× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

৬০ বছরে করেছেন ৬ হাজার লাশের কাটাছেঁড়া

মশিউর রহমান রাহাত, পিরোজপুর

প্রকাশ : ০২ আগস্ট ২০২৩ ১৩:২২ পিএম

আপডেট : ০২ আগস্ট ২০২৩ ১৩:৩২ পিএম

৬০ বছরে ৬ হাজার লাশ কেটেছেন পান্না লাল ডোম

৬০ বছরে ৬ হাজার লাশ কেটেছেন পান্না লাল ডোম

জীবনের ৬০ বছরে প্রায় ৬ হাজার লাশের ময়নাতদন্ত রিপোর্ট প্রস্তুত করতে ডাক্তারদের সহায়তা করেছেন পিরোজপুর জেলা সদরের পুরাতন প্রেস ক্লাব সড়কের সুইপার কলোনির ডোম পান্না লাল। আর এ কাজে তিনি লাশের শরীরে ছুরি চালিয়ে কাটাছেঁড়া করেছেন যুগের পর যুগ। পান্না লালের হিসাব অনুযায়ী লাশ কেটেছেন প্রায় ৬ হাজার।

জেলা শহরের প্রাণকেন্দ্রের হরিজন পল্লীতে ৭১ বছর ধরে বসত করছেন পান্না লাল। এ ঘরেই কাটিয়ে দিয়েছেন অস্পৃশ্য অচ্ছুত জীবনের এতগুলো বছর। তার পেশা ছিল ডোমের। ডোম মানেই লাশের (পুলিশ কেস) শরীরে ছুরি চালানোর পেশা। পান্না বলেন, মাত্র ১১ বছর বয়স থেকে তিনি তার বাবার সঙ্গে লাশের গায়ে ছুরি চালিয়ে আসছেন। এ পেশায় কেটে গেছে জীবনের ৬০ বছর। এ পর্যন্ত প্রায় ৬ হাজার পুলিশ কেস হওয়া লাশের শরীর কাটাছেঁড়া করেছেন তিনি। এ কাজে কখনও তার হাত কাঁপেনি। এমনকি ভয়ও পাননি। এমন পেশা নিয়ে জীবন কাটানোর কথা ছিল না তার। ছোট্ট শিশু থেকে শুরু করে নারী-পুরুষ, হিন্দু-মুসলিম কত মানুষের শরীর কাটতে হয়েছে তাকে। তবে শিশুর শরীরে ছুরি বসাতে গেলে চাপা কষ্ট হতো তার। সেই কিশোর বয়সে বই-খাতা হাতে নিয়ে স্কুলে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বংশপরম্পরায় ডোমের ঘরে জন্ম নিয়ে ডোম হয়েই বেড়ে উঠতে হয়েছে তাকে। এখন তিনি অবসরে। চার বছর আগে অবসরে এসেছেন। তার জায়গা পূরণ করেছে ছোট ছেলে চয়ন ডোম। আর তিনি বয়সের ভারে নুয়ে পড়েছেন। যতটুকু সম্ভব ছেলেকে নিজের অভিজ্ঞতার আলোকে এ পেশায় টিকে থাকার সবক দিয়ে যাচ্ছেন। মাঝে মাঝে স্মৃতিচারণা করছেন সেসব দিনের।

স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে পান্না বলেন, ‘মেথর-ডোমদের ছেলেমেয়েরা তখন স্কুলের কথা চিন্তাও করতে পারত না। বাবার হাত ধরে লাশ কাটার ঘর আর এই সুইপার কলোনির কুঁড়েঘর পর্যন্ত ছিল চলাফেরার সুযোগ। ডোমের ঘরে জন্ম তাই ডোমের মেয়েকেই বিয়ে করে সংসার পেতেছি। তিনটি ছেলে জন্মেছে। বড় ছেলে, মেজো ছেলে অন্য জেলায় এ পেশায় আছে। ছোট ছেলে চয়ন এখন লাশ কাটাছেঁড়া করে। কীভাবে লাশ কাটতে হয় শিখিয়ে-পড়িয়ে দিয়েছি তাকে।’

নিজে পড়ালেখা করেননি। ছেলেদেরও করালেন না কেন? জানতে চাইলে পান্না বলেন, ‘ডোমের চাকরিতে কি আর পড়ালেখা লাগে? আমরা গরিব, সমাজের মানুষ আমাদের সঙ্গে মিলতে চায় না বলে ওইদিকে যাইনি।’

হাজার হাজার লাশের শরীরে ছুরি-কাঁচি চালালেন। অথচ নিয়ম ভেঙে নতুন প্রজন্মকে শিক্ষিত করে গড়ে তুলতে পারলেন না কেন? এ প্রশ্নের জবাবে পান্না লাল বলেন, ‘নিয়ম ভাঙতে এখনও মন চায়। সমাজের আর দশজন সাধারণ মানুষের মতো সবার সঙ্গে মিলেমিশে বাঁচতে ইচ্ছা করে। কিন্তু অভ্যস্ত হয়ে যাওয়া জীবনব্যবস্থা থেকে সহজে বের হওয়া যায় নাই।’ ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, ‘ এই সমাজে আপনাদের মতো মানুষরাই তো আমাদের আলাদাভাবে বাঁচতে বাধ্য করেছে।’

কথা হয় পান্না লালের ছোট ছেলে (শিষ্য) চয়নের (১৮) সঙ্গে। চয়ন জানান, ‘বাবা অবসরে যাওয়ার পর চাকরিটা এখন আমি করছি। যখন বাবা বলেছিলেন তিনি ৬ হাজারের বেশি লাশ কেটেছেন, তখন সাহস পাই। বাবা এ কাজ করেছে। আমারও থাকতে হবে এটাই তো নিয়ম। কিন্তু এ পেশা আমার ভালো লাগে না। নিরুপায় হয়েই আমরা এ কাজ করি। দুনিয়ার সবকিছুর আধুনিকায়ন হচ্ছে। শুনেছি বিদেশে একটি কুকুর পালনেও সরকার সহযোগিতা করে। কিন্তু আমরা তো মানুষ। আর দশজনের মতোই মানুষ, অথচ আমাদের মতো মানুষদের পশুর চোখেই দেখা হয়। লাশের শরীরে ছুরি-কাঁচি চালিয়েই আয় করছি।’

এ ব্যাপারে দলিত পঞ্চায়েত ফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোহন লাল দাস বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দলিত সম্প্রদায়কে এগিয়ে নেওয়ার জন্য নানা পদক্ষেপ নিয়েছেন। স্থানীয় পর্যায়ে সেগুলোর বাস্তবায়ন অনেকাংশে বাধাগ্রস্ত হয়। তাই আর দশজনের মতো জীবনযাপন করা এদের সম্ভব হয় না। আগের থেকে এদের পরিস্থিতির কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে।’

দলিত পঞ্চায়েত ফোরামের সভাপতি মুন্না লাল দাস বলেন, ‘পান্না লালের ছেলেরা ডোমই হয়েছে। প্রথা ভেঙে পেশা পরিবর্তনের সুযোগ এখনও হয় নাই। তবে এই মানুষগুলো আর আগের মতো নিম্নমানের কাজ করতে চায় না। ডোমের সংখ্যাও কমে যাচ্ছে। ভবিষ্যতে এসব কাজের জন্য বাইরের জেলা থেকে লোক আনতে হতে পারে। সমাজ ও রাষ্ট্রসহ সবার দৃষ্টি এদের দিকে থাকলে তাদের জীবনে পরিবর্তন আসবে বলে মনে করি।’


শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা