসতে বলেছি। কিন্তু কারও আসার নাম-গন্ধ নেই। দস্তগীর গ্রুপের সঙ্গে একটা চুক্তি হওয়ার কথা।
সেক্রেটারি মেহরাজ এখনও এসে পৌঁছায়নি। ওদিকে দস্তগীর গ্রুপের লোকজন প্রায় চলেই এলো। মেহরাজ এলো আধঘণ্টা দেরি করে। মেয়েটাকে দেখে রাগ হলো। দেরি হওয়ার কারণ জানতে চাইলাম।
- এত দেরি করে এলেন কেন?
- একটু সমস্যা হয়েছিল স্যার।
- কাজের দিনেই যত সমস্যা
-বাসা থেকে বের হয়ে ড্রেনে পড়ে গিয়েছিলাম।
মেজাজ এবার সপ্তমে উঠল, বললাম,
- চোখ কী হাতে নিয়ে চলেন? ড্রেনে পড়েন কীভাবে?
মেহরাজ ভেবেছিল ওর কথা শুনে সহানুভূতি দেখাব। ঝাড়ি খেয়ে মেয়েটার সুন্দর মুখখানা কালো হয়ে গেল।
মিটিংটা শেষ হলো ঠিকঠাক। অন্যান্য কাজ শেষ করতে রাত ৮টা বেজে গেল। মেহরাজের এখনও কাজ শেষ হয়নি। আমি বের হয়ে গেলাম। অফিস থেকে গাড়ি পর্যন্ত হেঁটে যেতে হবে। রাস্তা এখনও বন্ধ। ফুটপাথ ধরে হাঁটছি। একটু দূর যেতেই ঝুপ করে আওয়াজ এলো কানে। চারদিকে অন্ধকার।
সম্বিত ফিরে পেয়ে নিজেকে আবিষ্কার করলাম রাস্তার পাশের ড্রেনে। বৃষ্টি-কাদা পানি আর ময়লায় খেয়ালই করিনি।
আমার পড়ে যাওয়া দেখে হায় হায় আওয়াজ তুলে দৌড়ে এলো দারোয়ান। আমার হাত ধরে টেনে তুললো। কালো ময়লা পানিতে একাকার পুরো শরীর। বিকট দুর্গন্ধ বেরোচ্ছে।
আমি দারোয়ানের মুখের দিকে তাকিয়ে আছি বোকার মতো। হঠাৎ খেয়াল করলাম পেছনে দাঁড়িয়ে আছে মেহরাজ। ওকে দেখার পর মনে পড়ে গেল সকালে ওকে বলা কথাগুলো- ‘চোখ কী হাতে নিয়ে চলেন?’