× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

ডাকটিকিটে রোমানিয়ার গল্প

শেয়ালের ধাপ্পাবাজি

ইয়ন ক্রিয়াঙ্গা, ভূমিকা ও অনুবাদ : নিজাম বিশ্বাস

প্রকাশ : ২০ জুলাই ২০২৩ ১৩:৪৩ পিএম

আপডেট : ২০ জুলাই ২০২৩ ১৬:৫০ পিএম

অলংকরণ: অর্নিলা ভৌমিক, নবম শ্রেণি, ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ঢাকা

অলংকরণ: অর্নিলা ভৌমিক, নবম শ্রেণি, ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ঢাকা

 ১৮৩৭ সালে, মলদোভায়, ইয়ন ক্রিয়াঙ্গার যখন জন্ম হয়, ইউরোপের দেশটি তখন অটোমান সাম্রাজ্যের অংশ। পরে রোমানীয় সাহিত্যের প্রধান এক লেখক হয়ে ওঠেন ক্রিয়াঙ্গা। বিশেষ করে তার শিশুতোষ গল্পগুলো আজও রোমানিয়া-মলদোভাসহ পূর্ব ইউরোপে তুমুল জনপ্রিয়। তেমনই ৬টি গল্প নিয়ে ১৯৮২ সালে ৬টি ডাকটিকিট প্রকাশ করে রোমানিয়ার ডাক বিভাগ। রূপকথা শিরোনামে প্রকাশিত ডাকটিকিটগুলোর মধ্যে ১ লিউ মূল্যের টিকিটে পাওয়া যায় ‘শেয়ালের ধাপ্পাবাজি’ গল্পটি। 

অনেক দিন আগে এক ধূর্ত শেয়াল ছিল। শেয়ালরা সাধারণত যেমন হয়! সে সারারাত খাবারের জন্য এদিক-সেদিক ছুটল। কিন্তু তার কপালে এক টুকরো খাবারও জুটল না। এদিকে সকাল হয়ে গেছে। ক্লান্ত শেয়াল রাস্তার পাশের এক ঝোপঝাড়ে এসে সটান শুয়ে পড়ল। ‘আজ সে কী খেয়ে বেঁচে থাকবে!’ শেয়ালটি যখন এই চিন্তা করছিল, ঠিক তখনই তার নাকে ভেসে এলো মাছের গন্ধ। মাথা তুলে দেখল একটা গরুর গাড়ি আসছে তার দিকে। মনে মনে সে বলে উঠল- 
‘বাহ্, বেশ! বেশ!! আমার খাবার তবে এসে গেল।’ 
সে আর দেরি করল না। ঝোপের ভেতর থেকে তড়িঘড়ি বেরিয়ে এলো। এসেই রাস্তার ওপর মড়ার ভান করে পড়ে থাকল।
গরুর গাড়িটি ছিল এক চাষার। গাড়িতে ছিল মাছ। চাষা হঠাৎ রাস্তার মাঝে এক মড়া শেয়াল দেখে গাড়ি থামাল। শেয়ালটি ছিল অভিনয়ে বেশ পটু। এমনভাবে নিঃশ্বাস বন্ধ করে ছিল, দেখে বোঝারই উপায় ছিল না যে সে বেঁচে আছে! চাষা ভাবল, ‘যাক, এই শেয়ালের পশম দিয়ে আমার বউকে একটা জ্যাকেট বানিয়ে দেওয়া যাবে।’ যা ভাবা তা-ই কাজ। শেয়ালটিকে রাস্তা থেকে তুলে সে তার গাড়ির পেছনে উঠিয়ে রাখল। গাড়ির ভেতরে ছিল অনেক মাছ! শেয়ালটি সেই মাছের স্তূপের ওপরেই এসে পড়ল। 
চাষা শেয়ালটিকে গাড়ির পেছনে রেখে সামনে চলে এলো। রশি টেনে গরুকে গাড়ি টানার নির্দেশ দিল। গাড়িটি চলা শুরু করতেই শেয়াল চোখ খুলল। তারপর সে তার পা দিয়ে গাড়ি থেকে একে একে সব মাছ রাস্তায় ফেলে দিল। এরপর শেয়ালটিও গাড়ি থেকে লাফ দিয়ে নেমে গেল। রাস্তায় পড়ে থাকা মাছ একসাথে জড়ো করে নিয়ে গেল তার গর্তের কাছে। ভীষণ ক্ষুধা পেয়েছিল তার। তাই সে গাপুস গুপুস মাছ খেতে শুরু করল। এমন সময় পাশ দিয়ে যাচ্ছিল এক ভালুক। ভালুকটিও ছিল খুব ক্ষুধার্ত! শেয়ালের অমন করে মাছ খাওয়া দেখে সে বলল, 
‘বাহ্, তুমি তো অনেক মাছ ধরেছ! আমাকেও ক’টা দাও না!!’
শেয়াল রেগে ভালুককে বলল, 
‘এখান থেকে এক্ষুনি ভাগো বলছি। তোমার পেট ভরানোর জন্য আমি মাছ ধরিনি। যদি এতই খেতে মন চায়, তাহলে নিজে ধরে খাও।’
ভালুক বলল, 
‘আমি যে মাছ ধরতে জানি না।’
শেয়াল তখন হাসতে হাসতে বলল, 
‘তাই নাকি? খেতে চাও তো ঠিকই। তা তোমাকেও তো মাছ ধরার কৌশল জানতে হবে। আজ রাতে তবে বনের পুকুরে যাও। তারপর সারারাত পুকুরের জলে লেজ ডুবিয়ে রাখো। ভোর না হওয়া পর্যন্ত একদম নড়াচড়া চলবে না। এরপর জোরে জোরে জল থেকে লেজ টেনে তুলবে। আর দেখবে আমার থেকেও অনেক বেশি মাছ তোমার লেজে গেঁথে আছে।’
ভালুকটি মাছ ধরার কৌশল জেনে তাড়াতাড়ি বনের পুকুরের দিকে দিল দৌড়। পুকুরের জলে ডুবিয়ে রাখল তার লেজ। দিন গড়িয়ে রাত নেমে এলো। 

সেই রাতে ছিল হাড় কাঁপানো ঠান্ডা বাতাস। মুখের ভেতরে জিহবা বরফ হয়ে যাচ্ছিল। এক সময় পুকুরের জলও বরফ হয়ে গেল। ভালুকের লেজ বরফে জমে শক্ত লাঠির মতো হয়ে গেল। ভোর হয়ে এলো। ভালুক শরীরের সব শক্তি দিয়ে লেজ টেনে তোলার চেষ্টা করল। আহা, বেচারা ভালুক কিছুতেই লেজ পুকুরের বরফ থেকে টেনে বের করতে পারছে না! সে আবারও চেষ্টা করল। টানতে টানতে অবশেষে ভালুকের লেজটি ছিঁড়েই গেল। ভালুকটি ব্যথায় কাতরে উঠল। এদিকে তার সারা শরীর ঠান্ডায় ঠন ঠন করে কাঁপছে। শেয়ালের ধাপ্পাবাজি সে বুঝতে পারল। তাই রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে শেয়ালকে সে মারতে গেল। শেয়ালের গর্তের কাছে এসে দেখল, ওখানে কেউ নেই। দুষ্টু শেয়ালটি আগেই বুঝতে পেরেছিল ভালুক তাকে মারতে আসবে। তাই সে পাশের একটি গাছের খোঁড়লে আশ্রয় নিয়েছিল। যখন সে ভালুকটিকে লেজ ছাড়া আসতে দেখল তখন সে চিৎকার করে বলল, ‘মাছ কি তোমার লেজ খেয়ে ফেলেছে?’ 
ভালুক একে তো তার লেজ হারিয়েছে। তারপর তাকে নিয়ে শেয়ালের অমন ঠাট্টা শুনে ভীষণ ক্ষেপে গেল। সে দৌড়ে শেয়ালকে ধরতে গেল। কিন্তু গাছের খোঁড়লটি ছিল খুবই ছোট। ভালুক খোঁড়লের ভেতর কিছুতেই ঢুকতে পারছিল না। তাই সে একটি চিকন ডাল জোগাড় করল। তারপর গাছের খোঁড়লের ভেতরে থাকা শেয়ালকে গুঁতো দিতে শুরু করল। একের পর এক গুঁতো খেয়ে শেয়ালের একটি পা বেরিয়ে গেল। সেই পা টেনে ধরতেই শেয়াল বলল, ‘কী বোকা তুমি, আমার পা ভেবে আস্ত গাছটাকে টেনে নিয়ে যাচ্ছ যে!’ 
ভালুক অমনি শেয়ালের পা ছেড়ে দিল। ধূর্ত শেয়ালটিও সঙ্গে সঙ্গে তার পা আবার গাছের খোঁড়লের মধ্যে নিয়ে গেল। তারপর ভালুক শেয়ালের পা ছেড়ে সত্যি সত্যি এবার গাছটিকেই টানতে শুরু করল। তখন শেয়াল উহঃ আহঃ করে বলতে শুরু করল, ‘আমার পা ছিঁড়ে যাবে। ছাড়ো আমাকে। ছাড়ো… উহঃ আঃ, মরে গেলাম!!’
শেয়ালের পা ভেবে গাছ ধরে টানতে টানতে ভালুকের ঘাম ঝরে গেল। সে কিছুতেই শেয়ালটিকে গাছের খোঁড়ল থেকে আর বের করতে পারল না। পারবেই-বা কী করে! ওটা তো শেয়ালের পা-ই ছিল না। তারপর ক্লান্ত হয়ে লেজহারা ভালুকটি চলেই গেল। 
শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা