× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

একজন স্বপ্নের বাবা

সুফিয়া হায়দার

প্রকাশ : ১৬ জুন ২০২৩ ০০:১৬ এএম

আপডেট : ১৬ জুন ২০২৩ ১১:১২ এএম

অলংকরণ : মামুন হোসাইন

অলংকরণ : মামুন হোসাইন

শহীদ ফয়জুর রহমান আহমেদ। একজন পুলিশ কর্মকর্তা ছিলেন। তার ছয় ছেলেমেয়ে- প্রখ্যাত সাহিত্যিক হ‍ুমায়ূন আহমেদ, সুফিয়া হায়দার, লেখক মুহম্মদ জাফর ইকবাল, মমতাজ আহমেদ শিখু, আহসান হাবীব শাহীন (কার্টুনিস্ট) ও রোকসানা আহমেদ মনি। বাবা দিবস উপলক্ষ সুফিয়া হায়দারের লেখা ‘আমার দুঃখী বাবা’ বইয়ের অংশবিশেষ আজ থাকছে তোমাদের জন্য-

আমরা ছয় ভাইবোন। সবচেয়ে বড় হ‍ুমায়ূন আহমেদ (প্রখ্যাত সাহিত্যিক) তারপর আমি। আমার পরে মুহম্মদ জাফর ইকবাল (জনপ্রিয় লেখক ও শিক্ষক), তারপর বোন মমতাজ আহমেদ (শিখু), পরে ছোট ভাই আহসান হাবীব শাহীন (কার্টুনিস্ট), আমাদের সবার ছোট বোন রোকসানা আহমেদ (মনি)। মেয়েদের নিয়ে আমার বাবার কল্পনার কোনো সীমাপরিসীমা ছিল না। আম্মাকে আমার কথা বলতেন সাহিত্য নিয়ে পড়াশোনা করে একজন শিক্ষক হবে। শিখু ডাক্তারি পড়ে হবে একজন ডাক্তার। আর মনির কথা বলতেন যে তাকে নিয়ে চিন্তা কোরো না। আমি সম্রাট বাবরের মতো এমন দোয়া করব যে মনি সুস্থ হয়ে উঠবে। (আমাদের ছোট বোনটি জন্ম থেকেই কথা বলতে পারে না)
ছেলেদের নিয়ে তার কোনো পরিকল্পনা ছিল না। বড় ভাই (আমরা দাদাভাই ডাকি) যখন বোর্ডে স্ট্যান্ড করে এসএসসি ও এইচএসসি পাস করল। অনেকেই পরামর্শ দিল- সারা জীবন কষ্ট করেছেন ছেলেকে ডাক্তার নইলে ইঞ্জিনিয়ার বানান ভবিষ্যতে ভালো হবে। (অর্থাৎ টাকাপয়সা হবে) আব্বা এসবে কখনই কান দিতেন না। দাদাভাই এইচএসসি পাস করে বলল কেমিস্ট্রি পড়তে চায়। আব্বা বললেন পড় পড় যা খুশি পড়। ইকবাল এইচএসসি পাস করে বলল সে ফিজিক্স পড়তে চায়। আব্বা বললেন, হ্যাঁ হ্যাঁ পড়, যেটা ভালো লাগে পড়। আর আমি যখন এইচএসসি পড়তে যাই আব্বা তখন ‘অতিরিক্ত বাংলা’ বিষয়টি নিতে বললেন পরবর্তী সময় বাংলায় অনার্স পড়তে সুবিধা হবে তাই। আব্বার পরিকল্পনামতো এইচএসসি পাস করে বাংলা সাহিত্যে অনার্স নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হই।
আমাদের বাবা একজন ব্যতিক্রমী মানুষই ছিলেন। আগে ভাবতাম বাবারা বুঝি এরকমই হয়। তার ভেতরে ছিল একজন সাহিত্যিক মানুষ। সারা দিন পুলিশের চাকরি করে এসে লেখালেখি করতেন। যখনই সময় পেতেন খাটের ওপর উপুড় হয়ে বুকের নিচে বালিশ নিয়ে লেখালেখি করতেন। একটা টেবিল ল্যাম্প ছিল সেটাকে বাঁকানো যেত। ল্যাম্পটি একদম নিচু করে তাঁর লেখার কাগজের ওপর আলো ফেলে লিখতেন, লাইটের আলোয় অন্যদের যেন অসুবিধা না হয়। লেখালেখির সে সময়টা আব্বা অনাবিল আনন্দে থাকতেন। বগুড়া থাকাকালে (১৯৬৫) আব্বা একটি বইও প্রকাশ করেন, ‘দীপ নেভা যার ঘরে’ নামে। কাগজের মান খারাপ থাকায় বইটি খুব একটা সুদৃশ্য হয়নি। সরকারি চাকরি করায় বিধায় নিজের নামও ব্যবহার করতে পারেননি। ‘সন্ধানী’ এই ছদ্মনামে লিখেছিলেন। বইটি প্রকাশ হওয়ার পর আব্বাও একটু বিব্রত ছিলেন বইটি নিয়ে, তেমন আকর্ষণীয় হয়নি তাই। এখন মনে হয় ভাইদের এমন চকচকে বইগুলো যদি আব্বা দেখতেন, কেমন লাগত তার? প্রকাশকরা এখন আমার বাবার সেই বইটি প্রকাশ করার জন্য খুব ব্যস্ত! নিশ্চয়ই এখন খুব সুন্দর করে প্রকাশ করা যাবে কিন্তু আমার বাবা তো সেটি দেখতে পারবেন না।
আব্বা পুলিশদের পত্রিকা ডিটেকটিভ, মাসিক সওগাত, সিলেটের ‘আল ইসলাহ’ ইত্যাদি পত্রিকা ও ম্যাগাজিনে নিয়মিত লেখালেখি করতেন। দেশবিদেশের বিখ্যাত লেখকদের বই সংগ্রহ করাও তাঁর একটা নেশা ছিল। আমাদের পারিবারিক সংগ্রহে বইও ছিল প্রচুর।
আব্বা গান ভালোবাসতেন। ছবি তুলতে ভালোবাসতেন। পামিস্ট্রির প্রতি আকর্ষণ ছিল প্রচুর। পরকাল সম্পর্কে প্রচণ্ড কৌতূহল ছিল। প্রচুর গ্রামোফোন রেকর্ড ছিল আব্বার সংগ্রহে। তিনশর মতো রেকর্ড ছিল বাসায়। সিলেটে থাকাকালে গায়ক প্রাণেশ দাস প্রায়ই গান গাইতে আসতেন আমাদের বাসায়। আমাদের মাস্টার রেখে গান শিখিয়েছেন। নিজেও মাঝেমধ্যে গান গাইতে চেষ্টা করতেন, বাসায় প্রায়ই গানের আসর হতো। বড় বড় মনীষীর প্রতি আব্বার ছিল প্রচণ্ড রকমের শ্রদ্ধা। এদের অনেকের ছবি আব্বা বাঁধিয়ে রাখতেন। রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, সুকান্ত, শেকসপিয়ার, বার্ট্রান্ড রাসেল এদের ছবি আমাদের বাসায় শোভা পেত। একবার কে বেড়াতে এসে বার্ট্রান্ড রাসেলের ছবি দেখে বলল, ‘রবীন্দ্রনাথের এরকম ছবি তো আগে দেখিনি?’ আমরা সমস্বরে বললাম, ‘এটি বার্ট্রান্ড রাসেলের ছবি, রবীন্দ্রনাথ না’। ভদ্রলোক তো অবাক। লজ্জাও পেলেন। এত ছোট বাচ্চারা সব চেনে?
কবিতা আবৃত্তি করতে আব্বা খুব পছন্দ করতেন। বিশেষ করে রবীন্দ্রনাথের ‘ধন নয় মান নয়, এতটুকু বাসা’ আব্বার খুব প্রিয় একটা কবিতা ছিল। আমরা অনেক ছোটবেলায় রবীন্দ্রনাথের অনেক বিখ্যাত কবিতা মুখস্থ করে ফেলি আব্বার উৎসাহে। আব্বা অসুস্থ হলে আমরা তার ইচ্ছামতো কবিতা আবৃত্তি করে তাঁকে আনন্দ দিতাম। ছোটবেলায় আমি খুব জেদি ছিলাম। সবাই নাকি আমাকে ভয় পেত। বড়রা থেকে ছোটরা পর্যন্ত সবাই। এর পেছনে আমার বাবার অতিরিক্ত আদরই সম্ভবত কাজ করেছে।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা