ফারদিন শামস তিমির
প্রকাশ : ০৩ আগস্ট ২০২৩ ১৩:৫৫ পিএম
অংলকরণ: অর্নিলা ভৌমিক, নবম শ্রেণি, ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ঢাকা
পরীক্ষা ঘনিয়ে এসেছে। পড়ার চাপ। পড়ার টেবিলে বসছি। হঠাৎ আমার কপালে একটা মশা বসল। আমার বাঁ হাত থপাস করে মশাটার ওপর পড়ল। মশা গিয়ে পড়ল খাতার ওপর। দেখলাম মশাটা মাঝারি আকারের। গায়ে সাদাকালো ডোরাকাটা এবং শুঁড়টা লোমযুক্ত। আবার মাথার পেছনের দিকেও একটা শুঁড় আছে। স্কুলে সেদিন স্যার এডিস মশার যেসব বর্ণনা দিয়েছিলেন সবই এ মশার সঙ্গে মিলে গেল। বুঝতে আর দেরি রইল না এটা কোনো সাধারণ মশা নয়, এডিস মশা! আরে মশাটা তো নড়ছে! তাহলে এখনও সম্পূর্ণ মরেনি। রেগে মশাটাকে ধমক দিয়ে বললাম, এই পাজি মশা! তুমি জানো না আমার সামনে পরীক্ষা। আমাকে কামড়াতে এসেছিলে কেন? আমার ডেঙ্গুজ্বর হলে পরীক্ষা কি তুমি দিতে? এই বলে মশাটাকে মারতে যাব অমনি মশাটা বলে উঠল, সরি! আমাকে মেরো না। ঘরে ছোট ছোট লার্ভা আছে! একটু দয়া করো! আমি বললাম, দয়া তোমাকে করব? আমি কি পাগল? এডিস মশা বলল, ‘হ্যাঁ। তুমি পাগল, তোমার পরিবার পাগল, সবাই পাগল। নয়তো আমরা যে পরিষ্কার পানিতে লার্ভা জন্ম দিই তা জানার পরও কেন তোমার বাড়ির ছাদের টবে জমে থাকা পানি পরিবর্তন করোনি? ভাই তুমি ফ্রিজ চেক করে আসো। দেখো ফ্রিজের নিচেও পানি জমে আছে। আর থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট পরেছো কেন? জানো না আমরা পায়ে বেশি কামড়াই। তোমারও পায়েই কামড় দিতাম। কিন্তু পড়তে পড়তে এত পা নড়াও যে শান্তিমতো পায়ে বসতেই পারছিলাম না। তাই কপালে কামড় দিয়েছি। আমাদের থেকে বাঁচতে লম্বা পোশাক পরাই ভালো। সবচেয়ে উত্তম যদি মশারির ভেতরে থেকে পড়াশোনা করতে পারো। আর তোমাদের বাড়িঘুর ঘুরে দেখেছি। মোবাইল, টিভি সবই আছে কিন্তু কোনো অ্যারোসল স্প্রে নেই। তোমরা এভাবে অসচেতন হয়ে আমাদের কামড়ানোর সুযোগ করে দিলে আমরা তো কামড়াবই!’ আমাদের পাগল বলায় আমি প্রথমে খেপে গিয়েছিলাম কিন্তু পরে তার কথাগুলো শুনে বুঝলাম আমরা আসলেই পাগল। এমন পাগল যে নিজের ভালোটুকুও বুঝি না। সেদিন স্কুলে স্যারও ডেঙ্গু থেকে বাঁচতে সচেতনতামূলক কথা বললেন। তার পরও আমি সচেতন হইনি। মা-বাবাকেও সচেতন করিনি। আমার খুব খারাপ লাগল। কিন্তু একটা এডিস মশার মুখে এসব ডেঙ্গুরোধী কথা শুনে অবাকও হলাম বটে। তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, এসব কথা কেন সে আমাকে বলল। এডিস বলল, ‘তোমাদের মানুষের মধ্যে যেমন দু-চারটা খুবই ভালো মনের মানুষ আছে, তেমন আমাদের মশাদের মধ্যেও ভালো মনের মশা আছে। আমি সেরকমই এক এডিস মশা। তোমার মতো বয়সের বাচ্চাদের হাসপাতালে পাঠাতে অন্য এডিস মশাদের ভালো লাগলেও আমার একদম ভালো লাগে না। কিন্তু কী করব বলো, মশা হিসেবে বাঁচতে হলে তোমাদের তো কামড়াতে হবে। তাই তোমাকে এসব কথা বললাম। তুমি সচেতন হয়ে আরও পাঁচজনকে সচেতন করো যেন আমরা আর জন্মাতে না পারি। তোমরা সচেতন হলে তোমাদেরই লাভ।’ তারপর হঠাৎ মশাটা মারা গেল। আসলে মশাটা আধমরা হয়ে ছিল। তার ওপর এত কথা বলেছে। ফলে আর বাঁচতে পারল না। যা হোক, আমি মা-বাবাকে সচেতন করার জন্য ডেঙ্গুর কথা বললাম। টবের পানি চেঞ্জ করলাম। ফ্রিজের নিচের পানি পরিষ্কার করলাম। এরপর দোকান থেকে অ্যারোসল কিনে আনলাম। মা-বাবা বলল তারাও যথেষ্ট সচেতন হবে। পরদিন স্কুলে বন্ধুদেরও সচেতন করলাম। এডিস মশাটা আমাকে সচেতন করায় তাকে মনে মনে ধন্যবাদ জানালাম। কিন্তু জানি অনেক মা-বাবা হাসপাতালের বেডে বসে সন্তানের সেবা করছে আর তাদের সুখশান্তি উধাও হয়ে গেছে যার মূল কারণ এডিস, ডেঙ্গুজ্বর। তাই সচেতন হতে হবে।
দশম শ্রেণি, রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুল